বিক্রয় বৃদ্ধির কৌশল, নিয়ম এবং উপায়গুলো জেনে রাখুন

বিক্রয় বৃদ্ধির কৌশল, নিয়ম এবং উপায় গুলো জেনে রাখুন

আপনি যে ব্যবসাই করুন না কেনো, আপনাকে কিছু না কিছু তো বিক্রি করতেই হবে। হোক তা কোন পণ্য, সেবা , মূল্যবান ও সহায়ক কিছু তথ্য। আপনাকে আপনার ব্যবসার নির্ধারিত গ্রাহক খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদের কাছে আপনার ব্যবসার পণ্য, সেবা বা তথ্য বিক্রি করতে হবে। শুধু বিক্রি করলেই তো আর হবে না, ব্যবসার লাভের জন্য এবং ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে বিক্রয় বৃদ্ধিও করতে হবে। কিন্তু কিভাবে?

হ্যাঁ, আমরা এখানে সেই প্রশ্নেরই উত্তর দিবো। বিস্তারিতভাবে বিক্রয় বৃদ্ধির কৌশল, নিয়ম এবং উপায়গুলো জেনে রাখুন  আমাদের এই আর্টিকেল থেকে।

সেলস বৃদ্ধির কিছু উপায়সমূহ

আসুন, আমরা সরাসরি আমাদের আলোচনায় চলে যাই এবং এক নজরে দেখে নেই বিক্রয়  বাড়ানোর কৌশল, নিয়ম বা উপায়গুলো:

১. আপনার বিক্রয় বিভাগ, দল বা প্রতিনিধিদের এবং কোম্পানির অন্যান্যদের সাথে আলোচনা করুন
২. একটি শক্তিশালী বাজারজাতকরণ প্রচারণার পরিকল্পনা তৈরী করুন
৩. সম্ভাব্য গ্রাহকদের সংখ্যা বৃদ্ধি করুন
৪. নতুন এবং বিদ্যমান গ্রাহকদের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলুন
৫. গ্রাহকদের সুবিধাগুলোকে লক্ষণীয় করে তুলুন
৬. আপনার পণ্য বা সেবাটিকে কার্যকর ভাবে উপস্থাপন করুন
৭. নিজের উন্নয়নে বিনিয়োগ করুন
৮. বিক্রয় এবং বাজারজাতকরণের মধ্যে সমন্বয় সাধন করুন
৯. বিক্রয় কমিশন বা প্রণোদনা প্রদান
১০. বিক্রয় গতিবেগের প্রতি মনোনিবেশ করুন
১১. সময় ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দিন
১২. শীর্ষ গ্রাহকদের প্রতি  মনোযোগী হোন
১৩. নতুন গ্রাহক খুঁজুন
১৪. শীর্ষ ক্রয়কারী এলাকা নির্ধারণ করুন
১৫. একটি বিক্রয় আউটসোর্সিং কোম্পানির সাথে কাজ করতে পারেন

এবার প্রত্যেকটি নিয়ম বা উপায় আলোচনা করা যাক।

১.আপনার বিক্রয় বিভাগ, দল বা প্রতিনিধিদের এবং কোম্পানির অন্যান্যদের সাথে আলোচনা করুন

আপনার বিক্রয় বিভাগ, দল বা প্রতিনিধিদের সাথে বিক্রয় বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে আলোচনা করুন। অনেকে আবার বিক্রয় এবং রাজস্ব এই দু’টি বিষয় গুলিয়ে ফেলেন। আসলে বিক্রয় হলো আপনি কয়টি পণ্য বিক্রয় করেছেন বা কয়জন গ্রাহকের কাছে আপনার সেবা বিক্রয় হয়েছে তার হিসাব। আর রাজস্ব বলতে আপনি পণ্য বা সেবা বিক্রয় করে যে টাকা আয় করেন সেটাকে বোঝায়।
আবার রাজস্বকে লাভ বা মুনাফাও বলা হয়। একবার যদি ধারণাটি পরিষ্কার হয়ে যায় তবে আপনার বিক্রয় বিভাগ কোম্পানির প্রয়োজন অনুযায়ী বিক্রয় বৃদ্ধির বিভিন্ন কৌশল পরিকল্পনা করতে পারবে। বিক্রয়ের জন্য অভ্যন্তরীণ বিভাগ বা দলের ওপর নির্ভর করবেন না, বাহ্যিক দল বা কোন আউটসোর্সিং কোম্পানির সাথে কাজ করবেন তা আগে থেকেই আলোচনা করে নেয়া উচিত।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণীয় বিষয় হলো:

