কিভাবে বাংলাদেশে একটি কলার খামার শুরু করবেন

বাংলাদেশে কলার খামার শুরু করার প্রক্রিয়া

কলা একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল। এছাড়াও এটা একটি লাভজনক ফসল। আপনি যদি একজন কৃষিমনা মানুষ হন এবং কোনোকিছু করে নিজেকে আত্মনির্ভর করে তুলতে চান তবে কলার খামার করা হতে পারে একটি ভালো বুদ্ধি। কিন্তু কলার খামার সম্পর্কে আপনার কি কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই? চিন্তা নেই, কারণ আমরা এখানে কিভাবে বাংলাদেশে একটি কলার খামার শুরু করবেন সেই বিষয়ে আলোচনা করবো।

বাংলাদেশে কলার খামারের লাভজনকতা

বাংলাদেশ একটি গ্রীষ্মপ্রধান দেশ, এবং এই দেশের জলবায়ু কলা উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। বাংলাদেশের যেসব জেলায় কলা চাষ হয় সেগুলো হলো নরসিংদী, বগুড়া, রংপুর, পাবনা, নাটোর, ফরিদপুর, নোয়াখালী, এবং খুলনা। যে জেলাগুলোতে বন্য কলা উৎপাদন হয় সেগুলো হলো বান্দরবান, মৌলভীবাজার, সিলেট, রাঙ্গামাটি, নেত্রকোণা, এবং খাগড়াছড়ি। উল্লেখিত জায়গাগুলোর মাটি কলা উৎপাদনের জন্য খুবই উর্বর।

নাটোরের অনেক উপজেলায় যেমন বারিয়াগ্রাম, সিংরা, এবং গুরদাসপুরের কৃষকরা কলা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন কারণ কলার উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ অনেক বেশী । বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা গভর্মেন্ট কলেজের প্রভাষক জহুরুল হক বলেছেন, তিনি এক একরের একটি জমিতে কলা চাষ করেছিলেন এবং সেই কলাগুলো ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকার মধ্যে বিক্রি করেছিলেন। তার প্রতি বিঘা জমিতে খরচ পড়েছিলো ১৮০০০ টাকা থেকে ১৯২০০ টাকার মধ্যে। কলার খামারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আপনি যদি একবার একটা কলা গাছ লাগান তবে, আপনি তা তিন থেকে চার ঋতু পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেন।

কৃষকরা প্রধানত বিভিন্ন ধরনের কলা চাষ করে থাকেন যেমন চম্পা, অনুপম, মানিক, এবং মেঘ সাগর কারণ এই ধরনের  কলাগুলো থেকে খুব তাড়াতাড়ি ফলন পাওয়া যায়। সবরীও একটি জনপ্রিয় কলার ধরন যা কৃষকরা চাষ করে থাকে। যখন কলাগাছগুলো ছোটো থাকে, তখন আপনার সেই জমিতে অন্যান্য সঙ্গী ফসল জন্মাতে পারেন এবং বহুমুখী আয়ের উৎস উপভোগ করতে পারেন। আবার, এই ফলের চাহিদা সারা বছর মোটামুটি একই থাকে এবং মূল্যও সন্তোষজনক থাকে।

তাই, সর্বোপরি, বাংলাদেশে কলার খামার একটি বেশ লাভজনক ব্যবসা। এখন, আপনি অবশ্যই কলার খামার কতোটা লাভজনক? এই প্রশ্নটির উত্তর পেয়েছেন।

কলা বাগান শুরু করার নিয়ম

আপনি হঠাৎ করেই কলা চাষের ব্যবসা বা অন্য যেকোন ধরনের ব্যবসা শুরু করতে পারেন না। প্রথমে, আপনাকে বিশেষ কিছু মূল বিষয়, এবং কলার খামারের ব্যবসার ব্যাপারে কিছু বিস্তারিত জানতে হবে যেমন বৃদ্ধির ধরন, মাটির গঠন, কলা চাষের উপযুক্ত সময়, পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ, পরিপূরক ফসল, সেচ পদ্ধতি, ফসল কাটা, বাজারজাতকরণ, এবং এমনই আরও আরও অনেক কিছু।

