কিভাবে আপনার ব্যবসার জন্য ব্র্যান্ডিং তৈরী করবেন

ব্যবসার জন্য ব্র্যান্ডিং তৈরির পদ্ধতি

ব্র্যান্ডিং করা ছাড়া শুধু ব্যবসা করে আপনি কোন কাঙ্খিত ফল পাবেন না। ব্র্যান্ডিং আপনার ব্যবসার জন্য নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যদি একটি ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন, তবে আপনাকে অবশ্যই ব্র্যান্ডিং সম্পর্কে জানতে হবে। কিন্তু কিভাবে আপনার ব্যবসার জন্য ব্র্যান্ডিং তৈরি করবেন?

আপনার কি কোন স্পষ্ট ধারণা নেই? তাহলে বিস্তারিত ধারণা পেতে অনুগ্রহ করে এই আর্টিকেলটি পড়ুন। চলুন, প্রথমে  সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক একটি ব্র্যান্ড কি? 

ব্র্যান্ড কি?

ব্র্যান্ড হলো বাজারজাতকরণ বা ব্যবসার একটি ধারণা যা মানুষকে একজন ব্যক্তি, কোম্পানি, বা ব্যবসাকে চিনতে সাহায্য করে। এটা শুধুমাত্র একটি নাম বা লোগো নয়। ব্র্যান্ডগুলো আপনাকে আপনার পণ্য বা সেবা বা কোম্পানিকে আপনি যে শিল্পে ব্যবসা করছেন সেখানে অন্যদের থেকে আলাদা করতে সাহায্য করে। এগুলো আপনার পণ্য বা সেবা বা কোম্পানি সম্পর্কে ব্যক্তিগত ধারণা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। 

আপনি ব্র্যান্ডগুলোকে স্পর্শ করতে বা দেখতে পান না কারণ সেগুলো অস্পৃশ্য। যেমনটা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, নাম, লোগো, এবং এমনই অন্য কিছু ব্র্যান্ড নয় কিন্তু এগুলো ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ব্যবহৃত উপকরণ। ব্র্যান্ডগুলো আপনার প্রতিযোগীদের ওপরে একটি প্রযোগিতামূলক সুবিধা যোগ করে আপনার জন্য বাজারে একটি স্বতন্ত্র স্থান তৈরি করবে। আপনার ব্র্যান্ড হচ্ছে আপনার খ্যাতি। 

বর্তমানে, একটি বিশিষ্ট ব্র্যান্ডের অভিজ্ঞতা এবং যোগাযোগ প্রয়োগের সব ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যপূর্ণ বা নিয়মিত হওয়া প্রয়োজন যেমন:

  • পরিবেশ (অফিস বা দোকানের সামনে)
  • প্যাকেজিং, চিহ্ন, এবং মুদ্রণ সরঞ্জাম
  • কন্টেন্ট প্রকাশনা
  • ওয়েবসাইট এবং অনলাইন প্রকাশনা
  • গ্রাহক এবং বিক্রয় সেবা
  • অভ্যন্তরীণ সাইট (কর্মচারীদের সাথে)

ব্র্যান্ড নির্মাণ প্রক্রিয়া

ব্র্যান্ড তৈরি বলতে প্রচারণা এবং কৌশলের মাধ্যমে আপনার ব্যবসার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিকে বোঝায় যা আপনার বাজারের স্থানে ব্যবসার একটি একটি স্থায়ী এবং স্বতন্ত্র ছবি তৈরি করে আপনাকে আপনার প্রতিযোগীদের থেকে ভিন্ন করে তুলবে। সুতরাং, আপনি ব্র্যান্ড সাফল্যকে নিচের সমীকরণটির মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন:

ব্র্যান্ড সাফল্য= ইতিবাচক ছবি+ প্রতযোগিতামূলক সুবিধা

আপনি রাতারাতি আপনার ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারবেন না। এর জন্য অবশ্যই আপনার একটি উল্লেখযোগ্য সময় লাগবে। আপনি সম্পূর্ণ ব্র্যান্ড তৈরির প্রক্রিয়াটিকে নিম্নোল্লেখিত ধাপগুলোতে ভাগ করতে পারেন:

১. আপনার ব্র্যান্ডের উদ্দেশ্যটি চিহ্নিত করুন

২. আপনার ব্র্যান্ডের নির্ধারিত দর্শক বা শ্রোতা সনাক্ত করুন

৩. আপনার শিল্পের প্রতিযোগীদের নিয়ে গবেষণা করুন

৪. আপনার ব্র্যান্ডের দর্শণ এবং উদ্দেশ্য গঠন করুন

৫. আপনার ব্র্যান্ডের স্বতন্ত্র গূণাবলী এবং অফারগুলো প্রদর্শণ করুন

৬. আপনার ব্র্যান্ডের স্বতন্ত্র কন্ঠ গঠন করুন

৭. আপনার গ্রাহকদেরকে আপনার ব্র্যান্ডের অ্যামব্যাসেডরে পরিণত করুন

৮. আপনার ব্র্যান্ডের একটি গল্প তৈরি করুন

৯. ট্যাগলাইনসহ আপনার ব্র্যান্ডের লোগো তৈরি করুন

১০. সবকিছুতে মান বজায় রাখুন

১১. সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকুন

১২. প্রচারণার জন্য সঠিক মাধ্যম নির্বাচন করুন

১৩. পুরনো বাজারজাতকরণ কৌশল এবং মুদ্রণ বিজ্ঞাপণ ব্যবহার করুন

১৪. সাহসী হন

১৫. পর্যালোচনা এবং নিয়ন্ত্রণ করুন

চলুন, এবার বিস্তারিতভাবে উপরোল্লেখিত সব ধাপগুলো আলোচনা করা যাক। 

১. আপনার ব্র্যান্ডের উদ্দেশ্যটি চিহ্নিত করুন

সব নামী ব্র্যান্ডগুলোর ব্যবসা করার পেছনে একটি শক্তিশালী উদ্দেশ্য আছে। আপনি হয়তো একটি ছোট ব্যবসা চালাচ্ছেন কিন্তু আপনারও একটি উদ্দেশ্য থাকতে হবে। আপনি যদি না জানেন যে আপনার উদ্দেশ্য কি তবে আপনি আর সামনে এগুতে পারবেন না। যদি আপনার ব্র্যান্ডের উদ্দেশ্য জানতে চান তবে আপনাকে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হবে:

  • আপনার অস্তিত্বের উদ্দেশ্য কি?
  • কি আপনাকে পৃথক করে?
  • আপনি কি সমস্যা সমাধান করতে পারেন এবং কিভাবে?
  • আপনাকে মানুষ কেন পছন্দ করবে?

আপনি যদি এই সব প্রশ্নগুলোর উত্তর সঠিকভাবে দিতে পারেন, আপনার ব্র্যান্ডের উদ্দেশ্যটি সুস্পষ্ট হবে। যখন এটা করা হয়ে যাবে, আপনি সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন এবং কার্যকারী কন্টেন্টের মাধ্যমে আপনার দর্শক/শ্রোতাকে আপনার উদ্দেশ্য জানাতে পারবেন। যেমন, আপনি যদি টিকটকে আপনার ব্র্যান্ডের উদ্দেশ্য প্রচার করতে চান, তবে আপনি ছোট ভিডিও ব্যবহার করতে পারেন। গবেষণা দেখায় যে, ৫০% এর চেয়ে বেশী গ্রাহক ব্র্যান্ডের মান বা প্রভাবের ওপর ভিত্তি করে পণ্য ক্রয় করে।  

২. আপনার ব্র্যান্ডের নির্ধারিত দর্শক বা শ্রোতা সনাক্ত করুন

ধরা যাক, আপনার ব্র্যান্ডের একটি উদ্দেশ্য আছে কিন্তু আপনি জানেন না যে আপনার নির্ধারিত দর্শক বা শ্রোতা কে, তাহলে আপনি সঠিকভাবে উদ্দেশ্যটি পূরণ করতে পারবেন না। ব্যবসা করার সময়, প্রথমে, আপনাকে সনাক্ত করতে হবে যে আপনার নির্ধারিত দর্শক বা শ্রোতা কে হবে। কারণ আপনি সবার জন্য সবকিছু করতে পারবেন না, আপনার সবাইকে খুশি করার প্রয়াস কাউকেই খুশি করতে দেবে না। 