আরও গ্রাহক পাওয়া:

আরও নতুন গ্রাহক আকৃষ্ট করে অনেক সময় বিক্রয় বৃদ্ধি বাড়ানো যায়। ফলে আপনার ব্যবসাটি আরও টাকা আয় করতে পারবে।

গড় লেনদেনের আকার বৃদ্ধি করা:

নতুন গ্রাহক পাওয়া ভালো। তবে বিদ্যমান গ্রাহকরা বেশী পরিমাণে পণ্য বা সেবা ক্রয় করাটা আপনার বিক্রয় বৃদ্ধির একটি অন্যতম উপায়। বর্তমান গ্রাহকরা যতো বেশী পরিমাণে আপনার পণ্য বা সেবা ক্রয় করবে, আপনার ব্যবসার রাজস্ব আয় ততো বৃদ্ধি পাবে।

আরও বেশী লেনদেনে অনুপ্রাণিত করা:

বিশ্বস্ত গ্রাহক একটি ব্যবসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে, পুরনো গ্রাহকরা যেন বেশী পরিমাণে আপনার কাছ থেকে কেনাকাটা করে। এজন্য আপনাকে উন্নত গ্রাহক সেবা দিতে হবে এবং গ্রাহককে সামগ্রিকভাবে  একটি অভিজ্ঞতা উপহার দিতে হবে যাতে তার বিশ্বস্ততা বৃদ্ধি পায়।

মূল্য বিবেচনা করা:

আপনি যখন আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিয়ে গবেষণা করবেন তখন আপনার সমমানের বা একই ধরনের পণ্য বা সেবাগুলোর মূল্য কেমন সে বিষয়েও ভালোভাবে গবেষণা করবেন। আপনার পণ্য বা সেবাটির মূল্য বেশী না কম রাখবেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন। অনেক সময়  মূল্য কম রাখলে বিক্রয় বৃদ্ধি পেতে পারে কারণ মানুষ সবসময়ই চায় কিছু টাকা বাঁচাতে। আবার দাম বেশী রাখলে আপনার রাজস্ব আয় বাড়বে, তার মানে এই না যে আপনার বিক্রিও বাড়বে।

আপনার পণ্য বা সেবার  দোষ,গুণ সবকিছু ভালোভাবে বিবেচনা করুন এবং তা আপনার প্রতিযোগীদের পণ্য বা সেবা থেকে কিভাবে উন্নত তাও বিবেচনা করুন। আপনার ব্যবসার লক্ষ্য কি তাও চিন্তা করুন। সবকিছু ভালোভাবে চিন্তা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিন যে আপনার পণ্য বা সেবার মূল্য কেমন রাখবেন।

অন্যান্য খরচ বিবেচনায় আনা:

মূল্য বিবেচনার পর কিভাবে ব্যবসাটি লাভ করতে পারবে সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য আপনাকে অন্যান্য খরচ যেমন: পণ্য বা সেবাটি তৈরী করতে আপনার কতো খরচ হয়েছে, কাঁচামালের জন্য কতো খরচ হয়েছে এবং ব্যবসা চালানোর খরচ সবকিছু একসাথে বিবেচনায় আনতে হবে। এসব তথ্যগুলো ব্যবহার করে আপনি ব্রেক-ইভেন পয়েন্ট বের করতে পারবেন অর্থাৎ যেখানে আপনার লাভও থাকবেনা এবং ক্ষতিও থাকবেনা। এটা আপনাকে মূল্য নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে।

