আপনি কি নতুুন কোনো উদ্যোগ বা স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী? বাংলাদেশে শুরু করা যায় এমন ছোট ব্যবসার আইডিয়া খুঁজছেন? মাথায় বিভিন্ন বিজনেস আইডিয়া ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু কোন সেক্টর নিয়ে ব্যবসা করবেন বুঝতে পারছেন না? তাহলে শান্ত হয়ে বসে ছোট্ট এই লেখাটি পড়ুন!
- রাতারাতি কোটিপতি বনে যাবেন!
- স্বপ্ন পূরণ হবেই!
- নিশ্চিত সফলতা আসবে!
ইত্যাদি আবোল-তাবোল কথা কিংবা লোভনীয় শর্টকাটে কান না দিয়ে কাজের আলোচনায় ৫ মিনিট ব্যয় করুন। হুটহাট আপনার টাকা, শ্রম ও মেধা বিনিয়োগ করার আগে সঠিক বিজনেস সেক্টরগুলো জেনে নিন। এমন ৫টি ছোট ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জানুন, যেগুলো নিয়ে বাংলাদেশে কাজ শুরু করলেই বাজিমাত করতে পারবেন!
আজকের আলোচনায় আমরা এমন ৪টি বিজনেস সেক্টর তুলে ধরবো, যেগুলো নিয়ে কাজ করলে আপনার সফল হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। বাংলাদেশে শুরু করার জন্য ৪টি ছোট ব্যবসার আইডিয়া।
ব্লগে যা থাকছে-
আপনি একজন নতুন উদ্যোক্তা হন কিংবা অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী, ব্যবসা শুরু করার সময় আপনাকে অবশ্যই আটঘাট বেঁধেই মাঠে নামতে হবে! আর তারই অংশ হিসেবে নতুন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কিছুটা ভাবনা চিন্তা করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে এটা একটা বড় সুবিধা। আপনি আগে থেকেই আপনার বিজনেস আইডিয়া এবং যে সেক্টর নিয়ে ব্যবসা করতে চান তা যাচাই বাছাই করতে পারবেন।
আমরা আজকে ৪টি সম্ভাবনাময় বিজনেস সেক্টর এবং ছোট ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করবো। যেখান থেকে চাইলেই আপনি যেকোন একটি বাছাই করতে পারেন-
০১. হ্যান্ডিক্রাফট বা হস্তশিল্প নিয়ে ই-কমার্স ব্যবসা
হ্যান্ডিক্রাফট বা হস্তশিল্প নিয়ে ই-কমার্স/অনলাইন ব্যবসা এখন খুব জনপ্রিয়। বিশেষ করে, একটু অপ্রচলিত কারুপণ্য বা ভিন্নধর্মী আইডিয়া নিয়ে কাজ করলে সফল হওয়া যায় তাড়াতাড়ি। এটি ছোট ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে খুবই ভালো। কারণ, এই সেক্টরে আপনি খুবই অল্প পুঁজি এবং প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামতে পারবেন! তারপর কাজ করতে করতে শিখতে পারবেন। নির্দিষ্ট পণ্য ও পণ্যের উৎস খুঁজে বের করতে পারলে আপনি যেকোন সময় ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
ছোট ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে কেন সম্ভাবনাময়?
- নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শৌখিন পণ্য কেনাকাটায় শহুরে মানুষ এখন অনলাইন বা ই-কমার্স এ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। তাই কিছুটা ভিন্নধর্মী আইডিয়া নিয়ে তাদের সামনে আসতে পারলেই ব্যবসায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
- বাঙালির একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে। তাই ঐতিহ্যবাহী যেকোনো পণ্যের প্রতি মানুষের আলাদা টান আছে। এগুলোকে একটু ভিন্নভাবে মানুষের হাতের নাগালে পৌঁচ্ছে দিতে হবে। বর্তমানে দেশে এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই ঐতিহ্যবাহী পণ্যের একটি বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে।
- বাংলাদেশের ই-কমার্স বাজার দ্রুত বড় আকার ধারণ করছে। ২০২৬ সাল নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ৫০ কোটি ডলারে। তথ্যসূত্র- সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)
- তাছাড়া অনলাইন ব্যবসার জন্য শুধু ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম আছে তা তো নয়! ফেসবুক এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আপনি আপনার পণ্যের বিশাল কাস্টমার লিস্ট তৈরি করতে পারবেন।
০২. ঐতিহ্যবাহী এবং বাসায় বানানো খাবারের হোম ডেলিভারি ব্যবসা
চট্টগ্রামের মেজবানের স্বাদ এখন আপনার শহরে! অর্ডার করলেই হোম ডেলিভারি! কিংবা, লাল চিংড়ির শুঁটকি ভর্তা বা জয়পুরহাটের লতিরাজ কচুর তরকারির স্বাদ পেতে অর্ডার করুন।
বাসায় বানানো খাবার বা হোমমেড খাবারের এমন অনেক বিজ্ঞাপন আমাদের চোখে পড়ে। ছোট ব্যবসার আইডিয়া বা নতুন ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে এগুলো এখন অনেক জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। একটু ভিন্ন বিজনেস আইডিয়া নিয়ে কাস্টমারের কাছে পৌঁছাতে পারলেই এই ব্যবসায় সফলতা আসবেই। সফলতার অনেক উদাহরণও ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। দেশ-বিদেশের ঐতিহ্যবাহী খাদ্যপণ্য এবং বাসায় বানানো খাবারের অনলাইন ফুড ডেলিভারি ব্যবসা শুরু করার সময় এটা।
কেনো ছোট ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে সম্ভাবনাময়?
