কিভাবে বাংলাদেশে ২০২৩ সালে একটি ফ্যাশন ব্যবসা শুরু করবেন

কিভাবে বাংলাদেশে ২০২২ সালে একটি ফ্যাশান ব্যবসা শুরু করবেন

আপনি আপনার ফ্যাশন ব্যবসার জন্য একটি ইট,কাঠ-পাথরের বা অনলাইন যে ধরনের দোকান খোলার কথাই ভেবে থাকুন না কেনো, সেজন্য আপনার একটি ব্যবসা কিভাবে শুরু করতে হয় সে বিষয়ে একটা মূল ধারণা থাকা প্রয়োজন। শুরু করার কাজটা প্রথমে একটু কঠিন মনে হলেও, আপনার নিজেই উঠে দাঁড়াতে হবে এবং নিজেকে স্বনির্ভর করে তোলার এই প্রয়াসটা নিজেকেই শুরু করতে হবে।

একটি ফ্যাশান ব্যবসা শুরু করাটা সহজ, কিন্তু চালিয়ে নিয়ে যাওয়াটা ভিন্ন ব্যাপার। ব্যবসাটা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ব্যবসা বাড়িয়ে নিয়ে লাভ দেখাটা সময়-সাপেক্ষ এবং বেশ ধৈর্যের বিষয়। আপনার নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে যে, আপনি কি আসলেই একটা ব্যবসা চালাতে পারবেন? প্রাথমিক পর্যায়ে, আপনাকে একটি ব্যবসা চালাতে আপনার সবটুকু সময় ব্যয় করতে হবে।

আপনার একটি ব্যবসা শুরু করার কথা চিন্তা করারও আগে বাজার গবেষণা করতে হবে। আপনি কি আপনার নকশা জেই তৈরী করবেন? অথবা পণ্যগুলো কিনবেন? আপনি কি অনেক সময় ব্যয় করতে পারবেন? 

পরিকল্পনা করা এক কথা এবং আসলেই শুরু করাটা ভিন্ন ব্যাপার। এজন্যই আমি বলেছি নিজেকে প্রশ্ন করতে যে, আপনি কি আসলেই একটা ব্যবসা চালাতে পারবেন?

আপনাকে নিজেকে শক্তভাবে প্রশ্ন করতে হবে , আপনি কি ব্যবসাটা একাই চালাবেন, অথবা আপনি লোক নিয়োগ করবেন আপনাকে সাহায্য করার জন্য ? লোক নিয়োগের সময় একই মানসিকতার মানুষ খুঁজে বের করুন নতুবা আপনি খুব দ্রুতই সমস্যার সম্মুখীন হবেন। আপনাকে আপনার ভেতরের ত্রুটি খুঁজে বের করতে হবে যেন আপনি তা পূরণ করতে পারেন এবং সেখান থেকে এগিয়ে যেতে পারেন।

শূণ্য থেকে একটি ব্যবসা শুরু করা সহজ ব্যাপার না যদি না আপনি জানেন যে আপনি কি করবেন, এবং এটা সহজ হয়ে যাবে যদি আপনি আগে থেকেই জানেন যে আপনাকে কোন কাজগুলো করতে হবে।

তাই যদি আপনি জানতে চান, কিভাবে বাংলাদেশে ২০২৩ সালে একটি ফ্যাশান ব্যবসা শুরু করবেন, তবে পড়তে থাকুন।

আপনার নিজের ব্যবসা শুরু করার আগে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জেনে নিন:

  • একটি ফ্যাশান ব্যবসা শুরু করার সময় নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
  • শিল্পটির জন্য আবেগ আপনাকে ইতিবাচক ফলাফল এনে দিবে।
  • আপনি যদি আপনার ফ্যাশান ব্র্যান্ডটির নক্শা পরিকল্পনা করতে চান তবে আপনাকে হতে হবে দক্ষ ।
  • নিজে একটি ব্যবসা শুরু করার সময় অর্থায়ন একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়
  • আপনি যদি আপনার ব্যবসার প্রতি নিবেদিত না হন তবে কখনই লাভের মুখ দেখতে পাবেন না।
  • ব্যবসার সব ক্ষেত্রে আপনার সময়ের ব্যবস্থাপনা করাটা একটি কঠিন কাজ হবে।

এখনও, প্রশ্ন আছে? আপনি শুনে খুশি হবেন যে, এই গাইডে, আমি আপনার ব্যবসা শুরু করার বিষয়ে যে প্রশ্ন থাকতে পারে তার উত্তর দেবো এবং কোন বিষয়গুলো এড়িয়ে যাবেন সে বিষয়ে টিপস দিয়ে শেষ করবো।

আসুন তবে শুরু করা যাক।

একটি ফ্যাশন ব্যবসা শুরু করতে কতো খরচ হবে?

