দৈনিক আয় ব্যয়ের হিসাব আপ-টু-ডেট রাখার কৌশল

Strategies for keeping up-to-date accounts of daily income and expenses of the business

এখন ব্যবসা পরিচালনা করতে আপনাকে যতটা পরিশ্রমী হতে হয়, তারচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান ও স্মার্ট হতে হয়! সহজ কিছু কৌশল সঠিকভাবে কাজে লাগালে ব্যবসার দৈনিক আয় ব্যয়ের হিসাব আপ-টু-ডেট রাখা অনেক সহজ হয়ে যায়। আর দৈনিক আয় ব্যয়ের হিসাব আপ-টু-ডেট থাকা মানে মাসিক আয় ব্যয় হিসাব ঠিক থাকা। আর মাসিক আয় ব্যয় হিসাব ঠিক থাকা মানেই ব্যবসা গতিশীল থাকা এবং বৃহৎ লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাওয়া।

আজকে আমরা ব্যবসার দৈনিক ও মাসিক আয় ব্যয় হিসাব আপ-টু-ডেট রাখার কিছু কৌশল নিয়ে আলোচনা করবো। ছোট খাটো কিছু বিষয় যেগুলো হয় আমরা গুরুত্ব দেই না বা খেয়াল করি না। চলুন তাহলে, ব্যবসার দৈনিক আয় ব্যয়ের হিসাব আপ-টু-ডেট রাখার কয়েকটি কৌশল জেনে নেই।

ব্লগে যা থাকছে-

দৈনিক আয় ব্যয়ের হিসাব রাখার ১৩টি কৌশল

ব্যবসা করলে যেমন হিসাবী হতে হয়, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে হতে হয় কৌশলী। ব্যবসার দৈনিক আয় ব্যয়ের হিসাব রাখতে প্রতিটি ব্যবসায়ীর আছে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল। কারওটা বেশি কাজে লাগে, কারওটা কম। তবে কিছু বিষয় মেনে চললে আপনার ব্যবসার দৈনিক বা মাসিক আয় ব্যয় হিসাব রাখা অনেক সহজ হয়ে যায়। এবং এই বিষয়গুলো সকল ব্যবসায়ীদের জন্যই প্রযোজ্য।

০১. আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোম্পানির আয় ব্যয় হিসাব রাখুন

ব্যবসা শুরু করার প্রথম দিকেই কোম্পানির আয় ব্যয়ের হিসাব রাখার জন্য একটি আলাদ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলতে হবে। যারা এখনও খোলেননি তারা দ্রুত এই কাজটি করে ফেলুন। কারণ, দৈনিক আয় ব্যয়ের হিসাব রাখতে হলে একটি নির্দিষ্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাথে যুক্ত থাকাটা জরুরি। তবেই আপনি মাসিক আয় ব্যয় হিসাব রাখতে পারবেন। প্রতি মাসের শেষে ট্রানজেকশনের ধরন ও পরিমানগুলো বিশ্লেষণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন-

  • ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট এবং ব্যবসার অ্যাকাউন্ট আলাদা করবেন। কখনও ব্যক্তিগত হিসাবে ব্যবসার লেনদেন করবেন না।
  • ব্যক্তিগত কারণে ব্যবসার একাউন্ট ব্যবহার করবেন না।
  • অবশ্যই একটি ভালো ও সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন ব্যাংকে একাউন্টটি খুলবেন।
  • প্রতি মাসে অত্যন্ত একবার ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখুন এবং লেনদেনগুলো মিলিয়ে নিন।

০২. দৈনিক আয় ব্যয়ের হিসাব রাখতে সফটওয়্যারে বিনিয়োগ করুন

ব্যবসার শুরুতেই আরেকটি কাজ বিনিয়োগ হিসেবে করে ফেলুন। সেটি হলো, ব্যবসার দৈনিক আয় ব্যয়ের হিসাব বা মাসিক আয় ব্যয় হিসাব রাখতে একটি হিসাবরক্ষণ সফটওয়্যার ব্যবহার শুরু করুন। এই বিনিয়োগটি আপনাকে সময়ের সাথে এগিয়ে নেবে। আপনার ব্যবসা পরিচালনার কাজকে অনেক সহজ করে দেবে।
দৈনিক আয় ব্যয়ের হিসাব রাখতে দেশের সবচেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী হিসাবরক্ষণ অ্যাপটি নির্বাচন করুন। আর এমন একটি অ্যাপ হলো হিসাবপাতি। জেনে নিন, কেনো ‘হিসাবপাতি’ অ্যাপে রাখবেন ব্যবসার হিসাব?

