ব্যবসার হিসাব রাখার নিয়ম গুলো জেনে নিন এক নজরে

ব্যবসার হিসাব রাখার নিয়ম গুলো জেনে নিন এক নজরে

আপনার ব্যবসা ছোট হোক বা বড়, তা আপনার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকে সত্যি করতে হলে আপনাকে ব্যবসাটির যথাযথ দেখাশোনা করতে হবে। আর ব্যবসার যথাযথ দেখাশোনা করতে হলে প্রতিদিনের যে লেনদেনগুলো হচ্ছে তার ঠিকঠাক হিসাব রাখতে হবে। এই হিসাবগুলো যদি ঠিকভাবে রাখতে না পারেন তবে আপনার ব্যবসা কোনোভাবেই সফল হতে পারবে না।
তাই আপনার ব্যবসাটি সফলভাবে চালাতে আমাদের এই আর্টিকেল থেকে ব্যবসার হিসাব রাখার নিয়মগুলো জেনে নিন এক নজরে ।
নিচে উল্লেখিত নিয়মগুলো ঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনি আপনার ব্যবসার সব হিসাব যথাযথভাবে রাখতে পারবেন।

১. আপনার ব্যক্তিগত  এবং ব্যবসার হিসাবের জন্য ভিন্ন ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করুন
২. প্রাপ্তিগুলোর হিসাব যথাযথভাবে রাখুন
৩. ব্যবসার নগদ প্রবাহের হিসাব রাখুন
৪. খরচের সব রশিদগুলো এক জায়গায় রাখুন
৫. রশিদ এবং চালানপত্রের মধ্যে পার্থক্য বুঝুন
৬. নগদ খরচগুলোর হিসাব রাখুন
৭. ব্যবসার কর সম্পর্কিত বিষয়গুলো ব্যবস্থাপনা করার জন্য একজন পেশাদারকে নিয়োগ করুন
৮. বিক্রয় করের কথা বিবেচনায় আনুন এবং প্রয়োজনে ফাইল করুন।
৯. আয় কর ফাইল করুন
১০. হিসাবরক্ষণের ডাবল এন্ট্রি ব্যবস্থাটিকে বুঝুন
১১. ব্যবসার সব হিসাবগুলো আলাদা করে রাখুন
১২. আপনার একাউন্টেন্ট বা হিসাবরক্ষকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন
১৩. আর্থিক বিবৃতিগুলো তৈরি করুন
১৪. বাজেট এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করুন
১৫. ব্যবসায় হিসাব রাখার জন্য সফটওয়্যার ব্যবহার করুন

আসুন, এবার এই নিয়মগুলোকে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।

১. আপনার ব্যক্তিগত এবং ব্যবসার হিসাবের জন্য ভিন্ন ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করুন

অনেক ছোট ব্যবসার মালিকও প্রথম কয়েক মাসের জন্য তাদের ব্যক্তিগত তহবিল ব্যবহার করে ব্যবসার খরচ চালান। মাঝে মাঝে ব্যক্তিগত টাকা ব্যবসার কাজে লাগালে কোনো ক্ষতি নেই, কিন্তু আপনি যদি আপনার ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্ট  ব্যবহার করেন, তা একটি বড় ধরনের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
যদি আপনার ব্যবসার জন্য একটি আলাদা ব্যাংক একাউন্ট থাকে তবে আপনার এবং আপনার ব্যবসার হিসাবরক্ষক উভয়ের জন্যই কিভাবে টাকা খরচ হচ্ছে সেটা খেয়াল করাটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। আপনি যদি আপনার ব্যক্তিগত একাউন্ট ব্যবসার জন্য ব্যবহার করে থাকেন, তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক লেনদেন আপনার নজর এড়িয়ে যেতে পারে।
আপনি আপনার ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক অর্থায়ন যথাযথভাবে পৃথক করেছেন কিনা তা নিশ্চিত করুন। এর অর্থ হলো  আপনি ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যের জন্য আলাদা একাউন্ট এবং ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড যথাযথভাবে ব্যবহার করছেন কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া। খরচের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ‍যথেষ্ট সচেতন হোন এবং নিশ্চিত করুন যে ব্যবসা-সংক্রান্ত খরচগুলো ব্যবসায়িক একাউন্ট থেকেই করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত একাউন্টের ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য।
আপনি সব ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের ওপর নির্ভর করতে পারেন। কারণ ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের স্টেটমেন্ট বা বিবৃতি আপনাকে একটি সহজ এবং স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আপনার খরচের হিসাব রাখতে সাহায্য করবে।

