বাংলাদেশে অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া

বাংলাদেশে অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া

আপনি কি আপনার নিজের বস হতে পছন্দ করবেন না? অবশ্যই, হ্যাঁ। তাহলে কিছু নতুন ব্যবসার আইডিয়া বা ধারণা খুঁজে বের করুন, সেগুলোর মধ্য থেকে সবচেয়ে ভালোটি বেছে নিন যেটাতে আপনি দক্ষ।এরপর  আপনার ব্যবসাটি শুরু করুন। কিন্তু আপনি কি অনেক বেশী আইডিয়ার মাঝে হাবুডুবু খাচ্ছেন বা ভেবে পাচ্ছেন না যে কোনটি বেছে নিবেন? তাহলে বাংলাদেশে অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া পেতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।

ব্যবসার ধারণা পাওয়ার উপায়

আপনি সমস্যা চিহ্নিত করার মাধ্যমে সহজেই ব্যবসার ধারণা পেতে পারেন। যখন আপনার ব্যবসাটির মাধ্যমে সমস্যাটি সমাধান করার ক্ষমতা থাকে তখন প্রতিটি সমস্যা একটি সম্ভাব্য ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করে । আপনি বাংলাদেশে একটি ব্যবসা শুরু করতে চাইলে, প্রথমে, এই দেশের প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করুন এবং আপনার ব্যবসার মডেলের মাধ্যমে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করুন।

ব্যবসা করার জন্য আইডিয়া বা ধারণা পাওয়াটা কঠিন হবে না। কঠিন হলো বাস্তবায়ন করা। আপনি ভালোভাবেই জানেন যে, আপনি শুধু গুগলে সার্চ করেই অসংখ্য ব্যবসার ধারণা পেতে পারেন। কিন্তু আপনি যখন আপনার ব্যবসার ধারণাটি বাস্তবায়িত করতে পারবেন না, তখন আপনি তা থেকে কোনোকিছুই আয় করতে পারবেন না। 

প্রধানত, ব্যবসা দুই ধরনের হতে পারে: লাভজনক এবং অলাভজনক। আপনার সবসময়ই মাথায় রাখতে হবে যে, একটি অলাভজনক ব্যবসার টিকে থাকাটা কঠিন। তাই অনুরোধ রইলো যে, কোনো অলাভজনক বা সমাজসেবামূলক ব্যবসায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন না, তবে লাভজনক ব্যবসার পাশাপাশি আপনি তা করতে পারেন।

বাংলাদেশে অল্প টাকায় লাভজনক বা ছোট ব্যবসার আইডিয়া

আপনার বিনিয়োগ অল্প কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, আপনি কোনো ব্যবসা শুরু করতে পারবেন না। আপনি আমাদের এই তালিকা থেকে বাংলাদেশে অল্প টাকায় বিজনেস আইডিয়া বা ব্যবসা করার উপায় পেয়ে যাবেন। আমরা আপনার সুবিধার্থে শীর্ষ আইডিয়াগুলো বেছে নিয়েছি:

১. কফি শপ
২. ফাস্ট ফুড কর্ণার/ ছোটো রেস্তোরাঁ
৩. কসমেটিক্স শপ
৪. স্টেশনারী দোকান
৫. খেলনার দোকান
৬. ফ্যাশন হাউজ
৭. মা এবং শিশুদের পণ্যের দোকান
৮. ফটোগ্রাফি ব্যবসা
৯. আসবাবপত্রের দোকান
১০. জুস বার

আসুন, এই ব্যবসার আইডিয়াগুলো আলোচনা করা যাক।

১. কফি শপ

আমাদের দেশে কফির জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আপনি যদি কোনো ব্যবসায়িক মিটিং-এ থাকেন, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যান বা  ক্লান্ত বোধ করেন এই প্রতিটি ক্ষেত্রেই কফি খুবই জনপ্রিয়। কফির  জনপ্রিয়তা বিশ্বায়নেরই একটি প্রতিফলন। এই পরিস্থিতিতে  কফি  শপ হতে পারে একটি উপযুক্ত ব্যবসার আইডিয়া।