কলা বাগান শুরু করার পদ্ধতি জানতে নিচে উল্লেখিত ধাপগুলো অনুসরণ করুন।

১. ব্যবসায়িক পরিকল্পনা
২. প্রাথমিক মূলধন
৩. যথাযথ কৃষিভূমি খুঁজে বের করুন
৪. জমি পরীক্ষা
৫. জমিটি চাষের জন্য তৈরী করুন
৬. কলার বীজ সংগ্রহ করুন
৭. বীজের চিকিৎসা
৮. কলা চাষের উপযুক্ত সময়
৯. চাষ এবং ফাঁক রাখার ধরন
১০. সেচ
১১. পুষ্টি
১২. আগাছা নিয়ন্ত্রণ
১৩. আন্তঃফসল
১৪. রোগ এবং পোকামাকড় থেকে রক্ষা করুন
১৫. ফসল তুলুন
১৬. বাজারজাতকরণ
আসুন, এখন কলা বাগান করার পদ্ধতির এই ধাপগুলোকে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করি।

১. ব্যবসায়িক পরিকল্পনা

ব্যবসায়িক পরিকল্পনা আপনার জন্য একটি অত্যাবশ্যক বিষয় তা সে আপনি যে ব্যবসাই করুন না কেনো। ব্যবসাটি সত্যিকার অর্থে শুরু করার আগে, প্রথমেই, আপনার কলার খামারের ব্যবসার জন্য একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা লিখুন। ব্যবসায়িক পরিকল্পনাটি লেখার পর আপনার এলাকার সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন চালান।

আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনাটি ভালোভাবে গবেষণা করে করতে হবে। সবগুলো ধাপের মধ্যে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটাই নির্ধারণ করবে যে অন্যান্য ধাপগুলোতে আপনি কি করবেন। যদি আপনার কোনো আর্থিক সাহায্য লাগে, তবে এই পরিকল্পনাটি আপনি বিনিয়োগকারীদের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন। এই ধাপটিতে আছে:

  • প্রাথমিক মূলধন
  • মালামাল সংগ্রহ
  • পর্যাপ্ত মজুর এবং কৃষিজমি সংগ্রহ
  • পানি সরবরাহ
  • জৈব সার সংগ্রহ
  • তহবিল
  • অবস্থান
  • পরিবহন
  • মূল্য নির্ধারণ
  • প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি
  • ওষুধ এবং আরও অনেক কিছু।

২. প্রাথমিক মূলধন

টাকাই হলো সেই জ্বালানী যা আপনার ব্যবসাকে শুরু করতে এবং সামনে আগাতে সাহায্য করে। যখন আপনি কোনো ব্যবসা শুরু করবেন তখন আপনার হাতে কিছু টাকা থাকার প্রয়োজন, সেটা কলার খামারের ব্যবসাই হোক আর অন্য যেকোনো ব্যবসা। যদি টাকার কোনো অভাব হয়, তবে আপনি আপনার বন্ধু বা পরিবারের কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারেন, কারণ সেক্ষেত্রে কোনো কঠিন শর্ত বা বেশী সুদের হার থাকবে না।

আপনি ব্যাংক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও ঋণ নিতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে, শর্তগুলো অনেক কঠিন হবে এবং সুদের হার অনেক বেশী হবে। শুধু আপনার নিকটস্থ, নির্ভরযোগ্য একটি ব্যাংকের সাথে পরামর্শ করুন এবং তারাই আপনাকে বলে দেবে যে ঋণের জন্য আবেদন করতে আপনার কি কি কাগজপত্র লাগবে।