২. প্রাপ্তিগুলোর হিসাব যথাযথভাবে রাখুন

আপনি ব্যবসা চালিয়ে হাতে টাকা পেলে নিশ্চয়ই খুব উপভোগ করেন। কিন্তু ব্যবসার সব প্রাপ্তি বা প্রাপ্য টাকাগুলোর হিসাব রাখাটা মোটেও সহজ কাজ নয়। আপনি যখন একটি চালানপত্র ইস্যু করেন তখন একটি প্রাপ্তি লিখে রাখেন অর্থাৎ আপনি লিখে রাখেন যে আপনি একজন গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা পান। এই তালিকা দেখে আপনি সহজেই বুঝতে পারেন যে কোন গ্রাহকের কাছে ঠিক কতো টাকা বকেয়া আছে।
কোন গ্রাহক টাকা পরিশোধ করলে আপনি সেটা তাদের চালানপত্রে লিখে রাখবেন এবং সেটা পেইড বা পরিশোধকৃত হিসেবে চিহ্নিত করে রাখবেন। কিন্তু আপনার অর্ডারের সংখ্যা অগণিত হলে এটা বলা যতোটা সহজ, করা ততোটা সহজ হবে না। গ্রাহকদের জমাকৃত টাকা অনেক সময়, পরে মিলানোর জন্য রেখে দেয়া হয় কারণ দিনের মধ্যে আপনি হয়তো যথেষ্ট সময় পান না। অর্থাৎ যখন কর নিরীক্ষার সময় হয়, তখন আপনার রাজস্ব একাউন্টে গ্রাহকদের জমাকৃত প্রচুর টাকার হিসাব থাকে এবং আপনার প্রাপ্তির সব হিসাব ঠিকভাবে মিলে না।
এখানে ফলস্বরূপ আপনাকে সব তালিকা হালনাগাদ করতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট করতে হবে,  বেশী কর পরিশোধ করতে হতে পারে এবং আপনার দেনার পরিমাণ বেড়ে যাবে। তাই  ব্যবসার প্রতিটি লেনদেন যখন ঘটে তখনই তার হিসাব রাখাটা উচিত। আপনার গ্রাহকদের পরিশোধকৃত টাকাগুলোর মাসিক হিসাব রাখুন। এটা আপনার অনেক সময় এবং টাকা বাঁচাবে।

৩. ব্যবসার নগদ প্রবাহের হিসাব রাখুন

আপনার ছোট ব্যবসাটির হিসাবগুলো ঠিকভাবে রাখতে হলে একাউন্টিং বা হিসাবরক্ষণের কিছুটা জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। এই যেমন, সাপ্তাহিক বা মাসিক হিসাব রাখার জন্য ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট বা নগদ প্রবাহ বিবৃতি তৈরি করতে পারেন। এই স্টেটমেন্ট বা বিবৃতিগুলো আপনাকে আপনার ব্যবসার ভিতরে এবং ব্যবসা থেকে বাহিরে নগদের প্রবাহ সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিবে। একটি ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট মূলতঃ আয়ের দিক-নির্দেশনা পর্যবেক্ষণ করে। এর মধ্যে সময়ের উল্লেখও থাকে যা আপনাকে মূল্য পরিশোধ চক্র এবং সাময়িক খরচগুলো দেখতে সাহায্য করে।
ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট থেকে আপনি খরচগুলো অনুধাবন করা এবং আরও ভালোভাবে আয় বন্টন করার জ্ঞান পেতে পারেন। তাছাড়া এগুলো ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বা বাজেট তৈরিতেও সাহায্য করে। আপনি যদি ঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করেন তবে নগদ আপনার ব্যবসায় কিভাবে কাজ করছে সে সম্পর্কে আপনি একটি সামগ্রিক ধারণা পাবেন। আবার আপনি যদি স্বয়ংক্রিয় হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থা প্রয়োগ করেন তবে আপনি নগদ চলাচলের বিভিন্ন মেট্রিক্স বা পরিমাপক সংখ্যা এবং তথ্যগুলো সহজেই দেখতে পাবেন।

