ব্যবসা বানিজ্য ও পেশাগত কারণে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন মানুষ, নতুন কোম্পানি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ তৈরি করি। পরবর্তীতে ব্যবসায়িক ও পেশাগত প্রয়োজনে আমরা এই যোগাযোগগুলো কাজে লাগাই। এই যোগাযোগ বা নেটওয়ার্কগুলোকেই এককথায় বিজনেস নেটওয়ার্ক বলা হয়। আর এই বিজনেস নেটওয়ার্ক তৈরির প্রক্রিয়াটি বিজনেস নেটওয়ার্কিং হিসেবে পরিচিত। উদ্যোক্তাদের জন্য নেটওয়ার্কিং একিভাবে কাজ করে।
আপনি যদি একজন নতুন উদ্যোক্তা হন বা একটি ছোট ব্যবসা শুরু করেন, তাহলে এটিকে পরিচালনা করতে বা বড় করতে আপনার একটি শক্তিশালী বিজনেস নেটওয়ার্ক থাকা জরুরি। কারণ একটি শক্তিশালী বিজনেস নেটওয়ার্কিং আপনার ব্যবসার লাইফলাইন হিসেবে কাজ করবে। আজকের লেখায় আমরা জানবো, উদ্যোক্তারা নেটওয়ার্কিং কেন এবং কীভাবে করবেন? পাশপাশি উদ্যোক্তাদের জন্য নেটওয়ার্কিং এর কৌশল ও সুফল সম্পর্কেও জানবো।
এই ব্লগে যা থাকছে-
বিজনেস নেটওয়ার্কিং বা ব্যবসায়িক যোগাযোগ কী?
ধরুন, আপনার একটি ব্যবসা আছে। এই ব্যবসার সাথে জড়িত আছে মালিক, কর্মচারী, কাস্টমার, সাপ্লায়ার এবং অন্য কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ব্যবসার সাথে জড়িত সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে তথ্য ও সেবার আদান প্রদান হয় নিশ্চই। এই যে যোগাযোগ, যা ব্যবসায়িক কারণে করা হচ্ছে সেটাই বিজনেস নেটওয়ার্কিং।
আমরা কিন্তু ব্যক্তিগত বা পেশাগত কারণেও নেটওয়ার্কিং করে থাকি। সহজ ও সময়োপযোগী উদাহরণ হলো, লিংকডইন (LinkedIn)। লিংকডইন এ আমরা পেশাগত যোগাযোগ বা প্রোফেশনাল নেটওয়ার্ক তৈরি করি। এতে করে আমাদের পেশা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যোগাযোগ করা বা তাদের আপডেট পাওয়া সহজ হয়। নিজের প্রয়োজনেও এই নেটওয়ার্ক কাজে লাগানো যায়। যেমন- চাকরি খুঁজতে লিংকডইন খুবই জনপ্রিয় নেটওয়ার্ক। একিভাবে ফেসবুকে আমরা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং বা সামাজিক যোগাযোগ করে থাকি।
তাহলে এক কথায় বলা যায়, নেটওয়ার্কিং হলো ব্যক্তির সাথে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের, ব্যবসা বা কোম্পানির সাথে অন্য ব্যবসা বা কোম্পানির এবং কোনো গ্রুপের সাথে অন্য গ্রুপের পেশাগত ও ব্যবসায়িক তথ্য ও সেবা আদান প্রদান করা। বর্তমান ডিজিটাল দুনিয়ায় নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য এই নেটওয়ার্কিং সবচেয়ে জরুরি ও প্রয়োজনীয় কাজের একটি।
উদ্যোক্তাদের জন্য নেটওয়ার্কিং কেন প্রয়োজন?