 আপনি কফি শপের জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা খুঁজে বের করুন যেখানে আপনার কোনো ভালো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই যেমন পার্ক, অফিস, বা আবাসিক এলাকার কাছে, শপিং মলের ভেতর,  কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে। বিশেষ করে শহরে কফি বেশি জনপ্রিয়।
কফির বিভিন্ন ধরন আছে যেমন অ্যামেরিকানো, ব্ল্যা্ক, ক্যাপাচিনো, ডোপিও, এসপ্রেসো, কর্টাডো, ল্যাটে, লূংগো, রেড-আই ইত্যাদি। আপনি যদি বিভিন্ন ধরনের কফির সমারোহ নিয়ে হাজির হতে পারেন, তবে সহজেই গ্রাহক আ্কৃষ্ট করতে পারবেন। আপনি যদি অসাধারণ কফি বানাতে পারেন এবং একটি ছোটো জায়গা ভাড়া করার সামর্থ্য থাকে,তবে আপনি অবশ্যই এই ব্যবসাটি করার কথা ভাবতে পারেন
পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি আপনার কফির দোকানটি একটি শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশে নিতে পছন্দ করবেন। শুধু আপনার গ্রাহকদের বসার জন্য কিছু চেয়ার বা টেবিলের ব্যবস্থা করুন, ব্যস এইটুকুই যথেষ্ট।

প্রয়োজনীয় দক্ষতা: কফি তৈরীর দক্ষতা (যদি ইতিমধ্যেই আপনার এই দক্ষতাটি থেকে থাকে, তবে আপনি সোনায় সোহাগা। অথবা এটা দ্রুত শিখে নিতে পারেন।

আনুমানিক বিনিয়োগ: একটি ছোটো কফি শপের জন্য ১.৫ লাখ থেকে ২ লাখ টাকা লাগবে।

আনুমানিক মাসিক লাভ: ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা প্রতি মাসে।

২. ফাস্ট ফুড কর্ণার/ ছোট রেস্তোরাঁ

আপনি একটি ফাস্ট ফুড কর্ণার, একটি ছোট রেস্তোরাঁ বা দুটোরই একটি মিশ্রণ ঘটাতে পারেন। এ ধরনের ব্যবসা প্রায় সবসময়ই এদেশের জন্য একটি ভালো ব্যবসা কারণ এদেশের মানুষ বেশ খাদ্যরসিক। কোন উপলক্ষ্য, উৎসব যাই হোক না কেনো খাবারই হয় আকর্ষণের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু।
তরুণ প্রজন্ম বন্ধুদের সাথে বাইরে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে এবং বিভিন্ন স্বাদের খাবার খেয়ে তাদের রসনাকে পরিতৃপ্ত করার চেষ্টা করে। আবার মধ্যবিত্তরাও মাঝেমাঝে বাইরে খাবার খেতে পছন্দ করে। ফাস্ট ফুড এবং বিভিন্ন ধরনের ভারী এবং হালকা খাবার যেমন পিৎজা, বার্গার, বিরিয়ানী, ফ্রাইড রাইস, চিকেন ফ্রাই ইত্যাদি। বড় শহরগুলো যেমন ঢাকা এবং চট্টগ্রামে বেশ জনপ্রিয়।
আপনি যদি দারুণ স্বাদ এবং উন্নত সেবা পরিবেশন করতে পারেন, আপনি এই ব্যবসায় সহজেই লাভবান হতে পারবেন। একটি পছন্দসই জায়গা বেছে নিন যেমন অফিস এলাকা, আবাসিক এলাকা,  কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে যেখানে লোকজন সহজেই পৌঁছাতে পারে।
একটি সুন্দর পরিবেশও একটি ভালো ফাস্ট ফুড/রেস্তোরাঁর জন্য অত্যাবশ্যক। আপনার পরিবেশিত খাবার যদি সুস্বাদু হয় কিন্তু আপনার পরিবেশ যদি ভালো না হয়, তবে আপনার ব্যবসাটি ভালো ফলাফল না ও দিতে পারে। তাই আপনাকে ফাস্টফুড কর্ণার/ছোটো রেস্তোরাঁটি অভিজাতভাবে সাজাতে হবে যাতে গ্রাহকরা এর প্রতি আকৃষ্ট হয়।

প্রয়োজনীয় বিষয়: ভালো স্বাদের জন্য ভালো শেফ বা বাবুর্চি,  সুন্দর পরিবেশ এবং অবস্থান।