আপনি আপনার ব্যবসাটি একটি ছোটো মূলধন দিয়ে শুরু করতে পারেন, তারপর ক্রমান্বয়ে ব্যবসাটি বাড়াতে পারেন। যদি আপনার যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ থাকে, তবে আপনি আপনার ব্যবসাটি বড় আকারেই শুরু করতে পারেন, এটা সম্পূর্ণভাবে আপনার আর্থিক শক্তির ওপর নির্ভর করে। আপনি যে পরিমাণ মূলধন দিয়েই আপনার ব্যবসা শুরু করে থাকুন না কেনো, আপনার একটি শক্তিশালী পরিকল্পনা থাকতে হবে।

৩. যথাযথ কৃষিভূমি খুঁজে বের করুন

আপনাকে সবচেয়ে ভালো ফলন দিতে কলার খামারটির গ্রীষ্মকালীন জলবায়ুর অধীনে একটি উপযুক্ত কৃষিজমির প্রয়োজন। গ্রামীণ, উপশহর, বা দুর্গম এলাকায় জমি কেনার কথা বিবেচনা করুন কারণ এসব এলাকায় জমির দাম কম। আপনি কিছু কৃষকদেরও খুঁজে বের করতে পারেন যারা আপনার সাথে তাদের জমি ভাগ করে নিতে পারে। আপনার যদি অল্প মূলধন থাকে, তবে আপনি একটি জমিও লিয নিতে পারেন।

একটি জমি একক মালিকানায় কেনা বা অন্য কৃষকদের সাথে ভাগ করে নেয়া বা লিয নেয়ার আগে জমিটি উর্বর কিনা তা বিবেচনায় আনুন। কারণ আপনার ফলন মাটির উর্বরতার ওপর নির্ভর করবে। আপনাকে এসব কিছু আগেই খেয়াল করতে হবে, নাহলে আপনি একটি অনুর্বর জমিতে আপনার টাকা নষ্ট করবেন।

৪. মাটি পরীক্ষা

কলাগাছের টিকে থাকা এবং আপনাকে সর্বোচ্চ ফলন দেয়ার জন্য মাটি সব প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করে কিনা তা জানার জন্য মাটি ভালোভাবে পরীক্ষা করুন। কলা সবচেয়ে খারাপ থেকে সবচেয়ে ভালো প্রায় সব ধরনের জমিতেই জন্মায় কিন্তু তবুও ফলনে অনেকটা পার্থক্য হয়। কলা চাষের জন্য বেশী আর্দ্র, ভালো সেচ ব্যবস্থাসম্পন্ন্, উর্বর জমি সবচেয়ে ভালো।

আপনি যদি একটি ভালো ধরনের দোআঁশ মাটি পান যার পিএইচ মান ৬ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে হয়, তবে আপনি সোনায় সোহাগা। মাটিটিতে পর্যাপ্ত নাইট্রোজেন, ভালো পরিমাণে পটাশ, ফসফরাস, এবং অন্যান্য জৈব উপাদান থাকা প্রয়োজন। মাটিটি খুব বেশী অম্লীয়, বা ক্ষারীয় হওয়ার প্রয়োজন নেই।

আপনি যখন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে কলার খামার করবেন তখন অবশ্যই ভালোভাবে মাটি পরীক্ষা করবেন। মনে রাখবেন, লবনাক্ত, বালুময় মাটি, এবং চুনযুক্ত মাটিগুলো কলা চাষের জন্য সবচেয়ে খারাপ।

৫. জমিটি খামারের জন্য প্রস্তুত করুন

এখন, মাটি পরীক্ষার পর জমিটি খামারের জন্য প্রস্তুত করুন। মাটিটা পরিষ্কার করুন এবং চাষের জন্য তৈরী করুন। সব আগাছা সরিয়ে ফেলুন। আগাছা হাতে পরিষ্কার করুন অথবা ঝোপ পরিষ্কার করার উপায় অবলম্বন করুন।