৪. খরচের সব রশিদগুলো এক জায়গায় রাখুন

খরচের সব হিসাব ঠিকভাবে করার জন্য সব রশিদগুলোকে এক জায়গায় যত্ন করে রাখুন। অনেক ব্যবসায়ীই এই কাজটি করার ব্যাপারে উদাসীন ফলে তাদের হিসাবরক্ষণ, নগদ প্রবাহ, এবং কর সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। আপনি কি কখনো খেয়াল করেছেন যে আপনার ব্যাংক বিবৃতিতে ১০০ টাকা চার্জ করা হয়েছে এবং সেটা কেনো সে ব্যাপারে আপনার কোনো ধারণা নেই। যদি এমনটা হয়ে থাকে তবে আপনি নিশ্চয়ই আপনার ব্যবসার খরচগুলোর হিসাব ততোটা ভালোভাবে রাখছেন না।

আপনার ব্যবসায় যা কিছু কেনা হয় সবকিছুর রশিদ যত্ন করে রাখার মাধ্যমে আপনি এই সমস্যাটির সমাধান করতে পারেন। এটা শুনে মনে হতে পারে যে বেশ কষ্টসাধ্য কাজ কিন্তু আপনি কিছু কৌশল অনুসরণ করে খুব সহজেই কাজটি করতে পারেন। যেমন: ব্যবসার সব খরচ একটি ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে পরিশোধ করা। আবার সব রশিদগুলো রাখার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা ব্যবহার করা যেমন: আপনার ডেস্কে বা ড্রয়ারে।
আরও ভালো হয় যদি আপনি রশিদগুলোর ছবি তাৎক্ষণিকভাবে আপনার মোবাইলে তুলে রাখেন। এই কৌশলগুলো আপনাকে সময়মত ট্যাক্স বা কর ফাইল করার জন্য  তৈরী থাকতে সাহায্য করবে।

আপনার ব্যবসার কিছু খরচের উদাহরণ নিচে দেয়া হলো যা আপনি সচরাচর এড়িয়ে যেতে পারেন:

  • ব্যবসায়িক ভ্রমণ খরচ: আপনি ব্যবসায়িক ভ্রমণে শহরের বাহিরে গেলে বিমান টিকিটের জন্য যে টাকাটা খরচ করেন তা আপনি খরচ হিসেবে লিখে রাখুন। আপনি যদি বেশীর ভাগ সময় রাস্তায় কাটিয়ে থাকেন তাহলে আপনি গাড়িতে কতোটা মাইল গিয়েছেন এবং গ্যাস বা পেট্রোলের খরচটা লিখে রাখেতে পারেন।
  • অফিস খরচ: আপনি যদি কম্পিউটার বা অন্য কোন অফিস সামগ্রীর জন্য খরচ করে থাকেন তবে সেগুলো কর হিসাবের জন্য লিখে রাখুন।
  •  বাড়ি থেকে অফিস করার খরচ: আপনি অনেক সময় বাড়ি থেকে অফিস করেন  তখন অফিসের কাজ করার জন্য যে খরচগুলো আপনি বহন করেন সেগুলোও আপনি খরচ হিসেবে লিখে রাখবেন।
  • যানবাহন-সংক্রান্ত খরচ: আপনি অফিসের কাজে যদি কোনো যানবাহন ব্যবহার করে থাকেন তবে তার ভাড়াটা খরচের হিসাবে লিখে রাখুন।
  • আহার এবং বিনোদন: আপনি যদি একজন গ্রাহকের সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে আহার বা পানীয়ের জন্য খরচ করে থাকেন তবে সেগুলো আপনি আপনার খরচের প্রতিবেদনে লিখে রাখবেন।
  • উপহার: এটা আহার এবং বিনোদনের সাথে কিছুটা সম্পর্কিত। যেমন: আপনি যদি একজন ব্যবসার সম্ভাব্য গ্রাহকের সাথে কোন অনুষ্ঠানে যান তবে সেটা পড়বে আহার এবং বিনোদনের খরচের মধ্যে। কিন্তু যদি সেই গ্রাহক নিজেই অনুষ্ঠানে যান অর্থাৎ নিজেই খরচ বহন করেন তবে সেটা হবে উপহার।