আনুমানিক বিনিয়োগ: ২ থেকে ৩ লাখ টাকা।

আনুমানিক লাভ: ৫০,০০০ থেকে ১ লাখ টাকা।

৩. কসমেটিক্স শপ

প্রায় সব মেয়েরাই কসমেটিক্স বা প্রসাধনী সামগ্রী ভালোবাসে, বিশেষ করে শহরের মেয়েরা। বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। আপনি যদি আপনার নির্ধারিত গ্রাহকদের ভালোভাবে চিহ্নিত করতে পারেন, তাহলে  আপনি একটি ভালো  মুনাফা  পেতে  পারেন। সেজন্য এই ব্যবসার আইডিয়াটি  বর্তমানে বাংলাদেশে  বেশ জনপ্রিয়, বিশেষ করে  মেয়েদের কাছে এটা খুবই জনপ্রিয়
এই ব্যবসাটির জন্য আপনার খুব বড় পরিমাণে বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই, শুধু একটি নির্ভরযোগ্য কোম্পানি  থেকে মানসম্পন্ন কসমেটিক্স বা প্রসাধনী সামগ্রী কিনুন, এবং সেগুলো আপনার নির্ধারিত গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করার চেষ্টা করুন। প্রসাধনী সামগ্রীগুলো বেশ সংবেদনশীল জিনিস কারণ মেয়েরা সেগুলোকে তাদের ত্বক, চুল, এবং ঠোঁটে প্রয়োগ করে। তাই এর মান একটি প্রধান বাধ্যতামূলক বিষয়।
আপনি স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক উভয় ধরনের ব্র্যান্ডই কিনতে পারেন। অবশ্যই আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর জন্য খরচ বেশি পড়বে কিন্তু শহরের মেয়েদের কাছে এর চাহিদা ব্যাপক । আবার  আপনি আপনার ব্যবসাটি অনলাইনেও শুরু করতে পারেন। আপনি একটি ফেসবুক পেইজ খুলেই আপনার পণ্যগুলো বিক্রি করতে পারেন, পোস্ট এবং মেসেঞ্জারের মাধ্যমে আপনার গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
সবচেয়ে ভালো উপায় হলো আপনি আপনার পণ্যগুলো নিয়ে লাইভ হয়ে যান এবং সেগুলোর  সুবিধা ও অসুবিধাগুলো আপনার গ্রাহকদের কাছে বর্ণনা করুন। মানুষ আপনার লাইভ ভিডিওতে মন্তব্য করবে এবং পণ্যের জন্য অর্ডার করবে।

প্রয়োজনীয় দক্ষতা:  চটপটে, সুন্দরী মেয়েরা যাদের ভালো বিক্রয় ক্ষমতা আছে তারা ভালো করতে পারে।

আনুমানিক বিনিয়োগ:  ১ লাখ টাকা।

আনুমানিক লাভ: আপনার ৫০% লাভ করার সম্ভাবনা আছে অর্থাৎ আপনার বিনিয়োগ যদি ১ লাখ হয় তবে আপনি ৫০,০০০ টাকা লাভ করতে পারবেন 

৪. স্টেশনারী দোকান

আপনি আপনার স্টেশনারী দোকানও খুলতে পারেন এবং টাকা আয় করতে পারেন। এই ব্যবসাটি প্রায় সবসময়ই লাভজনক কারণ ছাত্রদের প্রায় সারা বছরই স্টেশনারী সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। শুধু ছাত্রদেরই না স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এবং অফিসেরও স্টেশনারী সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। তাই এদেশে এই ব্যবসাটি চালানো একটি লাভজনক আইডিয়া।
মহামারীর সময় এই ব্যবসাটি কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হযেছে কিন্তু এখন ব্যবসাটি আবার এর আগের অবস্থায় ফিরে আসছে। যখন আপনার বিনিয়োগ অল্প, তখন এটা আপনার জন্য একটা লাভজনক আইডিয়া হতে পারে। আপনার ব্যবসাটি স্থানীয়ভাবে শুরু করুন এবং আপনার দোকানটির জন্য একটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন, বা আবাসিক এলাকা পছন্দ করুন।

 প্রয়োজনীয় বিষয়: একটি উপযুক্ত অবস্থান এবং একটি দোকান চালানোর এবং জিনিপত্র বিক্রি করার ক্ষমতা।