আপনি কোন ধরনের ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন তার ওপর এই প্রশ্নটির উত্তর নির্ভর করে । আপনি কি একটি অনলাইন দোকান খুলবেন না আপনি একটি ইট-কাঠ-পাথরের দোকান খুলবেন?
একটি অনলাইন দোকান ছোট মূলধন দিয়ে শুরু করা যায় কিন্তু একটি প্রচলিত দোকানের ক্ষেত্রে আপনার আরও বড় অংকের একটি মূলধন প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশে ঢাকা শহরে একটি দোকান খুলতে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের একটা বড় অংশ খরচ হবে, অথবা আপনাকে বিনিয়োগকারী খুঁজতে হতে পারে বা ঋণও নিতে হতে পারে।
যখন খরচের ক্ষেত্রে এতোটাই পার্থক্য তখন আপনি একটি অনলাইন দোকানই খুলতে পারেন, পরে যখন হাতে টাকা আসবে তখন একটি প্রচলিত দোকান খুলবেন। এটা একটা ভালো বুদ্ধি যদি আপনার মূলধন না থাকে বা আপনার কোনো ভালো বিনিয়োকারী না থাকে। আপনার চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি ব্যবসাকে ধীরে ধীরে বড় করা।

ফ্যাশান ব্যবসাটি কি লাভজনক?

হ্যাঁ, ফ্যাশান ব্যবসাটি খুব লোভনীয় হতে পারে। যেকোনো ব্যবসাই সফল হবে এবং আপনাকে মুনাফা দিবে যদি আপনি বিভিন্ন সফল উদ্যোক্তারা যে সঠিক পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করেন সেগুলো অনুসরণ করেন।
লাভ বা মুনাফা করতে হলে আপনাকে বুদ্ধিমানভাবে চিন্তা করতে হবে এবং আপনার পণ্যগুলোকে একটি সহনীয় মূল্যতে নিতে হবে। আপনার সরঞ্জাম বা কাঁচামালগুলোকে একটি সস্তা খরচের উৎস থেকে নিতে হবে এবং সেগুলোকে সবচেয়ে কম খরচে তৈরী করতে হবে। আপনি যদি তৈরী পোশাক খাতে যেতে চান তবে আপনাকে পাইকারী দরের দোকানগুরো খুঁজে বের করতে হবে তা না হলে আপনি কোনোদিনও লাভের মুখ দেখতে পারবেন না, শুধু খরচই করে যাবেন।
ব্যবসার জন্য এটা খুবই জরুরী যে আপনি এটা ঠিক করুন যে আপনি কি ধরনের ব্যবসা চালাতে চাচ্ছেন। কারণ তৈরী পোশাক এবং নতুন পোশাক তৈরী করা দুটোই ব্যবসার দুইটি ভিন্ন ধরন, আপনাকে শুধু বাজারটা খুঁজে বের করতে হবে এবং নিজের সুবিধা মতো ব্যবহার করতে হবে।
কিন্তু ব্যবসাতে লাভ করার আগে আপনাকে তা ভালোভাবে শুরু করতে হবে এবং নিচের দশটি বিষয় আপনাকে ঠিক পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। 

কিভাবে বাংলাদেশে ২০২৩ সালে একটি ফ্যাশান ব্যবসা শুরু করবেন?

