ব্যবসায়িক জগতে একটি প্রচলিত কথা আছে- Cash Is King! মানে, ব্যবসার টিকে থাকা এবং সঠিকভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ক্যাশ ফ্লো বা নগদ অর্থের প্রবাহ। তবে ক্যাশ ফ্লো শুধুমাত্র ব্যবসার জন্য অর্থপ্রবাহের ধারাবাহিকতা নয়, এটি ব্যবসার পরিচালনা, অগ্রগতি এবং সফলতা অর্জনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্ট হলো ব্যবসার এই অর্থ বা টাকার প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করা। সেই সাথে সঠিকভাবে টাকার ব্যবহার এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিশ্চিত করা।
আজকের ব্লগে আমরা আলোচনা করবো ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্ট কী, কেনো এটি এতো গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনার ব্যবসায় এটি কীভাবে প্রভাব ফেলে? সাথে আমরা দেখাবো, কীভাবে হিসাবপাতি অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি সহজেই ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্ট করবেন।
ব্লগে যা থাকছে-
ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্ট কী?
ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্ট হলো ব্যবসায় নগদ অর্থের আসা যাওয়া কিংবা আদান-প্রদানকে নিয়ন্ত্রণ/পরিচালনা করা। সহজভাবে বললে, এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে ব্যবসায়িক আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। এতে করে ব্যবসার প্রয়োজনীয় ব্যয় পরিচালনা করার জন্য পর্যাপ্ত নগদ অর্থ বা টাকা হাতে থাকে। তাই বলাই যায়, ক্যাশ ফ্লো ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্য হলো, ব্যবসার ব্যয় মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নগদ টাকার প্রবাহ নিশ্চিত করা।
সহজ ৪টি ধাপে ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্ট শুরু করুন!
১. আয়ের উৎস শনাক্ত করুন: ব্যবসার প্রতিদিনের বা মাসিক আয়ের উৎসগুলো চিহ্নিত করুন।
২. ব্যয়ের খাত শনাক্ত করুন: ব্যবসার বিভিন্ন খাতে ব্যয়টা কীভাবে হচ্ছে সেটার খোঁজ রাখুন এবং ব্যয়ে নিয়ন্ত্রণ রাখুন।
৩. খরচ নিয়ন্ত্রণ করুন: অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পরিহার করা এবং মুনাফা বাড়ানোর চেষ্টা করা। ’এক টাকা বাঁচানো মানে এক টাকা লাভ’ সূত্রে বিশ্বাস করা!
৪. শেষে ফলাফল বিশ্লেষণ করুন: শেষে ক্যাশ ফ্লো বা অর্থের আসা যাওয়া বিশ্লেষণ করে বর্তমান অবস্থার উপর ভিত্তি করে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
আপনার ব্যবসায় ক্যাশ ফ্লো বা অর্থের প্রবাহ কীভাবে প্রভাব ফেলে?
একটি ব্যবসায় ক্যাশ ফ্লো সঠিকভাবে পরিচালিত না হলে তার পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র! ক্যাশ ফ্লোতে বা টাকার যোগানে সমস্যা মানে আপনি ব্যবসার প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটানোর মতো নগদ অর্থ পাচ্ছেন না। যা ব্যবসাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। তবে সঠিকভাবে ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্ট করতে পারলে আপনার ব্যবসা শুধু টিকেই থাকবে না, বরং বৃদ্ধিও পাবে। চলুন দেখে নেয়া যাক, ব্যবসা কোন কোন সেক্টরে ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্টের প্রভাব কতটুকু-
- ব্যবসার স্থিতিশীলতা: ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে ব্যবসার সাধারণ ব্যয়গুলো সহজে সামাল দেয়া যায়। যেমন- কর্মচারীর বেতন, দোকান বা অফিস ভাড়া, স্টক বা মালামাল কেনা ইত্যাদির জন্য সময় মতো পর্যাপ্ত অর্থ সংরক্ষণ করা যায়।
- টেকসই উন্নয়ন: ক্যাশ ফ্লো বা নগদ টাকার প্রবাহ সঠিকভাবে ম্যানেজ করলে ব্যবসা টেকসই হয়। নতুন বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ থাকে। ফলে, নতুন প্রোডাক্ট তৈরি/কেনা, মার্কেটিং এবং নতুন মার্কেটে প্রবেশ করা সহজ হয়।
- লেনদেন পরিচালনা: ব্যবসায়িক যেকোনো লেনদেন ক্যাশ ফ্লো নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পর্কিত। ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্ট ঠিক না হলে লেনদেনের সমন্বয় করা কঠিন হয়ে যায়।
- ব্যবসায়িক ঝুঁকি কমানো: ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে ব্যবসার অপ্রত্যাশিত ব্যয় মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত অর্থ প্রস্তুত থাকে। এতে বিজনেস রিস্ক বা ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ব্যবসা সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারে।
- নতুন বিনিয়োগের সুযোগ: অর্থের প্রবাহ শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণে থাকলে ব্যবসায় নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়। এটি ভবিষ্যতের জন্য ব্যবসা বাড়ানোর রাস্তাকে প্রশস্ত করে।