- আমরা বাঙালিরা চিরকালই ভোজনরসিক! লক্ষ্য করলেই দেখবেন, পছন্দের খাবারটি সহজ কোন উপায়ে সামনে চলে আসলেই সেটাকে সাদরে গ্রহণ করা হয়। তাই হোমমেড খাবার বা খাঁটি খাদ্যপণ্য গ্রাহকদের দোরগোড়ায় পৌঁচ্ছে দেয়ার অনলাইন ফুড ডেলিভারি ব্যবসা নিশ্চিন্তে শুরু করতে পারেন।
- শহুরে জীবনের ব্যস্ততা সবসময়ই কিছু নতুন পেশার জন্ম দেয়। এদের মধ্যে অনলাইন ফুড ডেলিভারি নতুন বিজনেস আইডিয়া হিসেবে চমৎকার! কারণ, মানুষ তার পছন্দের সময়ে পছন্দের খাবারটি খেতে চায়।
- অনলাইন ফুড ডেলিভারি ব্যবসার বাজার দিনকে দিন বাড়ছে।
- বর্তমানে স্থানীয় হোটেল বা রেস্তোরাঁর সাথে চুক্তি করেও অনেকে অনলাইন ফুড ডেলিভারি ব্যবসা চালাচ্ছেন।
- অল্প পুঁজিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করেই এই ছোট ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করা যায়।
০৩. মোবাইল সার্ভিসিং এবং যন্ত্রাংশের ব্যবসা
যতো দিন যাচ্ছে, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন পৌঁচ্ছে যাচ্ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্মার্টফোন ব্যবহারের হার। ফলাফল হিসেবে মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার এবং মোবাইল যন্ত্রাংশের চাহিদাও বাড়ছে।এই সেক্টরে কাজ বা ব্যবসার কোন অভাব নেই। কারণ, যতো দিন যাচ্ছে মানুষ আরও মোবাইল ভিত্তিক সেবায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।
তাই মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার এবং মোবাইল যন্ত্রাংশের ব্যবসা ছোট ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে খুবই লাভজনক। আপনি চাইলে নিজেই মোবাইল সার্ভিসিং কোর্স করে ব্যবসার চালাতে পারেন। এতে করে লাভের পরিমান আরও বাড়বে!
ছোট ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে কেন সম্ভাবনাময়?
- মোবাইল যন্ত্রাংশের ব্যবসায় লাভের পরিমান বেশি।
- মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার ও যন্ত্রাংশের ব্যবসা একসাথে করা যায়।
- এই ব্যবসায় আপনার দক্ষতা এবং ব্যবহার দিয়ে আপনি নিজের কাস্টমার তৈরি করতে পারবেন।
- এই বিজনেস আইডিয়ার বড় একটি সুবিধা হলো এটাতে বাকি বকেয়ার পরিমান খুব কম!
- নতুন ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে প্রাথমিক খরচ কিছুটা বেশি মনে হলেও এটার লাভের পরিমান বেশ ভালো।
০৪. অনলাইন প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করে ব্যবসা
আপনি ভালো ইংরেজি বা গণিত পারেন। ভালো গিটার বাজাতে পারেন বা ভালো গাইতে, রান্না করতে বা আঁকতে পারেন। আবার অনেকে ভালো ডিজিটাল মার্কেটিং পারেন বা ভিডিও এডিটিং পারেন। মানে আপনার এমন কোন দক্ষতা আছে যেটার চাহিদা আছে। তাহলেই আপনি অনলাইন প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করে ব্যবসা করতে পারবেন। বর্তমান সময়ে ছোট ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে এমন বুদ্ধিবৃত্তিক ও সৃজনশীল দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করা খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আপনি ফেসবুকে খোঁজ করলেই দেখবেন হাজারো দক্ষ মানুষ তাদের স্কিল বা দক্ষতাকে কোর্স আকারে বিক্রি করছে। এতে করে যেমন ব্যবসা হচ্ছে তেমনি নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে।
নতুন ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে কেন সম্ভাবনাময়?