চলুন, কিভাবে বাংলাদেশে ২০২৩ সালে একটি ফ্যাশান ব্যবসা শুরু করবেন সেই আলোচনায় গভীরভাবে ডুব দেই।

• ব্যবসা পরিকল্পনা

একটি ব্যবসা শুরু করা হলো প্রথম কাজ যা আপনি করবেন। এটাই নির্ধারণ করবে আপনার ব্যবসাটি কি ধরনের হবে। আপনি কি কাপড়গুলো আমদানী করবেন এবং স্থানীয় দোকানগুলোতে বিক্রি করবেন? আপনি কি নিজস্ব পোশাকের একটি ব্যবসা শুরু করবেন নিজেই সেগুলো তৈরী করার মাধ্যমে এবং সেগুলো নিজের দোকানেই বিক্রি করবেন? অথবা আপনি সেগুলো নিজেই নক্শা করবেন এবং তারপর তৈরী করে একটি অনলাইন দোকানে বিক্রি করবেন? একটি ব্যবসা পরিকল্পনা নির্ধারণ করে আপনার ব্যব্সার লক্ষ্য কি হবে এবং স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করে যে আপনি কিভাবে সেগুলো অর্জন করবেন।

• আপনার ব্যবসার নাম রেজিস্টার করুন

আপনি আপনার ব্যবসা নিয়ে কারও সাথে আলোচনা শুরু করার আগে আপনার ব্যবসার নাম রেজিস্টার করুন। আমি বারংবার শুনেছি লোকজনকে বলতে যে তাদের ব্যবসার অনন্য নামটি কেউ চুরি করে ফেলেছে। হয়তো বা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে চুরি করার আগে নামটি তারা রেজিস্টার করেছেন। এটা এজন্য যে, আপনি যখন কারও সাথে ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করেন, তারা হয়তো বা অন্য কারও সাথে তা শেয়ার করে বা নিজেরাই ধারনাটা চুরি করেন। তাই সবচেয়ে ভালো হলো কারও সাথে ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করার আগে নামটি রেজিস্টার করে ফেলা। 

নামটি রেজিস্টার করতে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি পরিশোধ করতে হবে টিন (ট্যাক্স আইডি নাম্বার) এবং ট্রেড লাইসেন্স পেতে যা আপনাকে বাংলাদেশে ব্যবসা করার অনুমতি দিবে। এটা কিছুটা ব্যয়সাপেক্ষ কিন্তু আপনাকে দেশের আেইন মেনে এটা করতে হবে। 

প্রথমে, আপনাকে একটি নাম পছন্দ করতে হবে এবং তার জন্য আপনার ৬০০ টাকা খরচ হবে যা আপনি অনলাইনে করতে পারবেন। তারপর, আপনাকে স্ট্যাম্প শূল্ক পরিশোধ করতে আপনার নির্ধারিত ব্যাংকে যেতে হবে, মূল্য পরিশোধের রশিদটি রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট-স্টক কোম্পানিতে জমা দিতে আপনার প্রয়োজন হবে, যার পরিমাণ ২,৫০০ টাকা।

এর সাথে আপনার আর্টিকেল এবং মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন, এবং ট্রেজারি স্ট্যাম্প শূল্ক পরিশোধের প্রমাণ (রশিদ) লাগবে। নাম ছাড়পত্র, ফরম ১২ (ব্যবস্থাপনা প্রতিনিধি, ব্যবস্থাপক, এবং পরিচালকদের সম্মতি); ফরম ১০ (যারা পরিচালক হিসেবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে তাদের একটি সম্মতি); ফরম ৯ (পরিচালক হিসেবে কাজ করার সম্মতি); ফরম ৬ (রেজিস্টার্ড অফিসের নোটিশ) এবং ফরম ১ (অফিসের রেজিস্ট্রেশনের ঘোষণা) ।

এরপরের ধাপ হলো টিনের (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) জন্য আবেদন করা, যা পেতে প্রায় ৪ দিন সময় লাগবে। তাই এ সময়ের মধ্যে আপনি আপনার রেজিস্টার্ড লগ পেতে পারেন যার জন্য আপনার একদিন সময় লাগবে এবং ৬০ টাকা খরচ হবে। ট্রেড লাইসেন্স পেতে আপনার ৩ দিন সময় লাগবে এবং ৫০০০ টাকা খরচ হবে, তাই এ সময়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বিভাগের অধীনে ভ্যাট, এক্সাইস এবং কাস্টমস্ কমিশনের সাথে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলুন। 

উপরের প্রক্রিয়াটি শেষ হয়ে গেলে, আপনার কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাবে এবং আপনি বাংলাদেশে আইনিভাবে একটি ফ্যাশান ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।