ব্যবসার ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্টের টেকনিক শিখুন
ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্ট শক্ত হাতে সামলাতে কার্যকরী কিছু টেকনিক রয়েছে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য শিখে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন, কয়েকটি ইফেক্টিভ ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্ট টেকনিক নিয়ে আলোচনা করি-
১. ফরওয়ার্ড প্ল্যানিং বা আগাম পরিকল্পনা করা শিখুন
ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ব্যয়ের খাত ও পরিমান লিস্ট করুন এবং সেটা কভার করার জন্য পর্যাপ্ত ক্যাশ রেডি রাখুন। আগামী ৬ থেকে ১২ মাসের সম্ভাব্য আয় এবং ব্যয়ের একটি পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত, যাতে কোন খাতে কত টাকা প্রয়োজন হবে তা জানা থাকে।
২. খরচ কমানোর পরিকল্পনা নিয়ে ভাবুন
ব্যবসায়িক খরচ কমানোর উপর নজর রাখুন। অপ্রয়োজনীয় খরচ কাটছাঁট করা ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্টের অন্যতম সহজ উপায়। ফিক্সড খরচগুলো যেমন- রেন্ট, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি কীভাবে কমানো যায় তা নিয়ে চিন্তা করুন।
৩. ব্যবসায়িক বকেয়া সংগ্রহ করতে শুরু করুন
যারা আপনার কাছে টাকা পায় তাদের পাওনা দিয়ে দিন। আর যাদের কাছে বকেয়া টাকা পান, তাদের কাছ থেকে বাকির টাকা দ্রুত সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করুন। বেশি দিন বকেয়া থাকলে আপনার ব্যবসার ক্যাশ ফ্লোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সঠিক সময়ে ইনভয়েস পাঠানো এবং প্রয়োজন হলে বাকির মেসেজ পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।
৪. নির্ধারিত সময়ের আগে খরচ করা যাবে না
অতিরিক্ত খরচ এড়াতে আপনার নির্ধারিত সময়ের আগে কোনো বড় খরচ না করা উত্তম। ক্যাশ ফ্লো স্বাভাবিক রাখার জন্য কিছু ব্যয় বিলম্বিত করা যেতে পারে।
৫. ব্যাংক ঋণ বা ইনভেস্টরদের সাহায্য নিন
আপনার ব্যবসায় যদি অর্থের প্রয়োজন হয়, তবে ব্যাংক ঋণ বা বিনিয়োগকারীদের সাথে আলোচনা করে অর্থ সংগ্রহ করা যেতে পারে। কিন্তু এই অর্থগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে এবং আগের লেনদেন ম্যানেজমেন্ট এর উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
হিসাবপাতি অ্যাপের সাহায্যে ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্ট
বর্তমানের ডিজিটাল যুগে ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্টকে সহজ, নির্ভুল এবং দ্রুত করার জন্য সফটওয়্যার ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হিসাবপাতি একটি হিসাব রাখার অ্যাপ, যা আপনার বিজনেস ক্যাশ ফ্লো নিয়ন্ত্রণ এবং ম্যানেজমেন্টকে সহজ করে তুলতে পারে। হিসাবপাতি ব্যবহার করে ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্টকে সহজ করার উপায়-
- বিজনেস রিপোর্ট জেনারেশন: হিসাবপাতি দিয়ে সাপ্তাহিক, মাসিক এবং বার্ষিক রিপোর্ট তৈরি করতে পারবেন, যা ক্যাশ ফ্লো বিশ্লেষণের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
- ব্যবসার ব্যয়/খরচ পরিচালনা: হিসাবপাতি অ্যাপ দিয়ে সহজেই আপনার দৈনন্দিন ব্যয় ট্র্যাক করতে পারবেন। এতে করে আপনি কখন, কী পরিমাণ ব্যয় করেছেন তা জানতে পারবেন। ফলে ব্যয় কমানোর উপায়ও পেয়ে যাবেন।
- বকেয়া বাকির হিসাব করা: আপনার গ্রাহকের কাছে পাওনা দ্রুত সংগ্রহ করার সুবিধা পাবেন। কারণ, হিসাবপাতি গ্রাহকের বকেয়া টাকা ট্র্যাক করে রাখে। আপনি চাইলে কাস্টমারদের বাকির মেসেজ দিতে পারবেন। এবং প্রতিটি লেনদেনের ইনভয়েসে ইন্সট্যান্ট বাকির মেসেজ দিতে পারবেন।
- লাভ/ক্ষতির বিশ্লেষণ করা: পণ্য ও পণ্যের পার্টি অনুযায়ী লাভ বা ক্ষতির নির্ভুল হিসাব পাওয়া যাবে। লাভ ক্ষতির নির্ভুল হিসাব আপনাকে ক্যাশ ফ্লো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেবে এবং তা সঠিকভাবে পরিচালনা করার সুযোগ দেবে।
- রিয়েল-টাইম আপডেট: হিসাবপাতি অ্যাপ আপনাকে রিয়েল-টাইমে ক্যাশ ফ্লো সহ যেকোনো আপডেট দেয়। এতে করে ব্যবসার সঠিক অবস্থা আপনি মুহূর্তেই জানতে পারেন।
ক্যাশ ফ্লো সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে আপনার ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়ে যাবে এবং অপ্রত্যাশিত সমস্যা এড়ানো সম্ভব হবে। হিসাবপাতি অ্যাপের মাধ্যমে আপনি সহজেই ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজ করতে পারবেন, যা আপনার ব্যবসার উন্নতি এবং সফলতা নিশ্চিত করবে।
সহজ তিনটি ধাপে হিসাবপাতি’তে যাত্রা শুরু করুন!
