সারাবিশ্বে ই-কমার্স ব্যবসার জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে! বাংলাদেশেও এই খাতের দ্রুত প্রসার ঘটছে। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে অনলাইন কেনাকাটার চাহিদা বাড়ছে, ফলে ই-কমার্স ব্যবসায় বিনিয়োগের সুযোগও বেড়েছে। তবে বিনিয়োগের আগে ই কমার্স এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে ধারণা থাকাটা জরুরি। বাংলাদেশের ই-কমার্সে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা এবং ক্রেতাদের অনলাইন কেনাকাটার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি বিনিয়োগের জন্য একটি লাভজনক খাত হয়ে উঠেছে। কিন্তু কিছু প্রতারণা, অনলাইন নিরাপত্তার অভাব এবং নির্ভরযোগ্য সরবরাহ ব্যবস্থার অভাবের কারণে কিছু অসুবিধাও রয়েছে।
এই ব্লগে আমরা ই-কমার্স কী, কেন বিনিয়োগ করবেন, এর সুবিধা ও অসুবিধা এবং সফলতা পাওয়ার জন্য কার্যকর কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করবো।
ব্লগে যা থাকছে-
ই-কমার্স কী?
ই-কমার্স (E-commerce) বা ইলেকট্রনিক কমার্স হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার ক্রয়-বিক্রয় করা। এটি ব্যবসা পরিচালনার একটি প্রযুুক্তিনির্ভর পদ্ধতি যা গ্রাহকদের ঘরে বসেই কেনাকাটা করার সুযোগ তৈরি করে দেয়।
ই-কমার্সের প্রধান ধরনসমূহ:
- B2B (Business to Business): এক ব্যবসায়ী থেকে অন্য ব্যবসায়ীর কাছে পণ্য বা সেবা বিক্রি করা।
- B2C (Business to Consumer): ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি গ্রাহকের কাছে পণ্য বা সেবা বিক্রি করা।
- C2C (Consumer to Consumer): এক গ্রাহক থেকে অন্য গ্রাহকের কাছে পণ্য বা সেবা বিক্রি (যেমন- বিক্রয় ডটকম, ফেসবুক মার্কেটপ্লেস)।
- D2C (Direct to Consumer): প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে সরাসরি ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রি।
ই-কমার্স ব্যবসায় কেন বিনিয়োগ করবেন?
বাংলাদেশে ই-কমার্স জনপ্রিয় হওয়ার মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে সহজ লেনদেন ব্যবস্থা, মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সহজলভ্যতা। অনলাইন ব্যবসায় বিনিয়োগের কিছু কারণ-
- কম মূলধনে ব্যবসার সুযোগ: ই-কমার্স ব্যবসার জন্য বড় অঙ্কের বিনিয়োগের দরকার হয় না। ছোট উদ্যোগেও অনলাইনে ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
- সারা দেশে গ্রাহক পাওয়া যায়: ই-কমার্স ব্যবসার মাধ্যমে আপনি দেশব্যাপী গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে পারেন।
- সার্বক্ষণিক খোলা থাকে: অনলাইন স্টোর ২৪/৭ খোলা থাকে, যা বিক্রয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- ডিজিটাল মার্কেটিং সুবিধা: ফেসবুক, গুগল অ্যাডস ও এসইও (SEO) ব্যবহার করে সহজেই প্রচার করা যায়।
- কম অপারেশনাল খরচ: দোকান বা শোরুম ভাড়া, কর্মচারী নিয়োগ এবং অন্যান্য ব্যয়ের তুলনায় অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা করার খরচ অনেক কম।
বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার সুবিধা
ই-কমার্স ব্যবসার মাধ্যমে আপনি স্বল্প মূলধনে অনলাইন স্টোর চালাতে পারেন এবং যেকোনো জায়গা থেকে পণ্য বিক্রি করতে পারেন। তবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা, প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা এক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ! চলুন দেখি বাংলাদেশে ই কমার্স এর সুবিধা ও অসুবিধা –
১. ই-কমার্স বাজার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে
বাংলাদেশে ই-কমার্স খাত দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রতিদিন নতুন ক্রেতারা অনলাইন কেনাকাটার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। কিছু কিছু পণ্য ও সেবা অনলাইন ছাড়া এখন আর ভাবাই যায় না। যেমন- ট্রেন বাসের টিকিট, দেশি বিদেশি বই ইত্যাদি।
২. ডিজিটাল পেমেন্ট সহজলভ্য হয়েছে
বিকাশ, নগদ, রকেট এবং অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে লেনদেন সহজ হয়েছে। শহর থেকে গ্রাম, একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী এখন ডিজিটাল পেমেন্টে অভ্যস্ত। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে দেশের ই-কমার্স খাতে।
৩. প্রতিযোগিতামূলক মার্কেট
এটাকে অনেকে অসুবিধা মনে করেন, কিন্তু সত্যটি হলো প্রতিযোগিতামূলক বাজার মানেই, একটি চমৎকার ব্যবসা বান্ধব পরিস্থিতি। প্রচুর ব্যবসায়ী থাকলেও সঠিক মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব। তাছাড়া এই মার্কেটে যেকেউ তার ব্যবসা প্রসারের সুযোগ পায়।
৪. সরকারি নানা প্রণোদনা ও সহায়তা