ঝোপ পরিষ্কার করার পর মাটিটা ভালোভাবে সমান করুন। আপনি যদি একটি ছোটো খামারের জন্য হাতে খনন করতে চান, তবে একটি কুড়াল বা খনক ব্যবহার করুন। আপনার খামারটি যদি বড়ো হয়, তবে মাটি সমান করার জন্য খামারের যন্ত্রাদি যেমন লেজার লেভেলার, লাঙ্গল, এবং মই ব্যবহার করুন।

এখন, আপনি চাষের জন্য গর্তগুলো তৈরী করতে পারেন। আপনি গর্তগুলো খুঁড়বেন এবং সেগুলো সৌর বিকিরণের জন্য রেখে দেবেন যাতে সব পোকামাকড় এবং মাটি-বাহিত রোগগুলো যা আপনার গাছের বৃদ্ধিতে বাধার সৃষ্টি করে সেগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এটা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য বাতাস, দ্রবীভূত তরল উপাদান, এবং পুষ্টি উপাদান মাটিতে শোষিত হতে সাহায্য করে।

৬. কলার বীজ সংগ্রহ করুন

আপনার নিজের খামার তৈরী করতে অন্য একটি গাছের নার্সারি থেকে সবচেয়ে ভালো কলার বীজ সংগ্রহ করুন । কলার বীজ বিভিন্ন রকমের হতে পারে এবং আপনি যে ধরনটি ব্যবহার করবেন, তার ওপর নির্ভর করবে যে আপনার কলাগুলো দেখতে কেমন হবে। নার্সারিতে সবার আগে বীজটি বুনুন। তারপর যে আর্দ্র মাটিটি আপনি ইতিমধ্যেই তৈরী করেছেন সেখানে তা স্থানান্তর করুন এবং নিশ্চিত করুন যে সেগুলো একে অপর থেকে যথেষ্ট দূরত্বে বোনা হয়েছে।

কলার বীজ বলতে ছোট অঙ্কুরকে বোঝায় যা কলাগাছের নিচে থেকে বের হয়। যেখানেই চাষ করুন না কেনো প্রত্যেক জাতের কলারই বীজ আছে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই, আপনার নিজের খামার শুরু করতে আপনাকে অন্য একটি কলার খামার থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।

৭. বীজের চিকিৎসা

কলার বীজগুলোকে মাটিতে রোপণের আগে সেগুলোকে ভালোভাবে কেটে এবং চিকিৎসা করে নিন। আপনাকে ভালোভাবে সেগুলোর চিকিৎসা করতে হবে যাতে সব রোগ এবং পোকামাকড় নিশ্চিহ্ন হয় যা বীজের মূলকে আক্রান্ত করতে পারে। প্রধানত, নেমাটোড, এবং কান্ডে গর্তকারী পোকাগুলো বীজকে আক্রান্ত করে এবং বীজের মূল থেকে কান্ডে পানি এবং পুষ্টি উপাদানের যাতায়াত ব্যাহত করে। আপনি যদি বীজ রোপণের আগে এই সমস্যাগুলোর সমাধান না করেন, তবে এগুলো আপনার কলার ফলন কমিয়ে দেবে বা আপনার প্রকল্পটি ব্যর্থ হবে।

আপনি ফুটন্ত পানি দিয়ে বা লাল অ্যাকালিফা গাছের পাতার রস দিয়ে বীজের চিকিৎসা করতে পারেন।

ফুটন্ত পানি চিকিৎসা
বীজের মূলগুলো ফুটন্ত পানিতে ৩০ সেকেন্ড ভিজিয়ে রাখুন। ৩০ সেকেন্ড পর, সেগুলো পানি থেকে তুলে ফেলুন, এবং সেগুলো বোনার আগে এক ঘন্টার জন্য মুক্ত বাতাসে রাখুন।

লাল অ্যাকালিফা গাছের পাতার রস
লাল অ্যাকালিফা গাছের পাতা (৯০ গ্রাম) নিন এবং সেগুলো পানিতে (১০ লিটার) ২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। এবার, কলার বীজ পাতাসহ সেই দ্রবণে আরও ২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর, সেখান থেকে বীজ সরিয়ে ফেলুন এবং বোনার আগে ১০ মিনিটের জন্য মুক্ত বাতাসে শুকানোর জন্য রাখুন।