খরচের প্রতিবেদনগুলো কর হিসেবের সময় একটা বড় ভূমিকা পালন করে। তাই আপনার কর্মচারীদেরকে এর গুরুত্ব বোঝান এবং যখন তারা কোনো ব্যবসায়িক কাজে বাহিরে যান তারা যেন  খরচের সব রশিদগুলো যত্ন করে রাখেন, যাতে কর নিরীক্ষণের সময় খরচের হিসাবে কোন গরমিল না হয়।

৫. রশিদ এবং চালানপত্রের মধ্যে পার্থক্য বুঝুন

আপনি যদি একটি ব্যবসা চালান কিন্তু রশিদ এবং চালানপত্রের মধ্যে পার্থক্য না বোঝেন তবে আপনার ব্যবসার হিসাবগুলো রাখতে আপনাকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হবে। তাই এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য বোঝাটা আপনার জন্য জরুরী।
একটি রশিদ হলো একটি কাগজ যা ব্যক্ত করে যে একটি লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ একটি লেনদেন সম্পন্ন হলে আপনি আপনার গ্রাহককে একটি রশিদ দেন।
পক্ষান্তরে একটি চালানপত্র হলো এমন একটি কাগজ যা ব্যক্ত করে যে আপনি আপনার গ্রাহককে সেবা প্রদান করেছেন এবং তাতে আপনি  গ্রহককে ঠিক কি কি সেবা দিয়েছেন সেসব কিছুই লিপিবদ্ধ থাকে। একটি চালানপত্র গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটা নগদপ্রবাহের গতি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, আর্থিক হিসাব রাখতে সাহায্য করে এবং আপনাকে আপনার প্রাপ্তি সম্পর্কে নিশ্চয়তা দেয়। চালানপত্র গ্রাহককে মনে করিয়ে দেয় যে সে আপনার কাছে ঋণী।
আপনি যদি রশিদ এবং চালানপত্রের মধ্যে পার্থক্য না করতে পারেন, তবে  কি সম্পন্ন হয়েছে আর কি চলছে সে সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলতে পারবেন না। আর ব্যবসার হিসাবে ভারসাম্য আনতে হিমশিম খাবেন।

৬. নগদ খরচগুলোর হিসাব রাখুন

ব্যবসার সব নগদ খরচগুলোর হিসাব যথাযথভাবে রাখুন কারণ তাহলে কর হিসাবের সময় সহজেই ব্যবসার মোট আয় থেকে সব খরচগুলো বাদ দিয়ে সে বছরের জন্য আপনার সামগ্রিক লাভ জানতে পারবেন। এটা করাটা খুব একটা কঠিন নয়। আপনার যখনই কোনো নগদ খরচ হবে তা লিখে রাখবেন বা  সেবা দানকারীর কাছ থেকে একটি রশিদ চেয়ে নিবেন, তাহলে কর হিসেবের সময় কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না।

৭. ব্যবসার কর সম্পর্কিত বিষয়গুলো ব্যবস্থাপনা করার জন্য একজন পেশাদারকে নিয়োগ করুন

অনেক ব্যবসায়ীই টাকা বাঁচাতে গিয়ে কর সম্পর্কিত বিষয়গুলো ব্যবস্থাপনা করতে কোন পেশাদার একাউন্টেন্ট বা হিসাবরক্ষক নিয়োগ করেন না এবং নিজেই ব্যাপারটা দেখাশোনা করার চেষ্টা করেন। ফলে যা হয় তাদের কর সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান না থাকায় তারা অনেক কর অব্যাহতির সুযোগ হারিয়ে ফেলেন আবার অনেক ক্ষেত্রে হয়তো কম কর পরিশোধ করেন যা জরিমানা দেয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অল্প কিছু টাকা বাঁচাতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে যে, তাদের অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।
একজন পেশাদার একাউন্টেন্ট সব আধুনিক, সময়োপযোগী এবং নিত্য পরিবর্তনশীল কর ধারা এবং আইন সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন যার ফলে আপনার ব্যবসার আর্থিক অবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য অনেক উপদেশ দিতে পারেন। যদি ভবিষ্যতে কর বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে তা মোকাবেলা করার জন্য উপদেশ দিতে পারবেন।