নিশ্চিত করুন যে, আপনি আপনার ব্র্যান্ডের মান অনুযায়ী একটি বড় জনগোষ্ঠীকে একটি ছোট নির্ধারিত দর্শক বা শ্রোতা গোষ্ঠীতে পরিণত করেছেন। এটি আপনাকে সহজেই আপনার নির্ধারিত দর্শক বা শ্রোতাকে মূল্য পরিশোধকারী গ্রাহকে পরিণত করার জন্য একটি কাস্টমাইজ্ড কৌশল গঠন করতে সাহায্য করবে। একটি ক্রেতা ব্যক্তিত্ব তৈরি করতে আপনাকে কিছু জনসংখ্যা বিষয়ক ব্যাপার যেমন বয়স, লিঙ্গ, অবস্থান, পেশা, আয় স্তর, পছন্দ, অপছন্দ, ‍এবং এমনই আরও অনেক কিছু বিবেচনায় আনতে হবে। এটা আপনাকে সঠিকভাবে আপনার নির্ধারিত দর্শক বা শ্রোতাকে নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে।  

৩. আপনার শিল্পের প্রতিযোগীদের নিয়ে গবেষণা করুন

এই ধাপটি এড়িয়ে যাবেন না কারণ এটা আপনাকে আপনার প্রতিযোগীদের শক্তিশালী দিক এবং দূর্বলতাগুলো জানতে সাহায্য করবে। আপনার লক্ষ্য তাদেরকে অনুকরণ করা না বরং তাদের ভুলগুলো থেকে শেখা এবং আপনার পণ্য বা সেবাগুলো তাদের থেকে ভিন্ন করে তোলা। প্রতিযোগীদের গবেষণার জন্য একটি স্প্রেডশীট তৈরির কথা বিবেচনায় আনুন। এজন্য এক্সেল শীট, গুগল শীট, বা একটি সাধারণ নোট বই ব্যবহার করুন। 

আপনি আপনার উল্লেখযোগ্য প্রতিযোগীদের যেমন আপনার শিল্পের ২-৪ জন প্রতিযোগীদের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন বার্তা এবং মূল্য, পণ্য/সেবার মান, রিভিউ এবং কমেন্ট বা উল্লেখ এবং মতামত, এবং বাজারজাতকরণ প্রচেষ্টাগুলো লিখে রাখতে পারেন। আপনার শিল্পে একটি পরিবর্তন আনার জন্য কোন কৌশল গঠনের সময় স্প্রেডশীটটির দিকে লক্ষ্য করুন। আপনার প্রতিযোগীদের ওয়েবসাইট এবং সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো থেকে অনুপ্রেরণা নিন। নিশ্চিত করুন যে আপনার একটি কার্যকারী ব্র্যান্ডের নাম আছে যা আকর্ষণীয়, সাধারণ, স্বতন্ত্র, এবং মনে রাখা সহজ। 

৪. আপনার ব্র্যান্ডের দর্শণ এবং উদ্দেশ্য গঠন করুন

এটা আপনার ব্যবসার ব্র্যান্ডিং করার ক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। দর্শণ হচ্ছে একটি ভবিষ্যৎ গন্তব্য যেখানে আপনার ব্যবসা ধরুন, আগামী দশ বছরে পৌঁছাতে চায়। আপনাকে কল্পনা করতে হবে যে, আপনি আপনার ব্যবসাকে আগামীতে বা এখন থেকে দশ বছর পর কোথায় দেখতে চান। যেখানে উদ্দেশ্য বলতে বোঝায় আপনার দর্শণ অর্জনের জন্য আপনি বর্তমানে যে কার্যাবলী করছেন বা পদক্ষেপগুলো নিচ্ছেন। যেমন, বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড নাইকের (Nike) মিশন স্টেমেন্ট বা উদ্দেশ্য বার্তা উল্লেখ করে, ” Just do it.” অর্থাৎ “শুধু এটা করুন।” তাদের দর্শণ হলো সর্বোচ্চ মানের জুতা প্রস্তুত করা। তাদের লক্ষ্য হলো প্রত্যেক ধরনের অ্যাথলেট বা ক্রীড়াবিদের উপর এবং তাদেরকে সেরা জুতা সরবরাহ করা। তারা ইউটিউব বাজারজাতকরণ এবং শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং-এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী একটি বিশাল গ্রাহকগোষ্ঠী গড়ে তুলেছে। 

আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত প্রত্যেকটি বিষয় যেমন বার্তা, ট্যাগলাইন, লোগো, এবং এমন আরও অনেক কিছু আপনার দর্শণ এবং উদ্দেশ্যে প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন। 

৫. আপনার ব্র্যান্ডের স্বতন্ত্র গূণাবলী এবং অফারগুলো প্রদর্শণ করুন

আপনি যখন আপনার ব্র্যান্ডটি তৈরি করতে চান, একটি প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা গঠনের ওপর মনোনিবেশ করুন অর্থাৎ বিশেষ কিছু যা আপনার প্রতিযোগীরা দিচ্ছেন না। আপনার পণ্য এবং/বা সেবাগুলো এবং স্বতন্ত্র গুণাবলী ও সুবিধাগুলো যা শুধু আপনি দিচ্ছেন সেসব বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করুন । সেগুলো প্রদর্শণ করুন এবং একারণে আপনার নির্ধারিত দর্শক বা শ্রোতাদেরকে আপনার ব্যবসার সাথে সংযুক্ত করুন। যত্নের সাথে চিন্তা করুন কিভাবে আপনি আপনার গ্রাহকদের জীবন আরও সহজ করবেন এবং তাতে মূল্য যোগ করবেন। 

কিছু উদাহরণ হতে পারে: 

  •  খাঁটি এবং সহযোগিতামূলক গ্রাহক সেবা
  • আকর্ষণীয় অফার
  • সুন্দর এবং উপকারী উপহার
  • ছাড়
  • আরও সাশ্রয়ী পছন্দ
  • আপনার দৈনন্দিন কাজে সময় বাঁচায়

৬. আপনার ব্র্যান্ডের স্বতন্ত্র কন্ঠ গঠন করুন

আপনার ব্র্যান্ড তৈরির সময় আপনার স্বতন্ত্র কন্ঠ গঠন করুন কারণ এটা আর একটি বিষয় যা আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করবে। একটি ব্র্যান্ডের কন্ঠ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন, প্রচারণামূলক, বন্ধুত্বপূর্ণ, কর্তৃত্বপূর্ণ, পেশাদার, সেবামূলক, কথোপকথনমূলক, কারিগরীমূলক, এবং তথ্যমূলক। উদাহরণস্বরূপ, আত্মসেবা এবং সৌন্দর্য্য ব্র্যান্ড ডাভের ( Dove) একটি শক্তিশালী এবং উদ্দীপণামূলক ব্র্যান্ড কন্ঠ আছে যা গ্রাহতদেরকে ভেতরের সৌন্দর্য্যকে লালন করার জন্য উজ্জীবিত করে। 

একটি বিষয় যা আপনাকে মনে রাখতে হবে তা হলো “আপনার ব্র্যান্ডের কন্ঠের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখুন।” যে কন্ঠটি আপনি ব্যবহার করবেন সেটা সব জায়গায় সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে, যেমন বিজ্ঞাপণ, মুদ্রণ মাধ্যম, সামাজিক মাধ্যম, এবং এমন আরও অনেক স্থানে। এই কন্ঠটি আপনার শিল্প, গ্রাহক, এবং আপনার ব্যবসার উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে।