স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা:

আপনাকে আপনার ব্যবসার জন্য স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। আপনি ব্যবসাটিকে যে দিকে নিয়ে যেতে চান, লক্ষ্যটিকেও তার সাথে মিল রেখে ঠিক করতে হবে। যেকোন স্টার্ট-আপ বা যে ব্যবসাটি তার প্রাথমিক অবস্থায় আছে তার লক্ষ্য হলো লাভ করা। যদি ব্যবসা সেই লক্ষ্যটি অর্জন করে ফেলে তবে তার লক্ষ্য  বিক্রয় ও রাজস্ব বৃদ্ধি করে কোম্পানিটির বৃদ্ধি করা।

আপনার পণ্য বা সেবাটিকে ভালোভাবে বুঝুন:

পণ্য বা সেবাটি বিক্রয় করার আগে আপনি এবং আপনার ব্যবসার প্রত্যেক সদস্যকে পণ্য বা সেবাটির সব বৈশিষ্ট্য,  উপকারিতা, অপকারিতা এবং পণ্য বা সেবাটি কিভাবে আপনার প্রতিযোগীদের থেকে উন্নত তা ভালোভাবে জানতে হবে । আপনি যদি ভালোভাবে না জানেন যে আপনি কি বিক্রি করছেন তবে আপনি আপনার গ্রাহকদের কাছে কিভাবে পণ্যটি বিক্রি করবেন। এজন্য আপনাকে আপনার বিক্রয় প্রতিনিধিদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং ব্র্যান্ডিং উপকরণ দিতে হবে যেমন: ব্যবসায়িক কার্ড, ব্র্যান্ডের পোশাক, ফ্লাইয়ার্স প্রভৃতি।

আপনার গ্রাহকদের ভালোভাবে জানুন এবং বুঝুন:

আপনার গ্রাহকদের ভালোভাবে বুঝতে হবে। অর্থাৎ তাদের প্রয়োজন, পছন্দ, অপছন্দ, বয়স, পেশা, তারা কোথায় থাকে, তাদের সমস্যা এবং কিভাবে আপনি তাদের সমস্যার সমাধান করবেন প্রভৃতি আপনাকে ভালোভাবে বুঝতে হবে। এজন্য আপনাকে গবেষণা ও তথ্যের ভিত্তিতে একটি বায়ার পার্সোনা বা ক্রেতা ব্যক্তিত্ব তৈরী করতে হবে যা একটি অর্ধ-কাল্পনিক চিত্র। আপনার বিক্রয় দল বা বিভাগ এবং সম্পূর্ণ ব্যবসাটিতেই গ্রাহকদের রাখবেন সবার আগে।

সম্ভাব্য বাধাগুলো চিহ্নিত করুন:

আপনার ব্যবসার সম্ভাব্য বাধাগুলো চিহ্নিত করুন যা আপনাকে ব্যবসাটির  ভবিষ্যৎ ঝুঁকিগুলো এড়িয়ে চলতে  এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে।

বিক্রয়ের সম্ভাব্য আপত্তিগুলো আলোচনা করুন:

আপনি আপনার বিক্রয় প্রতিনিধিদের সাথে বিক্রয়ের সম্ভাব্য আপত্তিগুলো আলোচনা করুন। এটা তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে এবং চমৎকারভাবে পরিস্থিতি সামলাতে সাহায্য করবে। কিছু সম্ভাব্য আপত্তি হলো “আপনাদের পণ্য বা সেবা খুব বেশী দামী” ,“আপনি আমাদেরকে বেশী কি দিতে পারবেন?” , “আপনারা আমাদের চাহিদা মেটাতে পারবেন না” বা “আমি এখন বদলাতে চাচ্ছি না।”