আনুমানিক বিনিয়োগ: ২ থেকে ৩ লাখ টাকা।

আনুমানিক লাভ: ২৫% থেকে ৩৫%

৫. খেলনার দোকান

খেলনার দোকান বাংলাদেশের জন্য একটি মোটামুটি লাভজনক ব্যবসা । ২০১০ সালের আগে বাংলাদেশে কোনো খেলনার শিল্প ছিলো না। খেলনাগুলো বেশীরভাগই চীন থেকে আসে। চীন বিপুল পরিমাণ খেলনা কম খরচেই তৈরী করতে পারে। এখন  আমাদের দেশে কিছু ধরনের খেলনা তৈরী হয়  এবং বর্তমানে এই শিল্প স্থানীয় বাজারের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে।
যেহেতু আপনার বিনিয়োগ কম, তাই খেলনাগুলো আপনি ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পাইকারী বাজার থেকে কিনতে পারেন কারণ সেখান থেকে আপনি কম খরচে খেলনা কিনতে পারবেন। আবার  চীন থেকে বিপুল পরিমাণে খেলনা আমদানী করার সুযোগও আছে  সেক্ষেত্রে আপনার  খরচ মাঝারি  ধরনের হবে  এবং আপনি বেশী পরিমাণে লাভ উপভোগ করতে পারবেন।
আপনি সম্পূর্ণভাবে ব্যবসাটিতে নিয়োজিত হওয়ার আগে ভালোভাবে বাজার গবেষণা করে নিন। এখানে  আপনার নির্ধারিত গ্রাহক হলো শিশুরা। তাই তাদের পছন্দ বিবেচনায় আনুন। এখন  শিশুরা পুরনো ধরনের খেলনা পছন্দ করে না  বরং তারা নতুন ধরনের, অন্যরকম খেলনা পছন্দ করে  যা আপনি একটি সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে পারবেন।
এমন একটি জায়গা খুঁজে বের করুন যেখান থেকে বাবা-মারা সহজেই তাদের শিশুদের জন্য  কাঙ্খিত খেলনা পেতে পারেন। দোকানটি চমৎকারভাবে সাজান যেন সবাই আপনার দোকানের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

 প্রয়োজনীয় দক্ষতা:  পণ্য আমদানী বিষয়ে জ্ঞান এবং বাজার গবেষণা।

আনুমানিক বিনিয়োগ:  ১ থেকে ২ লাখ টাকা।

আনুমানিক লাভ:  ২৩.৩% থেকে ২৫.৯% খেলনা প্রতি

৬. ফ্যাশন হাউজ

ফ্যাশন শুধু একটি পার্থক্য তৈরী করা নয়, পার্থক্য দেখানোও। মানুষ সবসময় নতুন ফ্যাশনের ধারাগুলো অনুসরণ করে। তাই ফ্যাশন হাউজ  একটি জনপ্রিয় ব্যবসার আইডিয়া এবং আমাদের দেশে ফ্যাশন হাউজগুলো বেশ ভালো ব্যবসা করছে। আপনি আপনার এলাকায় বিভিন্ন্ ফ্যাশন হাউজ দেখে থাকবেন এবং সেগুলোকে মোটামুটি ভালো ব্যবসা করতে দেখবেন।
আপনি যদি একটি অফলাইন ফ্যাশন হাউজের কথা ভেবে থাকেন, তবে আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা  এমন আরও কিছু উপযুক্ত জায়গা পছন্দ করতে পারেন। আবার সবসময় অবস্থানের প্রয়োজনও নেই কারণ আপনার অল্প পুঁজি, তাই একটি অনলাইন ফ্যাশন হাউজ চালানোর কথাও বিবেচনায় আনতে পারেন। শুধু একটি ফেসবুক পেইজ খুলুন এবং বুস্টিংয়ের মাধ্যেমে আপনার ব্যবসার প্রচারণা চালান। আপনার গ্রাহকদের সাথে নিয়মিত পোস্ট এবং মেসেঞ্জারের মাধ্যমে যোগাযোগ করুন।
আপনার গ্রাহকরা মেসেঞ্জারে অর্ডার করবে  এবং তারা চাইলে পেজে দেয়া নাম্বারের মাধ্যমেও  আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। শুধু একজন ডেলিভারী ম্যান বা সরবরাহকারীর ব্যবস্থা করুন এবং মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা মার্চেন্ট ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে করুন যেমন: বিকাশ, নগদ, রকেট, প্রভৃতি।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যবসাটি শুরু করার আগে ভালোভাবে বাজার গবেষণা করা এবং একটি  পরিকল্পনা তৈরী করা। একটি যথার্থ বাজার গবেষণা, উপযুক্ত ব্যবসা পরিকল্পনা, এবং পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন আপনাকে এনে দিতে পারে কাঙ্খিত সাফল্য।