• একটি ব্র্যান্ড মূল্য তৈরীর জন্য আপনার লোগো নক্শা করুন

আপনার লোগো হবে আপনার পরিচয়। তাই একটি অনন্য লোগো তৈরী করুন যা আপনার আর সব প্রতিযোগীতের থেকে ভিন্ন হবে এবং এটাই হবে আপনার ব্যবসার একটি বিশাল ইতিবাচক দিক। আপনি যখন আপনার প্রতিযোগীদের নিয়ে গবেষণা করবেন (নিচে আলোচনা করা হয়েছে), তখন তাদের লোগো দেখুন এবং ভাবুন কিভাবে আপনি আপনারটা তাদের থেকে ভিন্ন এবং আরও ভালো করবেন। আপনার ব্র্যান্ডের মুখ হলো আপনার লোগো, তাই লোগোটি নক্শা করার সময় আপনাকে যথেষ্ট যত্নের সাথে করতে হবে। যদি একজন পেশাদার ডিজাইনারকে নিয়োগ দেন তবে ভালো হবে কারণ সেক্ষেত্রে আপনি ব্যবসার অন্যান্য দিকে মনোযোগ দিতে পারবেন। যেহেতু, আপনি আপনার ব্যবসাটি শুরু করছেন তাই সুলভ মূল্যে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার নিয়োগ দিন, সস্তায় নয়। আপনার কোনো বন্ধু যদি গ্রাফিক্স লাইনে থাকে তবে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এবং অনুরোধ করতে পারেন আপনার জন্য কাজ করতে। বিনামূল্যে কোনো কাজের আশা রাখবেন না কারণ সবকিছুই ফ্রি ভালো না। তাই যখন ব্যব্সাটা শুরু হবে তখন তাদেরকে কিছু পুরস্কার বা ব্র্যান্ডের প্রচারণার পণ্য অফার করতে পারেন।

• আপনার প্রতিযোগিদের নিয়ে গবেষণা করুন

একটি ফ্যাশান ব্যবসা শুরু করার আগের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো আপনার প্রতিযোগিতার গবেষণা করা। এই ধাপটি আপনার প্রতিযোগীরা কি করছেন তা জানতে সাহায্য করবে এবং তারপর আপনি আরও বেশী কিছু করার চেষ্টা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিতে পারবেন।
কারা সরাসরি আপনার প্রতিযোগী তা নির্ধারণ করাটা জরুরী। তাদের ফেসবুকের পৃষ্ঠাটি দেখুন, তাদের গ্রাহকদের মন্তব্যগুলো পড়ুন, এবং তাদের যদি দোকান থাকে সেখানে ঘুরে আসুন। খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন তাদের কোন জিনিসটি সবচেয়ে ভালো বিক্রি হচ্ছে এবং আপনি কিভাবে আপনার নক্শা আরও উন্নত করতে পারবেন, তারপর ফিরে আসুন।
ফ্যাশান শিল্পটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম বড় শিল্প যাতে প্রতিনিয়তই পরিবর্তন আসছে। সেজন্য আপনাকে এমন কিছু করতে হবে যা অন্য কেউ করছে না, তা নাহলে আপনাকে হারিয়ে যেতে হবে। 

· বাজারে আপনার স্থান চিহ্নিত করুন

ফ্যাশান শিল্প বাংলাদেশে একটি বিশাল বাজার তাই সেখানে আপনার স্থান খুঁজে বের করাটাই হবে আপনার অর্ধেক কাজ। বাজারে একটি ফাঁকা স্থান খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন এবং কিভাবে আপনি সেটা আপনার পণ্য দিয়ে পূর্ণ করবেন। ব্যবসার একটি বিশেষ ধরন খুঁজে বের করা আপনার টিকে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে ।
ভাববেন না যে, আপনি বাজার ধরতে পারবেন যদি আপনি
অনন্য হয়ে থাকেন যেভাবে সবাই তাদের নিজেদের মতো অনন্য। যদি আপনি নারীদের পোশাক তৈরী করতে চান, তাহলে খুঁজে বের করুন কি নেই, এবং এমন অনন্য কিছু তৈরী করুন যাতে গ্রাহকরা আপনার পণ্য ক্রয় করেন। অন্যেরা যা করছেন তা অনুসরণ করে আশা করবেন না যে আপনি মুনাফা করতে পারবেন তাদের কষ্টার্জিত গবেষণা এবং উন্নয়নের সাহায্যে।

· কারা বিক্রয় করবে?