৭. আপনার গ্রাহকদেরকে আপনার ব্র্যান্ডের অ্যামব্যাসেডরে পরিণত করুন

আপনার গ্রাহকদেরকে শুধুই আপনার নিয়মিত ক্রেতা ভাববেন না, বরং আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টান এবং তাদেরকে আপনার ব্র্যান্ড অ্যামব্যাসেডর হিসেবে দেখুন। কারণ তাদের প্রত্যেকেই আপনার ব্র্যান্ডের চলমান প্রতিনিধি হবেন। তাই তাদেরকে শুধু সন্তুষ্ট এবং খুশিই রাখবেন না, বরং তাদের সাথে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও গড়ে তুলবেন। নিশ্চিত করুন যে, আপনি সবসময় আপনার গ্রাহকদেরকে বিশেষ ছাড়, অফার, লয়াল্টি প্রোগ্রাম, উপহার, প্রভৃতি দিয়ে আপনার সেবা বারবার নিতে উদ্বুদ্ধ করছেন। 

সাধারণত, গ্রাহকরা একটি ক্লাবের অংশ হতে পছন্দ করেন এবং তাদের কাজের জন্য স্বীকৃতি পেতে পছন্দ করেন, সেটা কেবল একটি ক্রয়ই হোক না কেনো। 

৮. আপনার ব্র্যান্ডের একটি গল্প তৈরি করুন

আপনার নির্ধারিত দর্শক বা শ্রোতাদেরকে আপনার পরিচয় কি, এবং কিভাবে আপনি আপনার যাত্রা শুরু করেছেন তা বলুন। এখানে আপনি আপনার ব্র্যান্ডের স্বতন্ত্র কন্ঠটি ব্যবহার করুন এবং একে স্বতন্ত্রভাবে আপনার ব্র্যান্ডের সাথে সম্পর্কিত করুন। যদি লেখা আপনার আবেগ হয় এবং আপনি একজন স্বতন্ত্র গল্পকার হন, তবে আপনি একটি কন্টেন্ট লেখার সেবাও শুরু করতে পারেন, এটা শুধুই আমাদের পক্ষ থেকে একটি ব্যবসার ধারণা। আপনার ব্র্যান্ডের গল্প তৈরি করা বলতে এখানে বোঝায়, আপনি এখন ব্র্যান্ড তৈরির সেই পর্যায়ে আছেন যেখানে আপনি আপনার দর্শক বা শ্রোতাদেরকে আপনার লোগো বা ট্যাগলাইনের থেকে বেশি কিছু বলবেন।                          

৯. ট্যাগলাইনসহ আপনার ব্র্যান্ডের লোগো তৈরি করুন

যখনই আপনি ব্র্যান্ডিংয়ের কথা ভাববেন, স্বভাবতই, আপনার মাথায় প্রথমে ভিজ্যুয়ালের কথা আসবে। আপনাকে একটি লোগো তৈরি করতে হবে যা খাঁটি, সহজ, এবং স্বতন্ত্র। দর্শকরা যেন সহজেই এটা চিনতে পারে। এই লোগোটি আপনার ব্র্যান্ডটিকে উপস্থাপনের জন্য আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত সবকিছুর উপর দৃশ্যমান হবে, তাই, এটাকে হতে হবে মনোগ্রাহী, এবং দৃষ্টিনন্দন।

কিছু জনপ্রিয় ধরনের লোগো হলো:

  • লোগোটাইপস: Google, Coca-Cola, Casper
  • অ্যাবস্ট্রাক্ট লোগোস: Adidas, BP, Pepsi
  • লোগো সিম্বলস্: Shell, Apple, Target
  • মনোগ্রামস্: NASA, CBS, HBO
  • এমব্লেমস্:BMW, Starbucks, Warner Bros
  • ম্যাস্কট লোগোস: KFC, Pringles, Wendy’s

আপনাকে একটি অর্থপূর্ণ ট্যাগলাইন লেখাসহ একটি লোগোও তৈরি করতে হবে। আপনি সময় নিয়ে গবেষণা করুন এবং একটি ট্যাগলাইন তৈরি করুন যা আপনার দর্শক ও শ্রোতারা সহজেই মনে রাখতে পারবে । ব্র্যান্ডিং প্রক্রিয়ায় লোগো, ট্যাগলাইন, গ্রাফিক্স, এবং টাইপোগ্রাফি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে, সেজন্য নিশ্চিত করুন যে আপনার কাজটি যেন বিস্ময়কর হয়!