৮. কলা চাষের উপযুক্ত সময়

কলা চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো গ্রীষ্মের শুরু, বা বসন্তের শেষ মে মাস থেকে জুন মাসের মধ্যে অথবা হেমন্তের সময় সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে । এই খামারের প্রাথমিক ফলাফল নির্দেশ করে যে, তাপমাত্রার বৃদ্ধি কলাগাছে রোগের বৃদ্ধি ঘটায়। আবার, বৃষ্টিপাতের বন্টন কলাগাছের রোগের ভয়াবহতার ওপর বিরাট ভুমিকা পালন করে। কলাচাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী তাপমাত্রা হলো ১০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।

৯. চাষ এবং ফাঁক রাখার ধরন

কলাগাছগুলোর আকার বিভিন্ন ধরনের হয়, তাই তাদের আকার অনুযায়ী তাদের মাঝে ফাঁকা রাখুন। একটি বীজ সোজাভাবে একটি গর্তের মাঝখানে বুনুন যাতে সিউডো কান্ডের ৫ ‍সেমি. মাটির ওপর থাকে। সফলভাবে বীজটি গর্তে রাখার পর, তা মাটি দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিবেন এবং বীজের আশেপাশে বেশ ভালোভাবে চেপে দেবেন যাতে বাতাস ঢোকার জন্য ফাঁকা জায়গা না থাকে।

সাধারণ কলা এবং বামুন কলা আকারে ভিন্ন হয়। তাই তাদের মধ্যেকার ফাঁক রাখার ধরনও ভিন্ন হবে।

সাধারণ কলার জন্য ফাঁক রাখার ধরন
বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে, সম্পূর্ণ বা সাধারণ আকারের কলার একটি ১২ ফুট ফাঁকের প্রয়োজন হয়। আপনি ৮ থেকে ১২ ফুট ফাঁক রেখে লাগাতে পারেন বা ১০ থেকে ১১ ফুট জায়গাও রাখতে পারেন যাতে আপনার ফলনের মানের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে।

বামুন কলার জন্য ফাঁক রাখার ধরন
বামুন কলাগুলোকে একে অপরের কাছাকাছি লাগান কারণ তাদের আকার সম্পূর্ণ বা সাধারণ কলার থেকে ছোটো। তাদেরকে ৮ ফুট ফাঁকা জায়গা রেখে রোপণ করুন। বিরল ক্ষেত্রে, আপনি তাদেরকে ১২ ফুট পর্যন্ত ফাঁকা জায়গা রেখে লাগাতে পারেন।

ক্যাভেন্ডিশ বামুন কলার মাটির ওপর কমপক্ষে ৩.২৪ মিটার জায়গার প্রয়োজন হয়। আপনি এটা অর্জন করতে পারবেন যদি আপনি এইভাবে ফাঁক রাখতে পারেন: “১.৮ x ১.৮মি বা ২.৭ x ১.২মি” ।

ফাঁকা রাখার ধরন
কলাগুলো তাদের ফাঁকা রাখার ধরনের দিক থেকে ভিন্ন হয়। আপনি জোড়ায় বা আলাদাভাবে সারিতে লাগাতে পারেন, আবার কিছু চতুর্ভূজ বা বর্গক্ষেত্র আকারে লাগাতে পারেন। আপনি যেকোন ধরন অনুসরণ করতে পারেন শুধু নিশ্চিত করতে হবে যে, সেই ধরনটি বীজের টিকে থাকা এবং সবচেয়ে ভালো ফলন দিতে সহায়ক।