বাজারে স্থান নির্বাচনের পর খুঁজে বের করুন কারা বিক্রয় করবে। বাজার গবেষণা করা এবং ফাঁকা জায়গা খুঁজে বের করা যেখানে আপনি পণ্য বিক্রয় করতে পারবেন, এটাই হলো সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি। এটা সবসময় সম্ভব না কারণ ফ্যাশান শিল্প হলো অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং সবসময়ই পরিবর্তনশীল।
আপনি যদি পুরুষদের একটি নতুন পোশোকের লাইন শুরু করতে চান, তবে বাজারের বড় প্রতিযোগীরা কি করছে না তা খুঁজে বের করুন। যেমন: একটি আনুষ্ঠানিক শার্ট যা আপনি অনানুষ্ঠানিক পরিবেশেও পরতে পারেন। এখানে পার্থক্যটা খুঁজতে আপনাকে স্বশরীরে দোকানগুলোতে যেতে হবে, তবে আপনি প্রাথমিক ধারণা পাবেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন ।
আপনার প্রতিযোগীদের কারখানাগুলো পরিদর্শণ করা সম্ভব না, তাই তাদেরকে অনলাইনে অনুসরণ করুন এবং যতটা সম্ভব গবেষণা করা যায় করুন। লক্ষ্য হলো এমন একটি পণ্য খুঁজে বের করা যা আপনার প্রতিযোগীরা করছেনা এবং তা তৈরী করা। যদি আপনি ভেবে থাকেন যে, আপনার সৃজনশীল নক্শা এমনিই বিক্রি হয়ে যাবে, তবে আপনি ভুল ভাবছেন এবং আপনার ব্যবসা কোনো লাভ দেখার আগেই শেষ হয়ে যাবে।

· আপনার নক্শার ধারণা নতুন এবং অনন্য হতে হবে

যখন আপনি আপনার পোশাকের লাইন ডিজাইন করার চিন্তা শুরু করবেন তখন ভাবুন যে আপনি কি পরিবেশন করছেন। আপনাকে একজন দক্ষ ডিজাইনার হতে হবে কারণ আপনি একটি নতুন পোশাকের ব্যবসা শুরু করছেন। আপনার দক্ষতাকে বাজার জ্ঞানের  সাথে মেলানো একটি চ্যালেঞ্জ হবে।
যেহেতু এটা আপনার প্রথম ব্যবসা তাই আপনাকে বাজার ধরতে হবে এবং ডিজাইন করার সময় এই কথাটা মাথায় রাখতে হবে। আপনার ডিজাইনটিকে খরচ-কার্যকর হতে হবে যাতে আপনার জাহাজের পাল ঠিক করার আগেই যেন তা ডুবে না যায়। আপনি কি তৈরী করতে যাচ্ছেন সে সম্পর্কে আপনার একটা ধারণা থাকতে হবে কিন্তু আপনি নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন যে সেই ডিজাইনগুলো কাজ করবে কিনা। আপনার বন্ধুদের বা পরিবারের সাথে আপনার ডিজাইনটি তৈরী বা উৎপাদন করার উপযুক্ত কিনা সে ব্যাপারে কথা বলাটা একটি ভালো বুদ্ধি।