২.একটি শক্তিশালী বাজারজাতকরণ প্রচারণার পরিকল্পনা তৈরী করুন

বিক্রয় বৃদ্ধি করতে হলে আপনার ব্যবসার একটি শক্তিশালী বাজারজাতকরণ প্রচারণার পরিকল্পনা থাকতে হবে। এটার অধীনে  প্রচারণার আগে থেকে শুরু করে প্রচারণার পরের অনেক কার্যক্রম থাকে । আপনাকে নিচের বিষয়গুলোর দিকে যথাযথভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে:

পণ্য উন্নয়ন:

এজন্য আপনার ব্যবসা বা এর বিক্রয় দলকে বাজার গবেষণা করতে হবে। যেমন: আপনার নির্ধারিত গ্রাহকরা কি পছন্দ করছে? কি বৈশিষ্ট্যগুলো পণ্যটিকে তাদের জন্য উপকারী করে তুলবে? কেন গ্রাহক আপনার পণ্যের সমতুল্য পণ্য গুলো কিনে এবং তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হলে আপনাকে আর কি কি দিতে হবে? এসব তথ্য সংগ্রহ করে আপনার পণ্যে প্রয়োজনীয় কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করুন এবং অপ্রয়োজনীয় কিছু বৈশিষ্ট্য বাদ দিয়ে  আপনার পণ্য বা সেবাটিকে আরও আকর্ষণীয়, উপকারী এবং সাশ্রয়ী করে তুলুন।

বন্টন:

আপনার পণ্য বন্টনের জন্য অনেক বিকল্প পদ্ধতি রয়েছে। যেমন: আপনি আপনার পণ্য খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারেন, অনলাইনের মাধ্যমে সরাসরি বিক্রি করতে পারেন অথবা বাহিরের কোন  বিক্রয় সেবা প্রদানকারী নিয়োগ করতে পারেন অর্থাৎ আউটসোর্সিং করতে পারেন।

প্রচারণা:

প্রচারণার জন্য আপনার সামনে অনেক বিকল্প রয়েছে। যেমন: সংবাদপত্রে, বেতারে, টেলিভিশনে বিজ্ঞাপণ, অনুষ্ঠান, সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা এবং দোকানে বা ব্যবসার অভ্যন্তরীণ কাজের মাধ্যমে পুরোনো বিজ্ঞাপণ পদ্ধতি অনুসরণ করে। কোন প্রতিযোগিতা, কূপণ এবং বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। আপনার ব্যবসার বাজেটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আপনি বিজ্ঞাপণ, প্রচারণা এবং জনসংযোগে ব্যয় করবেন।

বাজারজাতকরণ ম্যাট্রিক্স পর্যালোচনা:

আপনি আপনার ব্যবসার প্রচারণার জন্য বিভিন্ন মাধ্যম এবং উপায় ব্যবহার করে থাকেন। এখন কোন মাধ্যম কেমন কাজ করছে তা পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন বাজারজাতকরণ ম্যাট্রিক্স ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন বাজারজাতকরণ ম্যাট্রিক্স যেমন: রিচ বা পৌঁছানো, এনগেজমেন্ট বা একাগ্রতার হার,  রূপান্তর হার, বিনিয়োগের ওপর লাভ প্রভৃতির গতিবিধি আপনি কোন সিআরএম বা কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট ব্যবহার করে লক্ষ্য করতে পারেন। এই ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে কিছু আপনাকে এই ম্যাট্রিক্সগুলোর ওপর বিস্তারিত প্রতিবেদন দিবে যা ব্যবহার করে আপনি বুঝতে পারবেন কোন প্রচারণাটি কেমন  কাজ করছে এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য কোনটি বেশী কার্যকর।

একটি দৃঢ় এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ কন্টেন্ট কৌশল গঠন:

আপনি আপনার ব্যবসার প্রচারণা বিভিন্ন মাধ্যমে চালান কিন্তু তার মানে এই না যে প্রতিটি মাধ্যমের জন্য আপনি ভিন্ন ভিন্ন কন্টেন্ট  তৈরী করবেন। আপনি এবং আপনার ব্যবসার কর্মীরা ভালো করেই জানেন যে, ব্যবসাটির শক্তিশালী দিকগুলো কি কি, আপনাদেরকে সেই দিকগুলো ভালো করে বিভিন্ন কন্টেন্ট বা বার্তায় ফুটিয়ে তুলতে হবে। আপনাকে  বার্তার মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হবে। আপনাকে এমন কন্টেন্ট তৈরী করতে হবে যা গ্রাহকদের জন্য প্রয়োজনীয় ও আকর্ষনীয়  এবং এর সাথে মিল রেখে আপনি যদি কল-টু-অ্যাকশন ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনার বিক্রয় বাড়বে।

৩.সম্ভাব্য গ্রাহকদের সংখ্যা বৃদ্ধি করুন

সম্ভাব্য গ্রাহকদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারেন নিচের কৌশলগুলো অনুসরণ করে:

  • আপনার সম্ভাব্য গ্রাহকদেরকে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করুন ক্রেতা বা গ্রাহক ব্যক্তিত্ব তৈরীর মাধ্যমে।
  •  আপনি যে সমস্যাটি সমাধান করতে চাচ্ছেন তা চিহ্নিত করুন।
  • বিভিন্ন প্যাকেজ, মূল্যহ্রাস, বিনামূল্যে অফার ইত্যাদি দিয়ে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করুন।
  • সম্ভাব্য গ্রাহকদের ফোন নম্বর এবং ইমেইল আইডি সংগ্রহ করে একটি ফাইল তৈরী করুন এবং প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ জনকে ফোন করে কথা বলার চেষ্টা করুন বা ইমেইল করুন।
  • আপনার কন্টেন্টগুলো নিরীক্ষণ করুন এবং দেখুন আপনার ব্যবসার লক্ষ্যের সাথে মিল রেখে বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য সেগুলো সম্পাদনা করার প্রয়োজন আছে কিনা এবং প্রয়োজন হলে সম্পাদনা করুন।
  • আপনার ব্যবসার সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইলটিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করুন।
  •  আপনার গ্রাহকরা কোন সামাজিক মাধ্যমে থাকতে পারে তা বিবেচনায় এনে সেই সামাজিক মাধ্যম যেমন: ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম প্রভৃতিতে বিজ্ঞাপন দিন। গুগলে বিজ্ঞাপন দিন। বিজ্ঞাপনের কার্যকারিতা দেখার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করতে পারেন।
  • নতুন ধরনের এবং অনন্য কিছু করার চেষ্টা করতে পারেন যা আপনার প্রতিযোগীরা কেউ করেনি।
  • আপনার ওয়েবসাইটে একটি কল-টু-অ্যাকশন বাটন যোগ করুন।

৪.নতুন এবং বিদ্যমান গ্রাহকদের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলুন

নতুন এবং বিদ্যমান গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করে তুলুন নিচের উপায়গুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে:

  •  আপনার বর্তমান গ্রাহকদের ব্যবহার বা আচরণকে স্বীকৃতি দিন। এজন্য তাদের সম্পর্কে গভীরভাবে গবেষণা করুন। তাদের অভিজ্ঞতা এবং মতামতকে ব্যবহার করে আপনার পণ্য বা সেবায় পরিবর্তন এনে উন্নত করতে পারেন।
  • গ্রাহকদেরকে মতামতের জন্য অনুরোধ করুন।
  • সামাজিক মাধ্যমকে যথাযথভাবে কাজে লাগান।
  • অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন তথ্য যেমন: বিশেষ অফার, বিশেষ উপহার, বিনামূল্য অফার প্রভৃতি সম্পর্কে আপনার গ্রাহকদের আগে থেকে জানিয়ে দিন।
  • মাঝে মাঝে যোগাযোগ করার মাধ্যমে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখুন ।
  • একটি  সুপারিশ অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন যাতে গ্রাহকরা তাদের পরিচিতদের আপনার পণ্য বা সেবাকে রেফার করলে কোন উপহার বা বিশেষ কোনো সুবিধা পাবে।
  • অসাধারণ গ্রাহক সেবা দিন।