প্রয়োজনীয় দক্ষতা:  নক্শা করার দক্ষতা এবং ফেসবুকে মানুষের সাথে যোগাযোগ করার ভালো ক্ষমতা।

আনুমানিক বিনিয়োগ:  ১ লাখ টাকা।

আনুমানিক লাভ:  ১৮% থেকে ৩০%

৭. মা এবং শিশুদের পণ্যের দোকান

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মা এবং শিশুদের পণ্যের দোকানগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু এই আইডিয়াটা আপনার জন্য খুব একটা সহজ হবে না। ব্যবসাটি শুরু করার আগে আপনাকে একটি  যথার্থ বাজার গবেষণা চালাতে হবে। কারণ আপনাকে আপনার নির্ধারিত গ্রাহকদের বুঝতে হবে অর্থাৎ মা এবং শিশুদের।
এখানে পণ্যগুলো বেশ সংবেদনশীল।  আবাসিক এলাকা বা হাসপাতালগুলোর কাছে একটি সুন্দর জায়গা পছন্দ করুন কারণ এটাই হবে আপনার ব্যবসার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত অবস্থান। মা এবং শিশুদের জন্য মানসম্পন্ন পণ্য সংগ্রহ করুন। দোকানটিকে সুন্দরভাবে সাজান যেন ক্রেতারা সহজেই আকৃষ্ট হয়।

 প্রয়োজনীয় দক্ষতা:  বাজার গবেষণা এবং নির্ধারিত গ্রাহকদের প্রয়োজন সম্পর্কে জ্ঞান।

আনুমানিক বিনিয়োগ:  ২ থেকে ৩ লাখ টাকা।

আনুমানিক লাভ:  ৪০%

৮. ফটোগ্রাফি ব্যবসা

বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ যেখানে মানুষ বিভিন্ন উৎসবে  ছবি তুলতে আগ্রহী, সেখানে ফটোগ্রাফি একটি  চমৎকার ব্যবসার আইডিয়া হতে পারে, অবশ্যই যদি আপনার ফটোগ্রাফির প্রতি ঝোঁক থাকে। যদি ইতিমধ্যেই আপনার একটি ডিএসএলআর থেকে থাকে, তবে আপনি সোনায় সোহাগা আর  যদি না  থাকে তবে আপনি একটি  ডিএসএলআর কিনতে পারেন যা বাংলাদেশে এক লাখ টাকার বেশী লাগবে না।তাই এই বিনিয়োগের মধ্যে আপনি ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।
যদি আপনার ভালো নেটওয়ার্কিং থাকে তাহলে  আপনি সহজেই আপনার বন্ধুবান্ধব, পরিবার, এবং সহকর্মীদের কাছ থেকে তাদের বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোর ছবি তোলার অফার পেতে পারেন। আপনি সুন্দরভাবে আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলোতে যেমন ফেসবুক, ইন্স্টাগ্রাম, লিংকডইন প্রভৃতিতে  ব্যবসার প্রচারণা চালাতে পারেন। ফটোগ্রাফির দক্ষতার প্রচার করতে শুধু আপনাকে নিয়মিত ছবি এবং পোস্ট শেয়ার করতে হবে ।
আপনি সম্পূর্ণভাবে বিয়ের ছবি তোলার ওপরও মনোনিবেশ করতে পারেন।  বিভিন্ন  অনুষ্ঠানের ছবি তুললে আপনার আয়ের উৎসটাকে আরও বহুমুখী এবং বৈচিত্র্যময় করে তুলতে পারবেন।

 প্রয়োজনীয় দক্ষতা:  ফটোগ্রাফি বা ছবি তোলার দক্ষতা।

আনুমানিক বিনিয়োগ:  ১ লাখ টাকা।

আনুমানিক লাভ:  মাসে ৫০,০০০ টাকা।

৯. আসবাবপত্রের দোকান

প্রধানত কাঠের আসবাবপত্রের বাংলাদেশে একটা ভালো চাহিদা আছে  কারণ ঘরবাড়িতে, ফ্ল্যাটবাড়িতে, দোকানে, অফিসে, এবং অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানে বা সংস্থানে  আসবাবপত্রের প্রয়োজন পড়ে। তাই  আসবাবপত্রের দোকান একটি ভালো ব্যবসার আইডিয়া হতে পারে। এজন্য আপনাকে  ভালোভাবে বাজার গবেষণা করতে হবে, প্রতিদ্বন্দ্বীদের দূর্বলতাগুলো খুঁজে বের করতে হবে  এবং সেই শূণ্যস্থানগুলো আপনার  কাস্টোমাইজড নক্শা দিয়ে পূরণ করতে হবে। আপনি যদি আসবাবপত্র তৈরী করতে পারেন তবে সেটা আপনার জন্য একটি ইতিবাচক দিক হবে  কিন্তু যদি আপনি না পারেন তবে আপনার কমপক্ষে আসবাবপত্র সম্পর্কে ভালো রুচি এবং জ্ঞান থাকতে হবে।