- হিসবাপাতি’তে সাইন আপ করুন:
প্রথমেই হিসাবপাতি’র ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার ব্যবসার জন্য একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। অথবা গুগল প্লে স্টোর থেকে হিসাবপাতি অ্যাপটি ডাউনলোড করুন এবং রেজিস্ট্রেশন করে ফেলুন। হিসাবপাতি’তে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং এটি সম্পূর্ণ ফ্রি!
- আপনার কোম্পানি সেট-আপ করুন:
সাইন আপ করে প্রথমেই মালিক হিসেবে আপনার কোম্পানির প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ব্যবসার প্রোফাইল সেট-আপ করুন। তারপর ইনভেনটরি থেকে শুরু করে ইউনিট, ক্রয়-বিক্রয়, বাকি বকেয়া, ইনভয়েস এবং লেনদেন সহ ব্যবসার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সেট-আপ করুন। এরপর শুরু করুন প্রতিদিনের লেনদেন আপডেট রাখার কাজ।
- হিসাবপাতি’র বিভিন্ন ফিচার উপভোগ করুন:
হিসাবপাতি’তে ব্যবসার হিসাব রাখা শুরু করার পরে, প্রয়োজনীয় এবং ইউনিক ফিচারগুলো ব্যবহার করতে থাকুন। যেমন- ইনভয়েস, বারকোড স্ক্যানার, ইউনিট, ব্যয় ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। হিসাবপাতি’র ব্যবহারবিধি ও ফিচারের বিস্তারিত বুঝতে ইউটিউবে বাংলায় ডেমো ভিডিও দেখুন।
জমা খরচের ডিজিটাল খাতা- হিসাবপাতি’র ডেমো
হিসাবপাতি’র সাবস্ক্রিপশন ফি মাত্র ৯৯ টাকা থেকে শুরু!
হিসাবপাতি বাংলাদেশের সবচেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী হিসাবরক্ষণ অ্যাপ। এর সাবস্ক্রিপশন ফি মাসিক ও বাৎসরিক দুটি মেয়াদে এবং তিনটি সুলভ প্যাকেজে ভাগ করে নির্ধারণ করা হয়েছে।
- ০১. বেসিক প্যাকেজ: বেসিক প্যাকেজটি সম্পূর্ণ ফ্রি! মানে, আপনি সাবস্ক্রিপশন কেনার আগে ফ্রিতে অ্যাপটি ব্যবহার করে দেখতে পারছেন।
- ০২. প্রিমিয়াম প্যাকেজ: প্রিমিয়াম প্যাকেজের মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি মাত্র ৯৯ টাকা এবং এই প্যাকেজের বাৎসরিক সাবস্ক্রিপশনে আছে ১৭% ডিসকাউন্ট! এতে এক বছরে খরচ পড়বে মাত্র ৯৯৯ টাকা!
- ০৩. বিজনেস প্যাকেজ: বিজনেস প্যাকেজর মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি মাত্র ১৯৯ টাকা। এই প্যাকেজেও বাৎসরিক সাবস্ক্রিপশনে প্রিমিয়ামের মতোই আছে ১৭% ডিসকাউন্ট! তাই এক বছরে খরচ পড়ছে মাত্র ১৯৯০ টাকা!
হিসাবপাতি অ্যাপের সকল প্যাকেজের ফিচার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আজই বেছে নিন আপনার পছন্দের প্যাকেজটি! আপনার ব্যবসার জন্য শুভকামনা!