১০. সেচ

বীজ বোনার সাথে সাথেই জমিটি সেচ করুন। চার দিন পর সম্পূর্ণভাবে সেচ করুন। আপনি যদি ভেজা জমির কলা চাষ করে থাকেন তবে প্রতি ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর সেচ করুন। যদি আপনি বাগান জমির কলা চাষ করে থাকেন তবে, সপ্তাহে এক দিন সেচ করুন। জমিতে সার দেয়ার পর প্রতিবার জমিটি ভালোভাবে সেচ করুন।

ফোঁটায় ফোঁটায় সেচ প্রয়োগ করুন প্রায় ৫ থেকে ১০ লিটার প্রতিটি গাছের জন্য প্রতিদিন বোনার পর থেকে চার মাস পর্যন্ত; ১০ থেকে ১৫ লিটার প্রতিটি গাছের জন্য প্রতিদিন পঞ্চম মাস থেকে অংকুর আসা পর্যন্ত; এবং ১৫ লিটার প্রতিটি গাছের জন্য প্রতিদিন  অংকুরিত হওয়া থেকে ফসল তোলার ১৫ দিন আগে পর্যন্ত।

১১. পুষ্টি

আপনি যে সার দেবেন আপনার কলাগাছগুলো তা থেকে তাদের পুষ্টি পাবে। কলাগাছগুলোর বেশ উঁচু মানের পুষ্টির প্রয়োজন। তাদের প্রতিটি গাছের জন্য প্রতি বছর প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম নাইট্রোজেন, ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ফসফরাস, এবং ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম পটাশিয়াম প্রয়োজন। অন্যান্য সবজিথেকে কলাগাছ প্রতি একক জমিতে বেশি পরিমাণে পুষ্টি উপাদান শোষণ করে।

সাধারণত: নাইট্রোজেনের অভাব গাছের বৃদ্ধিকে ভয়াবহভাবে ব্যাহত করে এবং গাছের পুরনো পাতাগুলোতে ক্লোরোসিস রোগ হয়।

১২. আগাছা নিয়ন্ত্রণ

প্রথম চারমাস নিয়মিতভাবে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, আপনি কোদাল ব্যবহার করতে পারেন। তাই, প্রতি বছর চারবার কোদাল চালালে তা আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকরী হবে। আপনি সমন্বিতভাবে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন কলার ফসল বা মাটির সুরক্ষার জন্য বিশেষ কোন ফসল জন্মিয়ে, হার্বিসাইড বা একধরনে আগাছানাশক গাছ ব্যবহার করে, হাতে আগাছা নিধন করে এবং আন্তঃফসল জন্মিয়ে।

উপরোল্লেখিত প্রতিটি প্রক্রিয়াই উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। আপনি বরবটির চাষ দুইবার করেও কার্যকরভাবে আগাছার বৃদ্ধি দমন করতে পারেন।

১৩. আন্তঃফসল

কলা বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে আন্তঃফসল প্রয়োগ করতে পারেন। সফলভাবে ফুল এবং সবজি ফসলের আন্তঃফসল চাষ করুন যেমন গাঁদা, রজনীগন্ধা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, কাঁচামরিচ, বেগুন, লাউ, এবং ঢেঁড়শ। আপনি ফসলের সাথে ক্যাসাভা এবং নারিকেল মিলিয়েও চাষ করতে পারেন। একই জমিতে কলার পাশাপাশি অন্যান্য এই ফসলগুলোও আপনি চাষ করতে পারেন।

১৪. রোগ এবং পোকামাকড় থেকে রক্ষা করুন

আপনার কলাগাছকে নিম্নোলিখিত রোগ এবং পোকামাকড় থেকে রক্ষা করুন:

বাঞ্চি টপ- যদি এই ভাইরাস জনিত রোগটি আপনার গাছকে আক্রান্ত করে, তবে কান্ডের শীর্ষে গাছের পাতাগুলো সরু এবং ছোটো হবে, যখন তারা কোনো গুচ্ছ সৃষ্টি করবে।