· আপনার উপযুক্ত সরবরাহকারী এবং প্রস্তুতকারক খুঁজে বের করুন

আপনাকে কাঁচামালের একটি সরবরাহকারী উৎস খুঁজে বের করতে হবে এবং তারপর একজন অতুলনীয় কারিগর খুঁজুন  যে কিনা আপনার সৃষ্টিতে প্রাণ এনে দিবে। সবচেয়ে ভালো সরবরাহকারী খুঁজে পাওয়াটা হয়তো সম্ভব না কারণ তারা অনেক টাকা চাইবে। যেহেতু আপনি একটি নতুন ব্যবসা শুরু করছেন, তাই আপনাকে এমন একটি সরবরাহকারী নির্বাচন করতে হবে যে একটি সহনীয় মূল্যে কাঁচামাল সরবরাহ করবে । আবার টাকা বাঁচাতে গিয়ে সস্তার কাঁচামাল খুঁজবেন না। যদি আপনি কোনো ভালো সরবরাহকারী খুঁজে না পান, তবে আপনার বন্ধূ বা পরিবারের কাছে জানতে চান এবং তারা হয়তো আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
আপনি কি সব উপকরণ বা কাঁচামালগুলো কাটা, সাইজ করা, আকার দেয়ার কাজ নিজেই করতে চাচ্ছেন? আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, আপনি এমন কিছু ভাবছেন না, তাই আপনার একজন দর্জি বা কারিগর বা প্রস্তুতকারকের প্রয়োজন হবে যে আপনার নক্শা বা ডিজাইনগুলো তৈরী করবে। তাই আপনাকে একজন বড় কারিগর খুঁজে বের করতে হবে যে পাইকারী হারে কাপড় তৈরী করে এবং পাশাপাশি আপনার জন্যও তৈরী করে দিবে। কিন্তু এমন পাওয়াটা বিরল। তাই ছোটো প্রস্তুতকারক খুঁজে বের করুন যারা আাপনার কথা মতো কাজ করবে।
সরবরাহকারী এবং প্রস্তুতকারক উভয় ক্ষেত্রেই ছোটো দেখে খূঁজে বের করুন, কারণ তাহলে খরচ কম হবে। ছোটো ব্যবসার সরবরাহকারীরা আপনাকে আরও ভালো মানের কাঁচামাল দেয়ার চেষ্টা করবে যাতে আপনি তার সাথে আপনার ব্যবসা চালিয়ে যান।
একটি ছোটো ব্যবসার প্রস্তুতকারকও আপনাকে একই কারণে সবচেয়ে ভালো মানের পণ্যটি তৈরী করে দেয়া চেষ্টা করবে। কিন্তু আপনি তাদের কাজের ওপর সূক্ষ দৃষ্টি রাখুন যাতে তারা আপনাকে ঠকাতে না পারে এবং কাঁচামাল পরিবর্তন করে দিতে না পারে বা ত্রুটিযুক্ত কাঁচামাল না দিতে পারে। যতবার সম্ভব চেক বা পরীক্ষা করুন এবং আবার পরীক্ষা করুন যাতে আপনি সেরা পণ্যটি পান।

মূল্য বিশ্লেষণ

একটি ফ্যাশন ব্যবসা শুরুর সময় আপনাকে একটি মূল্য বিশ্লেষণ করতে হবে। আপনাকে আপনার ব্যবসার নির্দিষ্ট অংশগুলোর জন্য নির্দিষ্ট বাজেট ধার্য করতে হবে। আপনার কাঁচামালের খরচ, উৎপাদন খরচ, এবং তৈরীর খরচ লাগবে এবং আপনি যদি একটি দোকান খুলেন এবং একটি অনলাইন দোকান না খুলেন তবে আপনাকে ভাড়া এবং কর্মচারীদের বেতনের জন্য টাকা সরিয়ে রাখতে হবে।

অনলাইন ব্যবসা এখন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে কিন্তু অনলাইন ব্যবসাতেও প্রচুর খরচ আছে। আপনাকে আপনার পৃষ্ঠাটি বুস্ট করতে হবে যাতে এটা আপনার নির্ধারিত গ্রাহক বা দর্শকদের কাছে পৌঁছায়। এই বিজ্ঞাপণটি সস্তা হবে না সেজন্য আপনাকে বুদ্ধিমান হতে হবে এবং সব টাকা বিজ্ঞাপণে ব্যয় করে ফেললে চলবে না। আপনাকে একটি নির্দিষ্ট গ্রাহকগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করতে হবে যারা আপনার পণ্য ক্রয় করবে। যদি আপনি সঠিক গ্রাহকদেরকে লক্ষ্য করতে না পারেন, তবে আপনার টাকা নষ্ট হবে।

· আরও সংযুক্ত হতে আপনার সংযোগগুলোকে আরও ঝালাই করুন

আরও সংযোগ তৈরী করতে আপনাকে আরও সংযুক্ত হতে হবে। আপনি যখন বাংলাদেশে একটি ফ্যাশান ব্যবসা শুরু করছেন তখন সংযোগ তৈরী করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। লোকজনের মাধ্যমে, আপনার নাম এতোটা ছড়িয়ে পড়বে যে আপনার সংযোগগুলো আপনাকে আরও নতুন সংযোগ পেতে সাহায্য করবে। আপনাকে আপনার নামটি এমন মানুষের কাছে বিক্রি করতে হবে যাদেরকে আপনি পছন্দ করেন না যাতে আপনি বেশী গ্রাহক পেতে পারেন। বেশী গ্রাহক মানে বেশী টাকা সেজন্য আপনাকে আপনার অহংকার ভুলে যেতে হবে এবং ব্যবসার প্রচার করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ুন।

শেষ কথা:

এই আর্টিকেলে, আপনি পাবেন কিভাবে বাংলাদেশে ২০২৩ সালে একটি ফ্যাশান ব্যবসা শুরু করবেন। যদি উপরোল্লেখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারেন তবে আপনি সঠিক পথে এগিয়ে যাবেন। শুভ কামনা রইল!!!