৫.গ্রাহক সুবিধাগুলোকে লক্ষণীয় করে তুলুন

বিক্রয় বৃদ্ধির একটি ভালো কৌশল হলো আপনার পণ্য বা সেবা থেকে গ্রাহকদের পাওয়া সুবিধাগুলোকে বেশী করে ফুটিয়ে তোলা এবং এর মাধ্যমে তাদেরকে পণ্য বা সেবাটির প্রতি আকৃষ্ট করা।

৬.আপনার পণ্য বা সেবাটিকে কার্যকরভাবে উপস্থাপন করুন

আপনার পণ্য বা সেবাটিকে কার্যকরভাবে উপস্থাপন করার জন্য নিচের উপায়গুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেন:

  •   আপনার প্রতিযোগী সুবিধা গড়ে তুলুন। অর্থাৎ এমন কিছু সুবিধা প্রদান করুন যা আপনার প্রতিযোগীরা দিচ্ছেনা।
  • সঠিক মূল্যটি নির্ধারণ করুন।
  • আপনার বার্তাটি স্পষ্ট কিনা তা নিশ্চিত করুন।
  • বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বা চ্যানেলে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার পণ্যের কন্টেটের বাজারজাত করুন।

৭.নিজের উন্নয়নে বিনিয়োগ করুন

আপনি যদি নিজের উন্নয়নে বিনিয়োগ করেন তবে সেটা শেষ পর্যন্ত আপনার ব্যবসার বিক্রয় বৃদ্ধিতেই সাহায্য করবে। আপনি নিচের পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন:

  • বিভিন্ন বিক্রয় প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
  • কিভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় তা শিখুন। কারণ আপনার বিক্রয় প্রচেষ্টার এক পর্যায়ে আপনাকে আপনার গ্রাহকের সাথে আলোচনা করে মূল্য কিছু কমাতে হতে পারে বা বাড়তি কিছু সুবিধা দেয়া লাগতে পারে। এই গুণটিও বিক্রয় বৃদ্ধিতে আপনাকে সাহায্য করবে।
  • একটি প্রত্যাশিত কৌশল গঠন করুন কারণ আপনার বিক্রয় বৃদ্ধির একটি অন্যতম কৌশল হলো আপনার সম্ভাব্য গ্রাহকদের খুঁজে বের করা এবং তাদেরকে আপনার পণ্য বা সেবা ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করে তোলা। 

৮.বিক্রয় এবং বাজারজাতকরণের মধ্যে সমন্বয় সাধন করুন

আপনি যদি আপনার বিক্রয় এবং বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া , বিভাগ বা দলের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারেন তবে বিক্রয় বৃদ্ধি করতে পারবেন। বিক্রয় এবং বাজারজাতকরণের মধ্যে এই সমন্বয় নতুন সম্ভাব্য গ্রাহক বা কৌশল সৃষ্টি করতে পারে যা আপনার বিক্রয় প্রতিনিধিদের আরও বেশী সংখ্যায় বা পরিমাণে আপনার পণ্য বিক্রয় করতে সাহায্য করবে।

৯.বিক্রয় কমিশন বা প্রণোদনা প্রদান

আপনার বিক্রয় প্রতিনিধিদের আপনি বিশেষ কিছু সুবিধা, কমিশন বা প্রণোদনা দিয়ে আরও বেশী পরিমাণে বিক্রয় করতে উৎসাহী করতে পারেন। আপনি এই উপায়গুলো চেষ্টা করতে পারেন:

  • আপনার বিক্রয় প্রতিনিধিদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য কোনো রেস্টুরেন্ট, শপিং সেন্টার, বা সেবার উপহার কার্ড দিতে পারেন ।
  • আপনি বিক্রয় প্রতিনিধিদের কোনো অনুষ্ঠানের টিকিট দিতে পারেন।
  • বিক্রয় দল বা বিভাগকে উৎসাহিত করতে অফিসের কোনো সামগ্রী যেমন: সুন্দর ডেস্ক, চেয়ার বা অন্য কোন যন্ত্রপাতি যেমন: কফি মেকার, মাইক্রোওয়েভ ,ওভেন, ফ্রিজ প্রভৃতিও দিতে পারেন।