পানামা উইল্ট- এই রোগটি আপনার জমিকে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত করবে যদি আপনার জমিটি খারাপভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় অথবা আপনি একই জমিতে বহু বছর ধরে কলা চাষ করে থাকেন। আপনার গাছটি যদি আক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে এর পাতাগুলো হলুদ হয়ে যাবে, কান্ডের চারদিকে ঝুলে থাকবে এবং তারপর ঝরে যাবে।

রুটস্টক উইভিল- এই পোকাটি সারাবছরই আপনার গাছের ক্ষতি করতে পারে। এই পোকার বাচ্চা বা শূকগুলো রাইজোমে ছিদ্র করবে। আবার, বড়গুলো বীজে বা পাতার ভাঁজে লুকিয়ে থাকবে।

সিউডোস্টেম বোরর- এই পোকাগুলো গাছের কান্ডে ছিদ্র করে আপনার গাছের ভীষণ ক্ষতি করবে। এই পোকার বাচ্চাগুলো গাছের কান্ডে ছিদ্র করবে ফলে পাতাগুলো হলুদ হয়ে যাবে, শুকিয়ে যাবে, এবং অবশেষে গাছটা মারা যাবে।

গাছের ওষুধ এবং চিকিৎসার ব্যাপারে আপনার এলাকার কোনো নির্ভরযোগ্য উদ্ভিদবিদের সাথে পরামর্শ করুন।

১৫. ফসল তুলুন

আপনি বাজারজাতকরন বা রপ্তানী করার জন্য কাঁচাকলা যেগুলো তখনও সবুজ আছে সেগুলো তুলে ফেলুন। কলার ফসল তোলা হয় সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে। কলার শাখাগুলো প্রাপ্তবয়স্ক হয় বেড়ে ওঠার ৯০ থেকে ১৫০ দিনের মধ্যে যখন কলাগুলো সম্পূর্ণভাবে ভরে ওঠে এবং ফলের বীজগুলো সম্পূর্ণভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়।

কলার খামারের জন্য আপনার বেশী মূলধন বা মজুরের প্রয়োজন নেই। আপনি যদি আপনার কলার খামারের শুরুর দিকে কলার বীজ কিনে থাকেন তবে সেগুলো আপনি প্রায় বিশ বছর বছর ব্যববহার করতে পারবেন। এভাবে, এটা একটি অন্যতম খামার ব্যবসা হতে পারে যা আপনাকে ভালো লাভ এনে দিবে। নিজেকে কলার খামারের ব্যবসা শুরু করার জন্য আরও অভিজ্ঞ করে তুলতে এবং এই ব্যবসা সম্পর্কে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার জন্য আপনি কোনো কলা-উৎপাদন খামারে কাজ করতে পারেন বা প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।

১৬. বাজারজাতকরণ

স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক দুইভাবেই কলার একটি বিশাল বাজার আছে। কারণ কলা ফলের বাজারে, রেস্তোরায়, চায়ের দোকানে, এবং প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে ব্যবহৃত হয়। আপনি আপনার ফলনের আকার, উৎপাদনের মান, অবস্থান এবং দামের ওপর ভিত্তি করে অনেক টাকা আয় করতে পারেন।

শেষ কথা:

তাহলে, আপনি কেনো অপেক্ষা করছেন? এখন, যখন আপনি কিভাবে বাংলাদেশে একটি কলার খামার শুরু করবেন সেই বিষয়ে অত্যন্ত ভালোভাবে সচেতন, শুধু আপনার ব্যবসাটি শুরু করুন এবং কঠোর পরিশ্রম করুন অপার সাফল্য পাওয়ার জন্য। হিসাবপাতি অ্যাপটি ডাউনলোড করুন আপনার ব্যবসার সব হিসাব আপডেটেড রাখতে। শুভ কামনা রইল!!!

Search
সাম্প্রতিক পোস্টসমূহ
আজই আমাদের অ্যাপ ডাউনলোড করুন
অনলাইন বা অফলাইনে যেকোন জায়গা থেকে সহজেই আপনার দৈনন্দিন ব্যবসায়িক লেনদেন পরিচালনা করুন।