০৩. ব্যবসার দৈনিক বা মাসিক ব্যয়ের হিসাব রাখতে হবে

ব্যবসার বেচাকেনার হিসাবের পাশাপাশি ব্যয়ের হিসাব রাখতে শুরু করুন। ব্যবসা পরিচালনার খরচ বা ব্যয় যত ছোট বা বড়ই হোক তা রেকর্ড করুন। যাতায়াত খরচ থেকে শুরু করে কর্মীদের বেতন, সবই রেকর্ড করুন এবং রিভিউ করুন। অনেকে ব্যবসা পরিচালনার খরচকে আলাদা করে হিসাব করেন না। মনে রাখতে হবে এটাও আপনার বিনিয়োগ! ব্যয়ের হিসাব করলেই দৈনিক আয় ব্যয়ের হিসাব সহজ হবে। আর দৈনিক আয় ব্যয়ের হিসাব করলেই মাসিক আয় ব্যয় হিসাব মিলে যাবে। আরও জানতে পড়ুন, ছোট ব্যবসায় খরচ কমিয়ে লাভ বাড়াবেন কীভাবে?

০৪. দৈনিক ব্যয়ের রিসিপ্ট বা ইনভয়েসগুলো সংরক্ষণ করুন

হয়তো ভাবছেন, এতো খরচের রিসিপ্ট বা ইনভয়েস সংরক্ষণ কেন আর কীভাবে করবেন? কিন্তু সফল হতে হলে দৈনিক ব্যয়ের রিসিপ্ট বা ইনভয়েসগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ, মাসিক আয় ব্যয় হিসাব করার সময় কাজে লাগে। আর কীভাবে করবেন? এই ডিজিটাল যুগে কাগজের ইনভয়েস কেন রাখবেন? ডিজিটাল কপি বা কাগজের কপি স্ক্যান করে রাখবেন।

০৫. দৈনিক আয় ব্যয়ের হিসাব রাখতে ডিজিটাল ইনভয়েসিং

কাগজের ইনভয়েস বা চালন বা বিল আদান প্রদান করা এবং সংরক্ষণ করা খুব ঝামেলার কাজ। তাই ডিজিটাল ইনভয়েসিং শুরু করতে হবে। এমন হিসাবরক্ষণ অ্যাপ ব্যবহার করবেন যেটাতে ইনভয়েসিং সুবিধা থাকে। সাথে ইনভয়েস সফটওয়্যাটিও যেন আপনার জন্য উপযোগী হয় সেটাও মাথায় রাখবেন। ভালো ইনভয়েস সফটওয়্যার নির্বাচন করার উপায় জানুন এখান থেকে- আপনার ইনভয়েসিং সফটওয়্যারে এই ৭টি ফিচার আছে?

০৬. দোকানের বাকি হিসাব এর উপর নজর রাখুন

যেকোন ব্যবসার, বিশেষ করে ছোট ব্যবসা বা মুদি দোকানের বাকি বকেয়ার হিসাব রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কিছু ব্যবসার একটি বড় লেনদেন হয় বাকিতে। দোকানের বকেয়া বাকির হিসাব সঠিকভাবে রেকর্ড করা না হলে ব্যবসার বড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
দোকানের বাকি হিসাব ছোট অঙ্কের হতে পারে, কিন্তু এগুলোর সামষ্টিক প্রভাব কিন্তু বিশাল। তাই আর অবহেলা না করে মুদি দোকানের হিসাব রাখার নিয়ম মেনে বাকি বকেয়ার উপর কড়া নজর রাখুন। ছোট ব্যবসার বাকি বকেয়া কমানোর উপায় জানুন এখান থেকে- ছোট ব্যবসার বকেয়া বাকি আদায় করার কৌশল

০৭. ব্যবসার দেনা পাওনার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন

ব্যবসা করতে হলে যেমন বাকি বা পাওনার হিসাব থাকে, তেমনি দেনা বা পরিশোধের হিসাবও থাকে। আপনিও কারও না কারও থেকে বাকিতে লেনদেন করেন। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বিশেষ করে মুদি দোকানের হিসাব রাখার নিয়ম অনেকটাই এই দেনা পাওনার উপর নির্ভর করে।
আপনাকে যেটা করতে হবে, আপনার ব্যবসার দেনা পাওনার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। একটি মুদিখানার দোকানে অতিরিক্ত বকেয়া বাকি বা পাওনা যেমন ভালো লক্ষণ নয়, তেমনি দেনা বা পরিশোধযোগ্য টাকাও ভালো নয়। তাই আজ হতেই কড়া নজর রাখুন এবং অবশ্যই মুদি দোকানের জন্য ব্যবসার হিসাব রাখার সফটওয়্যার ব্যবহার করুন

০৮. মাসিক আয় ব্যয় হিসাব জানতে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখুন

প্রতি মাসে অন্ত্যত একবার ব্যাংক স্টেটমেন্ট তুলুন এবং বিশ্লেষণ করুন। এতে করে মাসিক আয় ব্যয় হিসাব সম্পর্কে একটি ধারণা হবে। কোন মাসে হঠাৎ কোন বড় পরিবর্তন হলে সেটার কারণ জানার চেষ্টা করুন। মাসিক আয় ব্যয় হিসাব আপনাকে ব্যবসার বাজেট তৈরি করতে সাহায্য করবে।

০৯. মোবাইলে হিসাব রাখার সফটওয়্যার ইন্সটল করুন

অবশ্যই ব্যবসার হিসাব রাখার সফটওয়্যার ব্যবহার করা শুরু করুন। এবং অবশ্যই সফটওয়্যাটি আপনার মোবাইলে ইন্সটল করুন। মানে এমন হিসাব রাখার অ্যাপ নির্বাচন করুন যেটা মোবাইলে ব্যবহার করা যায়। এজন্য হিসাবপাতি অ্যাপটি সবচেয়ে ভালো পছন্দ হতে পারে। হিসাবপাতি মোবাইল অ্যাপটি ইন্সটল করুন এবং প্রতিটি হিসাব টাইম-টু-টাইম আপডেট করা শুরু করুন। অ্যাপটি সম্পর্কে আরও জানতে পড়ুন- মোবাইলে ব্যবসার হিসাব রাখার অ্যাপ: হিসাবপাতি

১০. মাসিক আয় ব্যয় হিসাব রেকর্ড এবং রিভিউ করুন

প্রতিমাসের শেষে ব্যবসার মাসিক আয় ব্যয় হিসাব রিভিউ বা বিশ্লেষণ করা শুরু করুন। ব্যবসার দৈনিক বা মাসিক আয় ব্যয় হিসাব শুধু রেকর্ড করে রাখলে চলবে না। এটা ফল পেতে হলে সময় মতো রিভিউ করতে হবে। মাসে কয়েক ঘন্টা সময় দিন, দেখুন কত নতুন আইডিয়া পেয়ে যাবেন এবং কত অযথা খরচ কমে যাবে।

১১. প্রতিদিন অত্যন্ত একবার ইনভেন্টরি চেক করুন

প্রতিদিন ইনভেন্টরি চেক করার অভ্যাস করুন। স্টক বা ইনভেন্টরি সামাল দেয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনার হিসাব রাখার অ্যাপটিতে ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট করার সুবিধা থাকে। যেমন- হিসাবপাতি অ্যাপে এই সুবিধা পাবেন। আরও জানতে পড়ুন- হিসাবপাতি: এক অ্যাপেই ব্যবসার হিসাব ও ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট!

১২. প্রতিদিনের হিসাব প্রতিদিন করার চেষ্টা করুন

অবশ্যই দৈনিক আয় ব্যয়ের হিসাব রাখাটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু এই কাজটি করতে পারলে আপনি বিশাল অনেক ঝামেলা থেকে রেহাই পাবেন। একবার চেষ্টা করেই দেখুন না, অভ্যাস হয়ে যেতে পারে। আর একবার অভ্যাস হয়ে গেলে তো আর কষ্ট মনে হবে না!

১৩. ডিজিটাল টুল ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে

নিজেকে সময়ের সাথে আপডেট রাখার চেষ্টা চালিয়ে যান। ব্যবসার সাথে জড়িত ডিজিটাল যেকোন টুল ব্যবহার করার বেলায় জড়তায় ভুগবেন না। চেষ্টা করুন, একেবারেই না পারলে ভিন্ন কথা! হিসাব রাখার অ্যাপ, ডিজিটাল ইনভয়েসিং, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, এইচআর ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ইত্যাদি ব্যবহার করা এখন সময়ের দাবি। পিছিয়ে থাকলে আর চলছে না কিন্তু! কী কী ধরনের টুল আপনাকে হেল্প করতে পারে তা জানতে পড়ুন- ব্যবসা শুরু করার জন্য ৫টি অপরিহার্য অ্যাপ

বলছি না যে, এই সবগুলো কৌশল আজকে থেকেই মানতে হবে। তবে নিজের ব্যবসার মুনাফা বাড়াতে চাইলে এগুলো ফলো করার চেষ্টা করুন। দেখবেন, ব্যবসার দৈনিক আয় ব্যয়ের হিসাব আপ-টু-ডেট থাকছে। আর দৈনিক আয় ব্যয়ের হিসাব আপ-টু-ডেট থাকার কারণে মাসিক আয় ব্যয় হিসাবও আপ-টু-ডেট থাকছে।

Search
সাম্প্রতিক পোস্টসমূহ
আজই আমাদের অ্যাপ ডাউনলোড করুন
অনলাইন বা অফলাইনে যেকোন জায়গা থেকে সহজেই আপনার দৈনন্দিন ব্যবসায়িক লেনদেন পরিচালনা করুন।