সরকারের ই-কমার্স নীতিমালা, ই-পেমেন্ট সিস্টেম এবং স্টার্টআপ সাপোর্টের কারণে এটি বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় খাত। বাংলাদেশের সরকার চায় দেশে একটি ভালা ই-কমার্স সেক্টর গড়ে উঠুক। তাই তারা এই সেক্টরে ব্যবসায়ীদের জন্য এখন অবধি সহজ ও সাশ্রয়ী প্রবেশ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে রেখেছে।
৫. ড্রপশিপিং ও অনলাইন ডেলিভারি সুবিধা
আপনি চাইলেই নিজস্ব স্টক বা মাল ছাড়াই বিভিন্ন সরবরাহকারীর পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। এটা একটি অসাধারণ সুযোগ! মানে আপনার নিজস্ব পণ্য থাকা লাগবে না, আপনার নিজের টাকায় পণ্য মজুতও করা লাগবে না। আপনি আরেক ব্যবসায়ী বা প্রস্তুতকারকের পণ্য বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করতে পারবেন।
বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার অসুবিধা
১. প্রতারণা ও স্ক্যাম
কিছু অনলাইন বিক্রেতার প্রতারণার কারণে গ্রাহকের আস্থা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এটাই এখন বাংলাদেশের অনলাইন খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা।
২. ডেলিভারি সমস্যার সমাধান দরকার
বাংলাদেশের অনেক এলাকায় দ্রুত ডেলিভারি দেওয়া কঠিন। কমিউনিকেশন সহজ এমন এলাকাতে অনেক ডেলিভারি সার্ভিস কাজ করছেন, কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই সেবা পাওয়া এখনও কঠিন। তবে দ্রুতই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে।
৩. প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব
অনেক ব্যবসায়ী প্রযুক্তির সাথে পুরোপুরি খাপ খাওয়াতে পারছেন না। তারা অফলাইন বা ফিজিক্যাল ব্যবসায় বেশ ভালো কিন্তু অনলাইনে ভালো করতে পারছেন না। এই প্রযক্তিগত গ্যাপ পূরণ হতে কয়েক বছর সময় লাগবে।
৪. মানসম্পন্ন সার্ভিস ও গ্রাহক সেবার ঘাটতি
ভালো গ্রাহক সেবা না থাকলে ব্যবসার প্রতি কাস্টমারের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে যেতে পারে। আর একবার গ্রাহকের বিশ্বাস ভাঙ্গলে তাকে ফিরিয়ে আনা মুশকিল। এটা অনলাইন ব্যবসার একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
৫. রিটার্ন পলিসির জটিলতা
খুবই সামান্য ব্যাপার মনে হতে পারে, কিন্তু এটা বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা। অনেক ই-কমার্স ব্যবসায়ই পণ্য ফেরত নেওয়ার উপযুক্ত নীতিমালা রাখে না। যেহুতু এটা অনলাইন একটা মার্কেটপ্লেস, পণ্য হাতে ধরে দেখা যায় না তাই গ্রাহকবান্ধব ভালো রিটার্ন পলিসি বা ফেরত নীতিমালা থাকা জরুরি।
ই-কমার্স ব্যবসায় সফলতা পাওয়ার টিপস
- প্রথমেই ভালোভাবে মার্কেট রিসার্চ করুন। কোন পণ্য বা সেবা জনপ্রিয় তা জানার জন্য ভালোভাবে গবেষণা করুন। এবার সেখান থেকে আপনি কোন পণ্য বা সেবা নিয়ে কাজ করতে পারবেন তা খুঁজে বের করুন।
- গুণগত গ্রাহক সেবায় মনোযোগ দিতে হবে। দ্রুত ও ভালো কাস্টমার সাপোর্ট প্রদান করলে আপনার ব্যবসা টেকসই হবে।
- ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করুন। যেমন- SEO, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এবং কনটেন্ট মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং, গুগল অ্যাডস ইত্যাদি।
- বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে তুলতে ভালো রিভিউ, দ্রুত ডেলিভারি এবং নিরাপদ পেমেন্ট অপশন রাখুন।
- নির্ভরযোগ্য ডেলিভারি পার্টনার বেছে নিন। পণ্য দ্রুত ও নিরাপদে পৌঁছানোর জন্য ভালো কোম্পানির সার্ভিস ব্যবহার করুন।
- রিটার্ন ও রিফান্ড নীতিমালা নির্ধারণ করুন। গ্রাহকদের আস্থা অর্জনের জন্য সহজ ও গ্রহণযোগ্য রিটার্ন নীতিমালা রাখুন। এতে আখেরে আপনারই লাভ হবে।
- বাজার বিশ্লেষণ করে পণ্য বা সেবার প্রতিযোগিতামূলক দাম নির্ধারণ করুন।
- একটি ভালো ওয়েবসাইট তৈরি করুন। টিকে থাকতে হলে ব্যবহারকারী-বান্ধব এবং মোবাইল রেসপন্সিভ ওয়েবসাইট অপরিহার্য।
- অনলাইন পেমেন্ট ও গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
- গ্রাহকের প্রতিক্রিয়া বা ফিডব্যাক ও বিক্রির তথ্য বিশ্লেষণ করে নিয়মিত পরিবর্তন আনুন।
- ব্যবসার শুরু থেকে অবশ্যই একটি ভলো মানের হিসাবরক্ষণ অ্যাপ ব্যবহার করুন। বাংলাদেশের জন্য এমন একটি অ্যাপ হিসাবপাতি।
ই-কমার্স ব্যবসা বাংলাদেশে দিন দিন আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। তাই বিনিয়োগের আগে ই কমার্স এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানা জরুরি। এটি কম বিনিয়োগ এবং খরচে বড় একটি বাজার ধরার সুযোগ করে দেয়। সফল হতে হলে ভালো মার্কেট রিসার্চ, গ্রাহক সেবা, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং নিরাপদ লেনদেন ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
ডেমো দেখে সহজ তিনটি ধাপে হিসাবপাতি’তে যাত্রা শুরু করুন!