সমাজে টিকে থাকতে যেমন যোগাযোগ জরুরি, তেমনি ব্যবসায় টিকে থাকতে দরকার ভালো ব্যবসায়িক যোগাযোগ। একটি ভালো ও শক্তিশালী বিজনেস নেটওয়ার্ক অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবসার জন্য প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। তাই উদ্যোক্তারা কেন নেটওয়ার্কিং করবেন সেটা জানাও জরুরি।
- ব্যবসায় নতুন সুযোগ তৈরি করা:
একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি যদি যোগাযোগ বা কমিউনিকেশনে ভালো হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য নতুন বিনিয়োগকারী বা ইনভেস্টর, বিজনেস পার্টনার বা অংশীদার এবং নতুন কাস্টমার বা গ্রাহক পাওয়া সহজ হবে। এক্ষেত্রে নেটওয়ার্কিং আপনার ব্যবসার জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করে দেবে। একজন নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে যা আপনার একান্ত কাম্য।
- ব্যবসার নতুন আইডিয়া:
উদ্যোক্তারা সবসময় নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন। তাই নতুন কোনো বিজনেস ট্রেন্ড বা নতুন কোনো বিজনেস আইডিয়া নিয়ে কথা বলার একটা জায়গা থাকাটা জরুরি। নেটওয়ার্কিং উদ্যোক্তাদের সেই সুযোগ দেয়। কারণ, বিজনেস নেটওয়ার্কের সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কিছু নির্দিষ্ট বিষয় এবং লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করে। আর এই আলোচনা থেকেই উঠে আসে নতুন নতুন আইডিয়া।
- নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে ব্র্যান্ডিং:
উদ্যোক্তাদের নেটওয়ার্কই অনেক সময় তাদের ইমেজ হিসেবে কাজ করে। তারা যেসকল পেশাদার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করে, অনেক সময় তাদের ইমেজ ও ব্র্যান্ড ভ্যালু নিজের ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের ইমেজ তৈরিতে কাজে লাগে। যেমন- একজন নতুন উদ্যোক্তা যদি বড় কোনো বিজনেস ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করে তাহলে তার ইমেজ বাড়বে অবশ্যই। ফলে গ্রাহকদের কাছে সেই উদ্যোক্তার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়া একটি ভালো নেটওয়ার্কিং আপনাকে আপনার ব্যবসার ব্র্যান্ড ইমেজের ব্যাপারে সচেতন করে তুলবে।
নতুন উদ্যোক্তাদের সেল বা বিক্রয় বাড়াতে নেটওয়ার্কিং:
নেটওয়ার্কিং এর সবচেয়ে সরাসরি প্রভাব পড়ে ব্যবসার সেল বা বিক্রয়ে। ধরুন, আপনি একটি অর্গানিক প্রোটিন ফার্মের উদ্যোগ নিয়েছেন। এখন আপনার নেটওয়ার্কে যদি একটি কিছু ফার্ম, কিছু রেস্টুরেন্ট কিংবা কিছু এলাকাভিত্তিক মাংস বিক্রেতা থাকে, তাহলে আপনি তাদের মাধ্যমে ব্যবসার সেল বাড়াতে পারবেন। আসলে এই ডিজিটাল নেটওয়ার্কিং এর দুনিয়ায় এভাবেই ব্যবসা হয় এবং হবে।
তাই উদ্যোগ বা ব্যবসা বড় হোক আর ছোট, নেটওয়ার্কিং ছাড়া আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন না। সমাজে যেমন সামাজিক যোগাযোগ ছাড়া চলা যায় না, তেমনি ব্যবসায়ও ব্যবসায়িক যোগাযোগ ছাড়া করা অসম্ভব। আর যদি থেমে থাকেন, তাহলে আপনি আর যাই হন, আপনি উদ্যোক্তা নন!
উদ্যোক্তাদের জন্য নেটওয়ার্কিং এর কৌশল
নেটওয়ার্কিং শুরু করার জন্য ছোট ছোট কিছু উদ্যোগ নিতে পারেন। যেগুলো আপনার ব্যবসার সাথে যায় এবং ভবিষ্যতে ব্যবসা বাড়াতে কাজে দেয়। এমন কয়েকটি ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করি-
- ডিজিটাল নেটওয়ার্কিং দিয়ে শুরু করুন:
জিডিটাল দুনিয়ায় অ্যানালগ নেটওয়ার্কিং এর গুরুত্ব দিন দিন কমে আসছে! বিশেষ করে আপনি যদি ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন তাহলে তো আর কোন কথাই নাই। তাই উদ্যোক্তাদের জন্য নেটওয়ার্কিং মানেই ডিজটাল নেটওয়াকিং এ অভ্যস্ত হওয়া।
অনলাইন নেটওয়ার্কিং এর জন্য বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে হবে। যেমন- সোশ্যাল মিডিয়া হিসেবে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসআপ, টুইটার ইত্যাদি। পেশাজীবী বা প্রোফেশনালদের জন্য লিংকডইন। আর এসব প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন গ্রুপ ডিজিটাল নেটওয়ার্কিং এর জন্য অত্যন্ত কাজে দেয়। তো শুরু করুন আজকে থেকেই! আপানার ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যোগাযোগ বাড়ান এবং এগিয়ে যান।
পরিবার ও বন্ধুদের মাধ্যমে নেটওয়ার্কিং:
ধরুন, স্টেশনারি প্রোডাক্ট ও সেবা নিয়ে আপানার ব্যবসা বা উদ্যোগ। এখন আপনার পরিবার ও বন্ধুদের কেউ যদি কোনো স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে পেশাগত কারণে জড়িত থাকেন, তাহলে তার সাথে নেটওয়ার্কিং আপনার ব্যবসার জন্য খুবই ভালো ফলাফলা নিয়ে আসতে পারে।
তাই পরিবার ও বন্ধু বান্ধবদের আপনার ব্যবসা বা স্টার্টআপ সম্পর্কে জানান। তাদের সাথে নেটওয়ার্ক আছে এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে আপনার নেটওয়ার্কিং বাড়াতে হবে। সেখান থেকেও ব্যবসা আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এই নেটওয়ার্কিং কে অনেক সময় রেফারাল নেটওয়ার্কিং বলা হয়।
- বিভিন্ন ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণ করুন:
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্টান বা ব্যবাসার ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। বিশেষ করে নিজের ব্যবসা বা স্টার্টআপ এর সাথে সংশ্লিষ্ট ইভেন্টগুলোতে যেতে হবে। এখানে আপনি আপনার ব্যবসার সাথে জড়িত অনেক বিজনেস লিডার পেয়ে যাবেন, যারা সেই ইন্ডাস্ট্রির ট্রেন্ড নিয়ে ভালো জানেন। তাদের সাথে নেটওয়ার্কিং তৈরি করতে হবে। যেমন- বিভিন্ন উদ্যোক্তা মেলা, আবাসন মেলা, বিভিন্ন পণ্য বা সেবার মেলা, সেমিনার ইত্যাদি।
- আপনার টার্গেট অডিয়েন্স বা কাস্টমারদের টার্গেট করুন:
আপনার কাস্টমার বা টার্গেট অডিয়েন্স কোথায় বেশি যায়, কোথায় অড্ডা দেয়, কোথায় কেনাকাটা করে ইত্যাদির খোঁজ রাখতে হবে। এবার শুরু করুন কাস্টমারদের টার্গেট করে নেটওয়ার্কিং। এক্ষেত্রে আপনাকে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার গ্রুপে যুক্ত হতে হবে। ফেসবুকে পেজ খুলে সক্রিয় হতে হবে। যেমন- আপনার ব্যবসা অর্গানিক খাবারের। তাহলে আপনাকে ফেসবুক এর বিভিন্ন খাবার গ্রুপে যুক্ত হতে হবে।
ব্যবসার সাথে নিজেকেও সামনে আনতে হবে:
দেখুন, একটা সময় ব্যবসা শুধু প্রতিষ্ঠানের নামেই চলতো। এখনও চলে, তবে সেটি শুধুমাত্র বড় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সম্ভব। নতুন উদ্যোগ বা ছোট ব্যবসার জন্য নিজের ব্যবসার সাথে নিজেকেও সামনে আনতে হয়। কারণ, অনেক কাস্টমার আপনার ইমেজ দেখে অর্ডার করতে পারে।
আবার বিনিয়োগকারীরা শুধু স্টার্টআপ আইডিয়া দেখে বিনিয়োগ করেন না। তারা আইডিয়ার পেছনের মানুষটির সাথে সম্পর্ক করতে চায়। তাকে বিনিয়োগ করা উচিৎ হবে কি না সেটা যাচাই করে। তাই নিজের ব্যবসার সাথে নিজেকেও সামনে আনতে হবে।
তাহলে আজ থেকেই সঠিক মাধ্যম খুঁজে নিয়ে শরু করুন নেটওয়ার্কিং। যোগাযোগ বা কমিউনিকেশনের জড়তাকে জয় করে ব্যবসায়িক যোগাযোগ বাড়ান। নতুন পেশাদার বন্ধু ও বন্ধু প্রতিষ্ঠান তৈরি করুন।
নিজেকে ডিজিটাল দুনিয়ার জন্য প্রস্তুত করুন
যেহুতু সব কিছুই ডিজিটাল দুনিয়ার হাতে চলে যাচ্ছে, তাহলে আপনাকেও অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল টুল ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে। ছোট্ট একটি চেঞ্জ বা পরিবর্তন দিয়ে শুরু করতে পারেন।
আপনার উদ্যোক্তা জীবনের শুরুতেই বা ব্যবসার শুরুতেই একটি হিসাব রাখার সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। এখানে আপনার ব্যবসার সকল হিসাব রাখুন এবং নির্ভুল ও নিরাপদ ডেটা প্রাপ্তি নিশ্চিত করুন সবার আগে। বাংলাদেশে এমন একটি পূর্ণাঙ্গ হিসাবরক্ষণ অ্যাপ হিসাবপাতি।
এই অ্যাপে আপনি ব্যবসার সকল হিসাব রাখতে পারবেন ফ্রিতে! হিসাব পাতি অ্যাপের বিভিন্ন ফিচারের মধ্যে পার্টিস ফিচারের মাধ্যমে আপনি আপনার সকল কাস্টমার ও সাপ্লায়ারদের নম্বর সেভ রাখতে পারবেন। মানে একটি প্ল্যাটফর্মেই ব্যবসার সকল হিসাব এবং প্রয়োজনীয় কন্টাক্ট পেয়ে যাবেন! নেটওয়ার্কিং এর জন্য যেটা অনেক কাজে দেবে।
তাহলে হিসাবপাতি দিয়েই ডিজিটাল উদ্যোক্তা জীবনের শুরু করতে পারেন। হিসাবপাতি অ্যাপটি ডাউনলোড করে ফ্রিতে ব্যবহার করুন, ভালো লাগলে সবচেয়ে কম খরচে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে প্রিমিয়াম ও বিজনেস প্যাকেজের সাবস্ক্রিপশন কিনে নিন।
সবশেষে-
উদ্যোক্তাদের জন্য নেটওয়ার্কিং কী, কেন ও কীভাবে করবেন, সেটার একটা ধারণা আমরা পেলাম। এখন শধু কাজে লাগালোর পালা! তো, নেমে পড়ুন বিজনেস নেটওয়ার্কিং এর বিশাল দুনিয়ায়, আর নিজের এবং ব্যবসার অবস্থান করুন আরও শক্তিশালী!