১০. সবকিছুতে মান বজায় রাখুন

আপনি যদি আপনার ব্র্যান্ডটিকে অসাধারণ করতে চান, তবে আপনাকে মানের ওপর আলোকপাত করতে হবে। কারণ দিন শেষে, মানুষ আপনার সেবা বা পণ্যের মানের কারণেই আপনার ব্র্যান্ডটিকে মনে রাখবে। আপনাকে এমন একটি মান দিতে হবে যাতে আপনি গর্ব করতে পারেন। আপনার পণ্যের মান এর দামের সাথে মানানসই হতে হবে। 

আপনার গ্রাহকদেরকে চমৎকার সব অফার দিয়ে সন্তুষ্ট করুন যাতে তারা আপনার সেবা নিতে বা আপনার পণ্য কিনতে বারবার আপনার কাছে আসে। আপনার পণ্য বা সেবাটি ভিন্ন হওয়া উচিত এবং অসংখ্য খারাপ বা মধ্যম মানের পণ্যের সমাহারের মাঝে যেন একটি সতেজ হাওয়ার মতো হয়। 

১১. সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকুন

আপনি আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে যাই করুন না কেনো তাতে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকুন। অর্থাৎ আপনার একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্র্যান্ড কৌশল থাকতে হবে। আপনার প্রচারণাগুলোর সব জায়গায় একই বার্তা বহন করা উচিত। অর্থাৎ আপনার ওয়েবসাইটে এবং অন্যান্য বাজারজাতকরণ মাধ্যমে যেমন ইমেইল বাজারজাতকরণ, এসএমএস মার্কেটিং, এবং সামাজিক মাধ্যম যেমন ফেইসবুক, ইন্সটাগ্রাম, এবং এমন অন্যান্য মাধ্যম। 

বিশেষ করে, একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে, আপনি লোগো, ট্যাগলাইন, বা বার্তার মতো জিনিসগুলোতে বারবার পরিবর্তন আনতে পারেন না। কারণ সেক্ষেত্রে, মানুষের আপনার ব্র্যান্ডকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে, এবং তারা এই ঘনঘন পরিবর্তনকে দূর্বলতার চিহ্ন হিসেবে ধরে নেবে। সেজন্য, আপনাকে আত্মবিশ্বাসী এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। 

১২. প্রচারণার জন্য সঠিক মাধ্যম নির্বাচন করুন

অসংখ্য ডিজিটাল মার্কেটিং মাধ্যমের মধ্যে থেকে সঠিক মাধ্যমটি বেছে নেয়াটা বেশ কৌশলী একটি কাজ। আপনাকে আপনার নির্ধারিত দর্শক বা শ্রোতাদের নিয়ে গবেষণা করতে হবে যে তারা কোন মাধ্যমগুলো ব্যবহার করতে বেশি অভ্যস্ত , এবং সেই মাধ্যমটিকে আপনার ব্র্যান্ডের প্রচারণার জন্য ব্যবহার করতে হবে। সেই মাধ্যমগুেলোকে ব্যবহার করুন যেগুলো সবচেয়ে বেশী সাশ্রয়ী। নিম্নোল্লেখিতগুলো সবচেয়ে প্রচলিত ডিজিটাল বাজারজাতকরণ মাধ্যম: 

ইমেইল মার্কেটিং:

এটা ছোট ব্যবসাগুলোর ব্র্যান্ড পরিচিতি গড়ে তোলার জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী মাধ্যমগুলোর মধ্যে অন্যতম। আপনাকে শুধু আপনার সম্ভাব্য গ্রাহক এবং গ্রাহকদের একটি ইমেইল তালিকা তৈরি করতে হবে। আপনি ইমেইলগুলো হাতে পাঠাতে  বা কোন স্বয়ংক্রিয় প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেন যেমন মেইলচিম্প বা মুসেন্ড। আপনার দর্শক বা পাঠককে  ব্যক্তিগত এবং প্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট দিয়ে আকৃষ্ট করুন। 

