ক্লাউড একাউন্টিং সফটওয়্যার কী এবং কেন ব্যবহার করবেন?

What is cloud accounting software and why should you use it

ক্লাউড অ্যাকাউন্টিং ব্যবসার হিসাবরক্ষণে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনে দিয়েছে। ক্লাউড একাউন্টিং মানেই, কম সময়ে, কম পরিশ্রমে এবং কম খরচে তাৎক্ষণিক বা রিয়েল টাইম ডেটা নিয়ে কাজ করার সুবিধা। আর তাই বিশ্বজুড়ে এই সফটওয়্যারগুলোর ব্যবহার ব্যাপকভাবে বাড়ছে। অনেকের কাছে তো একাউন্টিং সফটওয়্যার মানেই ক্লাউড একাউন্টিং সফটওয়্যার বা অনলাইন অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার!
আজকের লেখায় আমরা ক্লাউড অ্যাকাউন্টিং কী, এর প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবসার হিসাবরক্ষণে ক্লাউড প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবো।

ব্লগে যা থাকছে-

ক্লাউড কী?

ক্লাউড হলো একটি ওয়েব সার্ভার, যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেকোনো তথ্য ও প্রোগ্রাম সংরক্ষণ করে রাখা যায়। ক্লাউডে সংরক্ষিত এসব ডেটা ও প্রোগ্রাম পরবর্তিতে যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গায় এবং যেকোনো ডিভাইস থেকে দেখা যায়, ডাউনলোড করে প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা যায়। তাহলে, আমরা ক্লাউড সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়ে গেছি এবং সহজেই বুঝতে পারছি, ক্লাউড সার্ভারে যেকোনো ডেটা সংরক্ষণ করা যায়।
ঠিক যেমন আমরা আমাদের কমপিউটার বা ল্যাপটপের হার্ডডিস্কে বিভিন্ন ডেটা ও প্রোগ্রাম সেভ করে রাখি এবং প্রয়োজন পড়লেই ব্যবহার করি। ক্লাউড সার্ভার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার কমপিউটার বা ল্যাপটপের হার্ডড্রাইভটি আর একমাত্র কেন্দ্রিয় সংরক্ষণের জায়গা থাকছে না। ফলে ডেটা হারিয়ে যাওয়ার এবং ডেটা রাখার জায়গা নিয়ে আর চিন্তা করতে হয় না।

প্রাত্যাহিক কাজ কর্মে ক্লাউড প্রযুক্তি ব্যবহারের উদাহরণ

অনেকেই হয়তো ভাবছেন, ক্লাউড কী, ক্লাউড অ্যাকাউন্টিং কী, আর ক্লাউড একাউন্টিং সফটওয়্যার-ই বা কোনগুলো? বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরাই জানেন, তবুও প্রাত্যাহিক জীবনে ক্লাউড প্রযুক্তি ব্যবহারের কিছু উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি একটু সহজ করা যাক-

  • আপনি অনলাইন ব্যাংকিং কিংবা মোবাইল ব্যাংকিং করেন?
  • বিকাশ, রকেট, নগদের মতো এমএফএস (MFS) ব্যবহার করেন?
  • আপনি ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন?
  • ব্যক্তিগত বা প্রফেশনাল কাজে ইমেইল আদান প্রদান করেন?

নিশ্চয়ই করেন! দেখুন, এগুলোর একটিও ব্যবহার করছেন মানেই আপনি ক্লাউড প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন! প্রতিটি ক্ষেত্রেই আপনার ডেটাগুলো বিশাল বিশাল ক্লাউড সার্ভারে সংরক্ষিত হয়। যে ডেটাগুলো আমরা পরবর্তিতে যেকোন সময়, যেকোন জায়গা থেকে ব্যবহার করতে পারি।

অনলাইন অ্যাকাউন্টিং বা ক্লাউড অ্যাকাউন্টিং কী?

ক্লাউড একাউন্টিং হলো আপনার ব্যবসার আয় ব্যয়ের হিসাব নিকাশ সহ যাবতীয় ডেটা অনলাইনে সংরক্ষণ করা এবং সম্পাদন করা। ব্যবসার এই ডেটাগুলোর নিরাপত্তা দিতে ব্যবহার করা হয় উন্নত প্রযুক্তি। আপনার ডেটা লগইন সাপেক্ষে শুধুমাত্র আপনি বা আপনার অনুমোদিত কোন ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ দেখতে পারবে না। বর্তমান সময়ে ব্যবসায় বহুল ব্যবহৃত ক্লাউড অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার অনেক ক্ষেত্রে অনলাইন অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার হিসেবে পরিচিত।

অনলাইন অ্যাকাউন্টিং কীভাবে কাজ করে?