- এই ছোট ব্যবসার আইডিয়া বা নতুন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করতে তেমন কোন আর্থিক পুঁজির প্রয়োজন পড়ে না।
- বর্তমান বিশ্বে নতুন স্কিল বা দক্ষতা অর্জনের জন্য মানুষ খরচ করতে আগ্রহী। আপনার কাজ হবে তাদের সামনে নিজেকে নিয়ে আসা!
- আপনি ঘরে বসেই এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
- এই ব্যবসার বাজার বাংলাদেশে দ্রুত গতিতে বাড়ছে। অনেক অনলাইন প্রশিক্ষক সফলতার সাথে এই পেশায় নিয়োজিত আছেন।
- ভালোভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে নিজস্ব ট্রেনিং সেন্টার চালু করে ব্যবসাকে নতুন উচ্চতায় নিতে পারবেন।
যে ব্যবসাই শুরু করুন, কিছু বিষয়ে অবহেলা করা যাবে না
ব্যবসার শুরু থেকেই আয় ব্যয়ের হিসাব রাখুন
ব্যবসা মানেই হিসাবের খেলা! তাই ব্যবসা করলে হিসাব নিকাশে অভ্যস্ত হতে হবে। নতুন ব্যবসা বা ছোট ব্যবসার আইডিয়া নির্বাচন করা হয়ে গেলেই ব্যবসার হিসাব রাখার জন্য একাউন্টিং টুল নির্বাচন করতে হবে। এজন্য সহজ ও সাশ্রয়ী একটি অ্যাকাউন্টিং টুল নির্বাচন করুন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী হিসাব রাখার সফটওয়্যার হিসবাপাতি ব্যবহার করতে পারেন। হিসাবপাতি অ্যাপে ব্যবসার আয় ব্যয়ের হিসাব, স্টক ম্যানেজমেন্ট, বাকি বকেয়ার হিসাব, ইনভয়েস তৈরি ইত্যাদি সকল সাপোর্ট পেয়ে যাবেন।
ব্যবসা পরিচালনার সকল সাপোর্ট পেতে ফ্রিতে ডাউনলোড করুন হিসাবপাতি অ্যাপ। প্রথমে ফ্রিতে বেসিক প্যাকেজটি ব্যবহার করে দেখুন। কাজের মনে হলে, নামমাত্র মূলে পেইড প্যাকেজের সাবস্ক্রিপশন কিনে নেবেন।
বিজনেস নেটওয়ার্কিং শুরু করুন
যতই ছোট ব্যবসার আইডিয়া হোক, বিজনেস নেটওয়ার্কিং কিন্তু জরুরি। তাই শুরু থেকেই ব্যবসার সাথে জড়িত মানুষের সাথে চলাফেরা করুন। তাদের সাথে যোগাযোগ বাড়ান। কীভাবে এই কাজটি করবেন তা জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন- উদ্যোক্তাদের জন্য নেটওয়ার্কিং: কী, কেন এবং কীভাবে করবেন?
প্রথমে নিজে ব্যবসাটি বুঝুন তারপর কর্মী নিয়োগ দিন
ব্যবসার শুরুতেই নিজে ব্যবসাটি না বুঝে কর্মী নিয়োগ দেয়াটা বোকামি হবে। তাই আগে নিজে ভালোভাবে ব্যবসাটি বুঝতে হবে তারপর প্রয়োজনে কর্মী নিয়োগ দিতে হবে।
ব্যবসা বাড়লেই কর্মী ব্যবস্থাপনা অ্যাপ ব্যবহার করুন
যখন ব্যবসা কিছুটা বাড়বে, তখন স্বাভাবিকভাবেই কর্মী নিয়োগ বা টিম গঠনের প্রয়োজন পড়বে। এ সময় কর্মী ব্যবস্থাপনার জন্য অবশ্যই ডিজিটাল টুল ব্যবহার করবেন। এমন একটি অ্যাপ বাছাই করবেন যেটাতে কর্মীদের টাইম ট্র্যাকিং, শিফট প্ল্যান, ছুটি ব্যবস্থাপনা, পে-রোল, ডকুমেন্ট ভল্টসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা পাওয়া যায়।
এমপ্লয়ি ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ হিসেবে নির্বাচন করুন- হাজিরা। কারণ, এই সকল সুবিধা সহ সাশ্রয়ী দামে হাজিরা-ই সেরা। হাজিরা অ্যাপটি ফ্রিতে ডাউনলোড করুন। আরও বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন- ছোট ব্যবসার জন্য এমপ্লয়ি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার : হাজিরা
পরিশ্রমের বিকল্প নেই!
যে কাজেই সফল হতে চান, পরিশ্রমের বিকল্প নেই। তাই ব্যবসায় সফল হতে শুরু থেকেই পরিশ্রম করুন। এতে দ্রুত সফলতা ধরা দেবে।