আপনি প্রতি ১ টাকা বিনিয়োগের জন্য একটি আনুমানিক ৪২ টাকার রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট আয় করতে পারবেন। 

সামাজিক মাধ্যম বাজারজাতকরণ:

সামাজিক মাধ্যমগুলোকে আপনার ব্র্যান্ডের প্রচারণার জন্য ব্যবহার করুন কারণ এখন মানুষ তাদের সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সামাজিক মাধ্যমেই ব্যয় করে। সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যমগুলো হলো ফেইসবুক, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম, টিকটক, ট্যুইটার, লিংক্ডইন, এবং পিন্টারেস্ট। এটার জন্যও একটা গবেষণার প্রয়োজন আছে কারণ আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে যে, আপনার নির্ধারিত দর্শক কোন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে অভ্যস্ত এবং কখন। তারপর, সে অনুযায়ী আপনার মিডিয়া পোস্ট এবং বিজ্ঞাপণ প্রস্তুত করুন। 

সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (এসইও):

এসইও হলো সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পৃষ্ঠায় আপনার ব্যবসায়িক পৃষ্ঠার উচ্চ অবস্থানের মাধ্যমে সম্ভাব্য গ্রাহক পাওয়ার একটি উপযুক্ত কৌশল । এখানে, অন-পেইজ এসইও প্রয়োজনীয় কন্টেন্ট এবং আকর্ষণীয় ওয়েবসাইট ডিজাইনের মাধ্যমে আপনাকে আপনার ওয়েবসাইটে দর্শক পেতে সাহায্য করে। অফ-পেইজ এসইও হচ্ছে সেসব কিছু যা আপনি আপনার সাইটের বাহিরে করে থাকেন যেমন ব্যাকলিংকিং। এসইও আপনাকে আপনার ডিজিটাল উপস্থিতি অপ্টিমাইজেশনের মাধ্যমে আপনার ব্র্যান্ডিংয়ে সাহায্য করবে। 

কন্টেন্ট বাজারজাতকরণ:

কন্টেন্ট বাজারজাতকরণও আপনাকে আপনার ব্র্যান্ডের প্রচারণায় সাহায্য করবে। আপনাকে আপনার পাঠকদেরকে কন্টেন্ট দিতে হবে যা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয় যাতে তারা তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারেন এবং আপনার ব্র্যান্ডকে সহায়ক হিসেবে পায়। আপনার কন্টেন্টের মধ্যে থাকতে পারে ব্লগ, ওয়েবিনার, ই-বই, অনলাইন টিউটোরিয়াল, পডকাস্ট, এবং ইন্ফোগ্রাফিক্স। 

ভিডিও বাজারজাতকরণ:

ভিডিও বাজারজাতকরণ বর্তমানে প্রচন্ড জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বিশেষ করে, ছোট ভিডিওগুলো তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তাই, যদি তরুণ প্রজন্ম আপনার নির্ধারিত দর্শক হয়, তবে আপনার ব্র্যান্ডের প্রচারণার জন্য টিকটক, ফেইসবুক, এবং ইউটিউবের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ছোট ভিডিও ব্যবহার করুন ।

প্যে-পার-ক্লিক (পিপিসি):

পিপিসি বিজ্ঞাপণগুলো বা সার্চ বিজ্ঞাপণগুলো আপনার ব্র্যান্ডের প্রচারণার একটি উপায় যেখানে আপনাকে শুধু সেসব মানুষদেরকে টাকা দিতে হবে যারা আপনার বিজ্ঞাপণগুলোতে ক্লিক করেছেন । পিপিসি বিজ্ঞাপণগুলোতে বিস্তারিত কী-ওয়ার্ড গবেষণা এবং বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। গুগল্ কী-ওয়ার্ড প্ল্যানার, এবং গুগল্ অ্যাডসের মতো অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে আপনি কী-ওয়ার্ড গবেষণা করতে পারেন।