- ১ম ধাপ- হিসবাপাতি’তে সাইন আপ করুন:
প্রথমেই হিসাবপাতি’র ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার ব্যবসার জন্য একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। অথবা গুগল প্লে স্টোর থেকে হিসাবপাতি অ্যাপটি ডাউনলোড করুন এবং রেজিস্ট্রেশন করে ফেলুন। হিসাবপাতি’তে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং এটি সম্পূর্ণ ফ্রি!
- ২য় ধাপ- আপনার কোম্পানি সেট-আপ করুন:
সাইন আপ করে প্রথমেই মালিক হিসেবে আপনার কোম্পানির প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ব্যবসার প্রোফাইল সেট-আপ করুন। তারপর ইনভেনটরি থেকে শুরু করে ইউনিট, ক্রয়-বিক্রয়, বাকি বকেয়া, ইনভয়েস এবং লেনদেন সহ ব্যবসার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সেট-আপ করুন। এরপর শুরু করুন প্রতিদিনের লেনদেন আপডেট রাখার কাজ।
- ৩য় ধাপ- হিসাবপাতি’র বিভিন্ন ফিচার উপভোগ করুন:
হিসাবপাতি’তে ব্যবসার হিসাব রাখা শুরু করার পরে, প্রয়োজনীয় এবং ইউনিক ফিচারগুলো ব্যবহার করতে থাকুন। যেমন- ইনভয়েস, বারকোড স্ক্যানার, ইউনিট, ব্যয় ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।
হিসাবপাতি’র ব্যবহারবিধি ও ফিচারের বিস্তারিত বুঝতে ইউটিউবে বাংলায় ডেমো ভিডিও দেখুন।
জমা খরচের ডিজিটাল খাতা- হিসাবপাতি’র ডেমো
হিসাবপাতি’র সাবস্ক্রিপশন ফি মাত্র ৯৯ টাকা থেকে শুরু!
হিসাবপাতি বাংলাদেশের সবচেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী হিসাবরক্ষণ অ্যাপ। এর সাবস্ক্রিপশন ফি মাসিক ও বাৎসরিক দুটি মেয়াদে এবং তিনটি সুলভ প্যাকেজে ভাগ করে নির্ধারণ করা হয়েছে।
- ০১. বেসিক প্যাকেজ: বেসিক প্যাকেজটি সম্পূর্ণ ফ্রি! মানে, আপনি সাবস্ক্রিপশন কেনার আগে ফ্রিতে অ্যাপটি ব্যবহার করে দেখতে পারছেন।
- ০২. প্রিমিয়াম প্যাকেজ: প্রিমিয়াম প্যাকেজের মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি মাত্র ৯৯ টাকা এবং এই প্যাকেজের বাৎসরিক সাবস্ক্রিপশনে আছে ১৭% ডিসকাউন্ট! এতে এক বছরে খরচ পড়বে মাত্র ৯৯৯ টাকা!
- ০৩. বিজনেস প্যাকেজ: বিজনেস প্যাকেজর মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি মাত্র ১৯৯ টাকা। এই প্যাকেজেও বাৎসরিক সাবস্ক্রিপশনে প্রিমিয়ামের মতোই আছে ১৭% ডিসকাউন্ট! তাই এক বছরে খরচ পড়ছে মাত্র ১৯৯০ টাকা!
হিসাবপাতি অ্যাপের সকল প্যাকেজের ফিচার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আজই বেছে নিন আপনার পছন্দের প্যাকেজটি! আপনার ব্যবসার জন্য শুভকামনা!