বোনাস টিপস

একটি ফ্যাশান ব্যবসা শুরু করার সময় কিছু জিনিস আছে যা অনেকেই খেয়াল রাখতে ভুলে যান। সেজন্য শেষ উপদেশ হিসেবে, আমি এই বিষয়গুলো উল্লেখ করবো যা আপনি এড়িয়ে যাবেন না।

  • মূল্য ঠিকভাবে নির্ধারণ না করা।
  • যথাযথভাবে গবেষণা করতে ব্যর্থ হওয়া।
  • কাকে আপনি বিক্রি করবেন সে বিষয়ে পরিষ্কার না হওয়া।
  • আগে থেকেই বাজারজাত না করা।
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার না করা।
  • দৈনিক ফেসবুকে পোস্ট করে ব্যবসা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করেন।
  • দৃষ্টি-নন্দন ইন্স্টাগ্রাম ছবি তৈরী করুন।
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট বুস্ট করুন যাতে সবাই আপনার ব্যবসা সম্পর্কে জানতে পারে।
  • ব্যবসা পরিকল্পনা অনুসরণ করতে ব্যর্থ হওয়া।
  • আপনার কাজ ভাগ করা।
  • আপনার সব টাকা ব্যবসাতে বিনিয়োগ করা।
  • কিভাবে হিসাবপাতি আপনার ব্যবসা পরিচালনা করতে সাহায্য করবে সে বিষয়ে খবর না রাখা।

হিসাবপাতির ব্যবহার

আপনার ব্যবসার শুরুটা আরও সহজ করুন দৈনন্দিন ব্যবসার খোঁজ হিসাবপাতি অ্যাপের সাহায্যে রাখার মাধ্যমে। হিসাবপাতি আপনি আপনার
ল্যাপটপে বা ডেস্কটপে বা অ্যাপ হিসেবে আপনার ফোনে ব্যবহার করতে পারেন। আর, এর সাহায্যে আপনার ব্যবসার একটা অংশ সহজ হয়ে যায় যা আমার কাছে একটা বড় জয় বলে মনে হয়। 
হিসাবপাতি অ্যাপ আপনার ব্যব্সার সব লেনদেনের হিসাব রাখতে সাহায্য করে শুধুমাত্র একটি বোতাম টেপার মাধ্যমে। আপনি আপনার মজুদকৃত পণ্যের ইনভেন্টরি এবং সব ক্রয় এবং বিক্রয়ের খোঁজ রাখতে পারেন। অ্যাপটি আপনার পকেটে একটি ছোট্ট হিসাবরক্ষক তাই আপনাকে আপনার ব্যবসার এই দিকটা সম্পর্কে ভাবতে হয় না। আপনি আপনার সব গ্রাহক এবং সরবরাহকারীদের যোগাযোগের তথ্য এই জায়গায় রাখতে পারেন যা আপনি আপনার প্রয়োজন অনুসারে সহজেই ব্যবহার করতে পারেন।
আপনি সাপ্তাহিক/মাসিক/বার্ষিক রিপোর্টের পিডিএফ রূপ সংরক্ষণ করে তা শেয়ার করতে পারেন এবং নিয়মিত আলোচনা করতে পারেন এবং আপনার ব্যবসাকে আরও উন্নত করতে প্রয়োজনীয় ধাপগুলো নিতে সাহায্য করবে।
এই অ্যাপটিকে সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যবহার করতে এর প্রিমিয়াম প্যাকেজটি কিনুন যার দাম হবে ৯৯  টাকা এবং বিজনেস প্যাকেজের দাম ১৯৯  টাকা মাসে।

Search
সাম্প্রতিক পোস্টসমূহ
আজই আমাদের অ্যাপ ডাউনলোড করুন
অনলাইন বা অফলাইনে যেকোন জায়গা থেকে সহজেই আপনার দৈনন্দিন ব্যবসায়িক লেনদেন পরিচালনা করুন।