ব্যবসার হিসাব তো আপনি রাখেনই। হয়তো টালিখাতা বা ডাইরিতে লিখে রাখেন কিংবা ল্যাপটপ/কমপিউটারের স্প্রেডশিটে ডকুমেন্ট আকারে রাখেন। এই হিসাব রাখার কাজটিই অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে করা হয়।

  • ক্লাউড বা অনলাইন একাউন্টিং সফটওয়্যার এ আপনার ইনপুট করা সকল ডেটা যেকোনো ওয়েব ব্রাউজার এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা যায়।
  • কারণ, আপনি ক্লাউড একাউন্টিং সফটওয়্যার এ অ্যাকাউন্ট খুলে ডেটা ইনপুট করা মানেই সেগুলো সার্ভারে সেভ হয়ে যাওয়া।
  • এখন আপনি যেকোন জায়গা থেকে, যেকোন সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করে আপনার অ্যাকাউন্টে যেতে পারবেন এবং ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারবেন।
  • আপনি চাইলেই এই ক্লাউড অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারের সাথে বিভিন্ন পেমেন্ট মেথড যুক্ত করে আর্থিক লেনদেন করতে পারেন।

যেটা আপনি আপনার টালিখাতা ও ডাইরিতে লিখে রাখলে কিংবা ল্যাপটপ বা কমপিউটারের স্প্রেডশিটে ডকুমেন্ট আকারে রাখলে করতে পারবেন না।

সাধারণ অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার এবং ক্লাউড একাউন্টিং সফটওয়্যার

এ পর্যায়ে ক্লাউড ভিত্তিক একাউন্টিং সফটওয়্যার এবং ডেস্কটপ ভিত্তিক একাউন্টিং সফটওয়্যারের মধ্যে সাধারণ পার্থক্যটুকু জেনে নেই।

ক্লাউড একাউন্টিং সফটওয়্যার:
ক্লাউড বেসড মানে হলো ইন্টারনেট ব্যবহার করে ওয়েব সার্ভারে তথ্য ও প্রোগ্রাম সংরক্ষণ করা। এখানে আপনার ইনপুট করা সকল ডেটা একটি কেন্দ্রিয় সার্ভারে সংরক্ষিত থাকবে। ব্যবসার হিসাব রাখার সফটওয়্যারটি আপডেট এবং ডেটা সিঙ্ক করবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এখানে আপনি সকল কাজ অনলাইনে করবেন। ইন্টারনেট হলো ক্লাউড ভিত্তিক সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রধান শর্ত।
ডেস্কটপ নির্ভর একাউন্টিং সফটওয়্যার:
ডেস্কটপ নির্ভর সফটওয়্যার হলে আপনার ব্যবসার সকল ডেটা আপনার কমপিউটারে বা হার্ডড্রাইভে সংরক্ষিত থাকবে। মানে, আপনার ডেটা বা তথ্যের নিরাপত্তা বিধান আপনাকেই করতে হবে। আপনি যেভাবে চাইবেন ঠিক সেভাবেই সফটওয়্যারটি আপডেট করতে পারবেন।

ব্যবসায় ক্লাউড সফটওয়্যার ব্যবহারের সুবিধা

ব্যবসা পরিচালনার সাথে দক্ষতা, দ্রুততা এবং নির্ভুলতা যুক্ত করতে চাইলে অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহারের বিকল্প নেই। ক্লাউড অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার আপনাকে জটিল কাজের সহজ ও স্মার্ট সমাধান দেয়। এই  সফটওয়্যারগুলো ব্যবহারের অনেক সুবিধার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি তুলে ধরা যাক-

ডেটা নিরাপত্তা: ক্লাউড একাউন্টিংয়ে ডেটা নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রতিটি ইউজারের ডেটা এন্ড টু এন্ড এনক্রিপটেড থাকে। এছাড়া ক্লাউড সার্ভারে ডেটা হারিয়ে যাওয়ার কোন ভয় প্রায় নেই। যেটা ম্যানুয়াল যেকোন পদ্ধতিতে আছে। অটো সিঙ্ক করার কারণে ব্যবসার প্রতিটি ডেটা সার্ভারে অটো আপডেট হয়ে যায়। ফলে, আপনার ব্যবসার সর্বোচ্চ ডেটা সিকিউরিটি নিশ্চিত হয় এবং আরও স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা পরিচালনা করা যায়!