১৩. পুরনো বাজারজাতকরণ কৌশল এবং মুদ্রণ বিজ্ঞাপণ ব্যবহার করুন

আপনি কিছু পুরনো বাজারজাতকরণ পদ্ধতি এবং মুদ্রণ বিজ্ঞাপণ ব্যবহার করে আপনার ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারেন। আপনি ভাবতে পারেন যে, এগুলো অপ্রচলিত হয়ে গিয়েছে, কিন্তু এগুলোও উপকারী হতে পারে কারণ মানুষের সবসময় ইন্টারনেট সংযোগ নাও থাকতে পারে। আপনি আপনার সেবা, পণ্য, ছাড়, এবং অফারগুলো সম্পর্কে জানাতে ফোন কল, এসএমএস মার্কেটিং, এসএমএস রিমাইন্ডার, এবং এসএমএস নোটিফিকেশন ব্যবহার করতে পারেন। 

মুদ্রণ বিজ্ঞাপণও আপনার ব্র্যান্ড তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। কারণ উপহার পেতে কেনা পছন্দ করে? তাই, আপনার লোগো প্রিন্ট করান মগ, কলম, নোটখাতা, নোটবই, ইউএসবি, এবং এমনি আরও অনেক কিছুতে এ ধরনের উপহার মানুষকে আপনার ব্র্যান্ডের কথা মনে করিয়ে দেবে, এবং তারা আপনার পণ্য বা সেবা পাওয়ার জন্য আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারে। 

১৪. সাহসী হন

যদি আপনার পণ্যের মান প্রশংসনীয় হয়, তবে তা আপনাকে অবশ্যই দূরে নিয়ে যাবে। একইভাবে, যদি আপনি আপনার পণ্যের মান প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সাহসী হন, তবে তা আপনাকে আরও দূরে নিয়ে যাবে। অর্থাৎ আপনাকে আপনার পণ্যের মান সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে এবং এ সম্পর্কে আপনার গ্রাহককে আপনার ব্র্যান্ডের স্বতন্ত্র কন্ঠে সোজাসুজি বলতে হবে । 

১৫. পর্যালোচনা এবং নিয়ন্ত্রণ করুন

ব্র্যান্ড তৈরির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিতে কোন ত্রুটি আছে কিনা খুঁজে বের করতে  বারবার পর্যালোচনা করুন এবং সংশোধনী পদক্ষেপগুলো নেন। এটা আপনাকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সাহায্য করবে কারণ তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতির এই যুগে সবকিছু খুব দ্রুত পাল্টায়, এবং আপনাকেও সেই পরিবর্তনগুলোর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। 

ওপরের আলোচনা এবং ব্র্যান্ড তৈরির উদাহরণগুলো থেকে, আপনি নিশ্চয়ই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়েছেন:

  • কিভাবে একটি ব্র্যান্ড তৈরি করবেন?
  • কিভাবে আপনার ব্যবসার ব্র্যান্ড করবেন?
  • কিভাবে একটি ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করবেন?
  • কিভাবে একটি ব্র্যান্ড পরিচিতি গড়ে তুলবেন?
  • কিভাবে আপনার ব্যবসার লোগোর ব্র্যান্ডিং করবেন?

শেষ কথা:

এখন, আপনি নিশ্চয়ই  কিভাবে আপনার ব্যবসার জন্য ব্র্যান্ডিং তৈরি করবেন সে বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। তাই, এই প্রক্রিয়া নিয়ে দ্রুত কাজ করা শুরু করুন, এবং আপনার ব্যবসার সব হিসাব রাখতে হিসাবপাতি অ্যাপটি ব্যবহার করে আপনার ব্যবসাটিকে আপনার প্রতিযোগীদের থেকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যান। 

Search
সাম্প্রতিক পোস্টসমূহ
আজই আমাদের অ্যাপ ডাউনলোড করুন
অনলাইন বা অফলাইনে যেকোন জায়গা থেকে সহজেই আপনার দৈনন্দিন ব্যবসায়িক লেনদেন পরিচালনা করুন।