১০.বিক্রয় গতিবেগের প্রতি মনোনিবেশ করুন

বিক্রয় গতিবেগ হলো একটি সংখ্যা যা আপনার ব্যবসা কত দ্রুত টাকা আয় করছে তা পরিমাপ করে। অন্যভাবে বলা যায়, একজন সম্ভাব্য গ্রাহক কতদ্রুত  ক্রেতায় পরিণত হয় তা পরিমাপ করে। আপনি যত তাড়াতাড়ি বিক্রয় করতে পারবেন তত তাড়াতাড়ি টাকা আয় করতে পারবেন।

১১.সময় ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দিন

সময় ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দিন কারণ আপনার ব্যবসার যে কাজগুলো সরাসরি না কিন্তু পরোক্ষভাবে বিক্রয়ের সাথে জড়িত যেমন: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফাইল করে রাখা, গবেষণার কাজ এই কাজগুলো সরাসরি বিক্রয়ে সাহায্য না করলেও তথ্যগুলো বিক্রয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই কাজগুলোর জন্য আলাদা  সময় রাখা উচিত। আরও ভালো হয় যদি বিক্রয় প্রতিনিধিদের দিয়ে এই কাজগুলো না করিয়ে কোন বিক্রয় সহায়ক নিয়োগ করে তাকে দিয়ে কাজগুলো করানো যায়। তবে বিক্রয় প্রতিনিধিরা শুধুমাত্র বিক্রয় বৃদ্ধির কাজে মনোনিবেশ করতে পারবে।

১২.শীর্ষ গ্রাহকদের প্রতি মনোযোগ দিন

আপনার শীর্ষ গ্রাহক যারা আপনার কাছ থেকে অনবরত পণ্য ক্রয় করে তাদের সাথে আপনি আলোচনা করে আরও বেশী পণ্য ক্রয় করার ব্যাপারে উৎসাহী করতে পারেন। আপনার শীর্ষ গ্রাহকদের জন্য আপনি আলাদা কোন প্রচারণা তৈরি করতে পারেন। এর ফলে আপনার বিক্রয় বৃদ্ধি পেতে পারে।

১৩.নতুন গ্রাহক খুঁজুন

আপনার বিক্রয় বৃদ্ধির আর একটি উপায় হতে পারে আপনার নির্ধারিত গ্রাহকের পরিধি বাড়ানো অর্থাৎ নতুন গ্রাহক খোঁজা। আপনি এজন্য নিচের কৌশলগুলো অনুসরণ করতে পারেন:

  • আপনি আপনার নির্ধারিত গ্রাহকের বাইরে  অন্য মানুষদের ফোন করে আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে তাদের আগ্রহ জানতে পারেন।
  • সামাজিক মাধ্যমে আপনার আশেপাশের মানুষদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপণ তৈরি করে দেখতে পারেন যে আপনি নতুন কোনো গ্রাহক পান কিনা।
  • আপনি আপনার এলাকা ছাড়া অন্যান্য এলাকার ওপর গবেষণা করে দেখতে পারেন যে নতুন গ্রাহক পাওয়া যায় কিনা।

১৪.শীর্ষ ক্রয়কারী এলাকা নির্ধারণ করুন

বাজারজাতকরণ ম্যাট্রিক্স ব্যবহার করে খুঁজে বের করুন যে কোনটি শীর্ষ ক্রয়কারী এলাকা। শীর্ষ ক্রয়কারী এলাকা নির্ধারিত হয়ে গেলে আপনি সেখানে পণ্য বিক্রয়ের জন্য বাজারজাতকরণ কৌশল তৈরীর ক্ষেত্রে আরও বেশী সময় এবং শ্রম দিন যাতে বিক্রয় আরও বৃদ্ধি পায়। অথবা সেখানে বিক্রয় করার জন্য আপনার সেরা বিক্রয় প্রতিনিধিদের নিযুক্ত করতে পারেন।