অটো আপডেট সুবিধা: ক্লাউড একাউন্টিং সফটওয়্যার আপডেট ও ইন্সটল স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে যায়। সফটওয়্যার ও ডেটার কোন পরিবর্তন হলে অটো সিঙ্ক হয়ে সেটা সার্ভাবে সেভ হয়ে যায়।

তাৎক্ষণিক ডেটা অ্যাক্সেস সুবিধা: ক্লাউড অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহার করলে সেকোন সময়, যেকোন জায়গায় বসে আপনি আপনার ব্যবসার ডেটা নিয়ে কাজ করতে পারবেন। আপনাকে শুধু ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

পেমেন্ট মেথড যুক্ত করার সুুবিধা: একাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবসার যেকোন আর্থিক লেনদেনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। ক্লাউড/অনলাইন একাউন্টিং সফটওয়্যারে বিভিন্ন পেমেন্ট মাধ্যম যুক্ত করার সুযোগ আছে। ফলে কম সময়ে ব্যবসার আয় ব্যয়ের হিসাব করা সহজ হয়েছে।

বিজনেস রিপোর্ট দেখার সুবিধা: আপনি চাইলেই আপনার ব্যবসার বর্তমান অবস্থা দেখতে পারবেন। বর্তমান মূলধন কত, নির্দিষ্ট সময়ের আয় ব্যয়, নির্দিষ্ট পণ্য থেকে আয় ব্যয়, নির্দিষ্ট সময়ের সার্বিক লাভ লোকসান ইত্যাদি জানা খুব সহজ।

একাধিক ইউজার সুবিধা: ব্যবসা পরিচালনার জন্য একাধিক ইউজার বা ব্যবহারকারী নিয়োগ দেয়া যায়। যে সুবিধা শুধুমাত্র ক্লাউড একাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহার করলেই পাওয়া যায়।

অটো ক্যালকুলেশন সুবিধা: ব্যবসার হিসাব করতে বাড়তি কোন ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে হয় না। ডেটা ইনপুট করলেই ক্যালকুলেশন অটো হয়ে যায়।

সহজ ও সাশ্রয়ী: একাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহার করা যেমন সহজ, তেমনি খরচও অনেক কম। নামমাত্র সাবস্ক্রিপসন ফি দিয়ে মাসিক বা বাৎসরিক প্ল্যান কেনা যায়।

বাংলাদেশের জন্য আদর্শ ক্লাউড একাউন্টিং সফটওয়্যার- হিসাবপাতি

ক্লাউড প্রযুক্তির কল্যাণে একাউন্টিং সফটওয়্যারগুলোতে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত হয়েছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই পিছিয়ে না থেকে, ক্লাউড একাউন্টিং সফটওয়্যার বা অনলাইন অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহার শুরু করুন। এখন নিশ্চয়ই প্রশ্ন করবেন, ব্যবসার হিসাব রাখতে কোন একাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহার করা ভালো হবে?
উপরের সকল সুবিধা সহ বাংলাদেশের জন্য একটি আদর্শ একাউন্টিং সফটওয়্যারের খোঁজ দিয়ে রাখি। দেশের সবচেয় সহজ ও সাশ্রয়ী অনলাইন একাউন্টিং অ্যাপ হিসাবপাতি। হিসাবপাতি অ্যাপটি নিশ্চিন্তে ব্যবসা পরিচালনার কাজে ব্যবহার করা শুরু করে দিতে পারেন। দেরি না করে, আজই ডাউনলোড করুন হিসাপাতি অ্যাপ। প্রয়োজনে একাউন্টিং সফটওয়্যার নির্বাচনের করার আগে আরও পড়ুন- ব্যবসার হিসাব রাখার সফটওয়্যার নির্বাচন করবেন কীভাবে?

Search
সাম্প্রতিক পোস্টসমূহ
আজই আমাদের অ্যাপ ডাউনলোড করুন
অনলাইন বা অফলাইনে যেকোন জায়গা থেকে সহজেই আপনার দৈনন্দিন ব্যবসায়িক লেনদেন পরিচালনা করুন।