প্রয়োজনীয় দক্ষতা:  বাজার গবেষণা এবং আসবাবপত্র সম্পর্কে ভালো রুচি ও জ্ঞান ।

আনুমানিক বিনিয়োগ:  ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা।

আনুমানিক লাভ:  ৪০% থেকে ৬০%

১০. জুস বার

বর্তমানে  জুস বার বা ফলের রসের দোকান বাংলাদেশে একটি বেশ জনপ্রিয় ব্যবসার আইডিয়া। কারণ  বাংলাদেশ একটি গ্রীষ্মপ্রধান দেশ এবং এদেশের মানুষ ফলের রস খেতে পছন্দ করে। বিশেষ করে, গ্রীষ্মের গরম আবহাওয়ায় এক গ্লাস ঠান্ডা ফলের রস আপনার তৃষ্ণা মেটানোর সাথে  আপনাকে দিবে একটা স্নিগ্ধ, প্রশান্তিদায়ক অনুভূতি।
আপনি যদি বিভিন্ন ধরনের ফলের রস তৈরী করেন, তবে আপনার জুস বারটি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। আপনার বিশেষ কিছু ফলের রস রাখতে হবে যা আপনার জুস বারটিকে অন্যগুলো থেকে আলাদা করে তুলবে। আপনি যদি বিভিন্ন ধরনের ফলের রসের সাথে, বিশেষ বা ভিন্ন স্বাদের ফলের রস রাখেন, তবে গ্রাহকরা দূরবর্তী এলাকা থেকে আপনার দোকানে আসবে।
আপনি একটি ছোটো জায়গায় আপনার জুস বারটি শুরু করতে পারেন। শুধু আপনার দোকানের জন্য একটি উপযুক্ত অবস্থান এবং পরিবেশ খুঁজে বের করুন। এই ব্যবসাটি অল্প পুঁজিতে শুরু করার জন্য আদর্শ একটি ব্যবসা কারণ আপনি আপনার বিনিয়োগের বেশীরভাগই ব্যয় করবেন ফলের রস করার যন্ত্র এবং প্যাকেট করার উপকরণ কেনার পেছনে।  গ্লাস ব্যবহার করুন ফলের রস পরিবেশনের জন্য, পরিবেশটা ভালো রাখুন, এবং জুস পরিবেশনের কায়দাটা সুন্দর ও আধুনিক রাখুন কারণ আপনার নির্ধারিত গ্রাহকরা হলো উচ্চ এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ।

প্রয়োজনীয় দক্ষতা:  একটি উপযুক্ত অবস্থান, সুন্দর নক্শা এবং পরিবেশ-বান্ধব গ্লাস এবং ফলের রস বানাবার যন্ত্রপাতি।

আনুমানিক বিনিয়োগ:  ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা।

আনুমানিক লাভ:  ১ লাখ টাকার বেশী।

এগুলো হলো বাংলাদেশে অল্প বিনিয়োগে ব্যবসা করার  কিছু  আইডিয়া। এখন, আপনি নিশ্চয়ই জানেন কিছু অনন্য ব্যবসার আইডিয়া কি হতে পারে? বা বাংলাদেশে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে গিয়েছেন।

শেষ কথা:

আপনি এখানে উল্লেখিত আইডিয়াগুলোর মধ্যে থেকে সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যবসাটি করা শুরু করুন এবং তা সফল করে তুলতে কঠোর পরিশ্রম করুন। আর ব্যবসার সব হিসাব নিখুঁত এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাখতে হিসাবপাতি অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন নিশ্চিন্তে। আমাদের শুভ কামনা রইলো আপনার নতুন পথ চলায়।

Search
সাম্প্রতিক পোস্টসমূহ
আজই আমাদের অ্যাপ ডাউনলোড করুন
অনলাইন বা অফলাইনে যেকোন জায়গা থেকে সহজেই আপনার দৈনন্দিন ব্যবসায়িক লেনদেন পরিচালনা করুন।