১৫.একটি বিক্রয় আউটসোর্সিং কোম্পানির সাথে কাজ করতে পারেন

আপনি কোনো বিক্রয় আউটসোর্সিং কোম্পানির সাথে কাজ করতে পারেন। এতে আপনি নিম্নোলিখিত সুবিধাগুলো পাবেন:

  • কম খরচে আপনার ব্যবসার বিক্রয় এবং আয় বৃদ্ধি করবে।
  • তাদের বিক্রয়ে বেশী দক্ষতা আছে।
  • বাজারের প্রতি দ্রুত সাড়া দেয়।
  •  নতুন গ্রাহক অর্জন করতে পারে।
  • আপনি ব্যবসার মূল কাজে ভালোভাবে মনোযোগ দিতে পারেন।

 তাদের উন্নত গ্রাহক সন্তুষ্টি এবং গ্রাহক ধরে রাখার ক্ষমতা আছে।

অনলাইনে বিক্রয় বৃদ্ধির কৌশল

এবার জেনে নেয়া যাক  অনলাইন ব্যবসা বা দোকানের বিক্রয় বৃদ্ধির কিছু কৌশল:

১. আপনার নির্ধারিত গ্রাহকদের চিহ্নিত করুন।
২. আপনার গ্রাহকদের সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানুন।
৩. আপনার পণ্যগুলোর জন্য বাজার নির্বাচন করুন।
৪. সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে বিক্রি করুন।
৫. ওয়েবের শক্তিকে কাজে লাগান।
৬. মানসম্পন্ন এবং সহায়ক কন্টেন্ট প্রকাশ করুন।
৭. একটি প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করুন।
৮. একটি পণ্যের সাথে প্রাসঙ্গিক অন্য পণ্য বা পণ্যটিরই আরও উন্নত ধরন কিনতে উদ্বুদ্ধ করুন।
৯. মানসম্পন্ন ছবি এবং ভিডিও ব্যবহার করুন।
১০. আপনার পৃষ্ঠার এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন উন্নত করুন।
১১. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যথাযথ ব্যবহার করুন।
১২. একটি সহায়ক সিটিএ বাটন সংযুক্ত করুন।
১৩. কিছু ভয়ংকর ভুল যেগুলো অবশ্যই এড়িয়ে যাবেন:

  • আপনার গ্রাহকদের সম্পর্কে না জেনেই বিক্রয় করা।
  • ছোট অর্ডারগুলো উপেক্ষা করা।
  • অসন্তুষ্ট গ্রাহকদের এড়িয়ে যাওয়া।
  • বারবার একই পুরনো কৌশলগুলো ব্যবহার করা।
  • যথেষ্ট বিক্রয় প্রশিক্ষণ না নেয়া।

শেষ কথা:

সুতরাং বিক্রয় বৃদ্ধির কৌশল, নিয়ম এবং উপায়গুলো জেনে রাখুন আমাদের এই বিস্তারিত আর্টিকেল থেকে এবং এগুলোর উপযুক্ত প্রয়োগ ঘটান আপনার ব্যবসাতে। এভাবে আপনার ব্যবসাটিকে নিয়ে যান সাফল্যের এক নতুন উচ্চতায়। আর আপনার ব্যবসাকে সফলভাবে চালাতে ব্যবসার সব হিসাব রাখুন সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় এবং নির্ভুলভাবে হিসাবপাতি অ্যাপের মাধ্যমে

Search
সাম্প্রতিক পোস্টসমূহ
আজই আমাদের অ্যাপ ডাউনলোড করুন
অনলাইন বা অফলাইনে যেকোন জায়গা থেকে সহজেই আপনার দৈনন্দিন ব্যবসায়িক লেনদেন পরিচালনা করুন।