৮. বিক্রয় করের কথা বিবেচনায় আনুন এবং প্রয়োজনে ফাইল করুন

আপনার ব্যবসার জন্য বিক্রয় কর সংগ্রহ করতে প্রস্তুত থাকুন। আপনি যে দেশে ব্যবসা করছেন সেদেশের আইন ও বিচার-ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করবে আপনি বিক্রয় করের আওতায় পড়বেন কিনা। কিছু ‍কিছু পণ্যেরে ক্ষেত্রে দেশ এবং বিচার-ব্যবস্থা ভেদে আপনার বিক্রয় কর নাও দেয়া লাগতে পারে।
বিক্রয় কর আপনাকে দিতে হবে না, আপনি গ্রাহকদের কাছ থেকে যে বিক্রয় কর আদায় করবেন তা আপনি নগদ রশিদে উল্লেখ করবেন। এই সংগৃহীত কর আপনি  সরকারকে পরিশোধ করবেন। আর যদি আপনি গ্রাহকদের থেকে কর আদায় করতে না পারেন তবে এই করটা আপনাকেই পরিশোধ করতে হবে যখন কর পরিদর্শক আপনার ব্যবসা কেন্দ্রে বা দোকানে আসবে।

৯. আয় কর ফাইল করুন

আয় কর হলো সেই কর যা আপনি আপনার আয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট পরিমাণে সরকারকে পরিশোধ করেন। অন্যান্য করের মতো এই করেরও নিয়ম এবং প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন। সবকিছু ভালোভাবে বুঝতে আপনি আপনার নিয়োগকৃত হিসাবরক্ষকের সাথে পরামর্শ করুন যিনি আপনাকে বুঝিয়ে দিবেন যে আপনি কিভাবে আয় করের জন্য ফাইল করবেন। সাধারণতঃ আপনার ব্যবসার ধরন যেমন: একক মালিকানা, অংশীদারিত্ব, সীমিত আয় কোম্পানি বা অন্য কোন ধরন তার ওপর ভিত্তি করে আপনার আয় কর ফাইল করার ধরন ভিন্ন হবে।

১০. হিসাবরক্ষণের ডাবল এন্ট্রি ব্যবস্থাটিকে বুঝুন

আপনাকে হিসাবরক্ষণের ডাবল এন্ট্রি ব্যবস্থাটিকে অবশ্যই বুঝতে হবে। এখানে মূল ধারণাটি হলো আপনি যদি আপনার ব্যবসার জন্য কোন কিছু কিনেন তবে একটি হিসাব না দুইটি হিসাব সেটা লিখে রাখবেন। অর্থাৎ আপনি একটি প্রিন্টার কিনলেন ৫০০০ টাকা দিয়ে তবে আপনি ব্যালেন্স শীটে ঋণাত্মক (-) ৫০০০ টাকা লিখবেন। কিন্তু ডাবল এন্ট্রি হিসাবরক্ষণের অধীনে আপনি ধনাত্মক (+) ৫০০০ টাকা লিখবেন ইনভেন্টরি লাভের জন্য।

১১. ব্যবসার সব হিসাবগুলো আলাদা করে রাখুন

আপনার ব্যবসার সব হিসাব যথাযথভাবে রাখতে প্রতিটি হিসাব আলাদা রাখুন। এজন্য হয়তো আপনার অনেকগুলো একাউন্ট ব্যবস্থাপনা করতে হবে, তবে আপনার ব্যবসার সব লেনদেনের সম্পূর্ণ ছবি পেতে এটা আপনাকে করতে হবে।

যে হিসাবগুলো আলাদাভাবে রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো হলো:

  • বিক্রয় (আপনার রাজস্ব)
  • ক্রয় (সরবরাহ)
  • প্রাপ্তি (গ্রাহকদের কাছ থেকে আপনি যে টাকা পান)
  • প্রদেয় (অন্যরা আপনার কাছে যে টাকা পান)
  •  বেতন-সংক্রান্ত খরচ
  •  ধরে রাখা আয় (আপনার লাভ)
  • মালিকের অংশ (আপনি এবং অন্য মালিকরা যে টাকা ব্যবসায় লাগিয়েছেন)

আপনি যদি আরও  বিস্তারিত বিষয়ে নজর দিতে চান। যেমন: প্রতিটি লেনদেন বা পণ্য ক্রয়, তবে আপনার হিসাবগুলোকে আরও বিভিন্ন উপশ্রেণীতে ভাগ করতে পারেন।

১২. আপনার একাউন্টেন্ট বা হিসাবরক্ষকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন

আপনার একাউন্টেন্ট বা হিসাবরক্ষকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন কারণ তারা তাদের প্রতিবেদনে অনেকসময় পেশাদারী পরিভাষা ব্যবহার করেন যা আপনি হয়তো নাও বুঝতে পারেন। কেননা আপনি একজন ছোট ব্যবসায়ী, কোন হিসাবরক্ষক বা কর বিশেষজ্ঞ নন। আপনার নিয়োগকৃত এই পেশাদাররা আপনাকে আপনার ব্যবসার আর্থিক অবস্থা দৃঢ় করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিতে পারবে।

১৩. আর্থিক বিবৃতিগুলো তৈরি করুন

আপনার ব্যবসার জন্য বিভিন্ন আর্থিক বিবৃতি তৈরি করুন যেমন: ব্যালেন্স শীট, ইনকাম স্টেটমেন্ট বা আয় বিবৃতি এবং ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট। ব্যালেন্স শীট কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আপনার ব্যবসার সম্পদ, দায়গুলো এবং ইক্যুইটির অবস্থা দেখায় । ইনকাম স্টেটমেন্ট একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনার ব্যবসায় কতো খরচ, কতো আয়  এবং ব্যবসার আর্থিক অবস্থা কেমন তা প্রকাশ করে। ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট আপনার ব্যবসার নগদ প্রবাহের অবস্থা সময়ের সাথে কিভাবে পাল্টাচ্ছে তা ব্যক্ত করে।
আপনি যদি একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হয়ে থাকেন তবে আপনাকে বিনিয়োগকারীদের জন্য বার্ষিক বা ত্রৈমাসিকভাবে আর্থিক বিবৃতি তৈরি করতে হবে । তা না হলে আপনি কত সময় পর পর আর্থিক বিবৃতিগুলো তৈরি করবেন তা আপনার সুবিধা অনুযায়ী নির্ধারণ করুন।

১৪. বাজেট এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করুন

আপনি আপনার ব্যবসার আর্থিক বিবৃতিগুলো ব্যবহার করে ব্যবসার জন্য বাজেট এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে পারেন। এই আর্থিক বিবৃতিগুলোতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে যার ওপর ভিত্তি করে আপনি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেন। যেমন: আপনার ব্যবসায় যদি নগদের সংকট থাকে তবে আপনি আপনার প্রাপ্তিগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে দ্রুত আদায় করবেন এবং ব্যবসার বিক্রি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিবেন।

১৫. ব্যবসায় হিসাব রাখার জন্য সফটওয়্যার ব্যবহার করুন

আপনার ব্যবসার হিসাবগুলো ঠিকভাবে রাখাটা একটু জটিল ব্যাপার। বিশেষ করে আপনার ব্যবসাটি যদি বাড়তে থাকে তবে প্রকিয়াটি আরও কঠিন হয়ে যাবে। একটি লেনদেন ঘটলে তা আপনার বিভিন্ন একাউন্টে বিভিন্নভাবে লিপিবদ্ধ থাকবে। এই কঠিন প্রক্রিয়াগুলো দেখাশোনার ভার যদি আপনি কোন  সফটওয়্যারকে দেন তবে আপনার কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে এবং  অনেক সময়ও বেঁচে যাবে।

হিসাবপাতি একটি নির্ভরযোগ্য সফটওয়্যার যা আপনার ব্যবসার সব হিসাব রাখবে নির্ভুল এবং স্বয়ংক্রিয়। এই অ্যাপটি থেকে আপনি আপনার  হিসাবের দৈনিক, মাসিক, বার্ষিক সব রিপোর্ট পাবেন। হিসাবপাতি অ্যাপটি  আপনি আপনার ট্যাবে, কম্পিউটারের ব্রাউজার থেকে এবং আপনার মোবাইলে অ্যাপ আকারে অনায়াসে ব্যবহার করতে পারবেন।

শেষ কথা:

সুতরাং আর দেরী না করে উপরোক্ত কৌশলগুলো ভালোভাবে পড়ে ব্যবসার হিসাব রাখার নিয়মগুলো জেনে নিন এক নজরে। আর আপনার ব্যবসায় এই নিয়মগুলো প্রয়োগ করে ব্যবসাটিকে নিয়ে যান সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে।

Search
সাম্প্রতিক পোস্টসমূহ
আজই আমাদের অ্যাপ ডাউনলোড করুন
অনলাইন বা অফলাইনে যেকোন জায়গা থেকে সহজেই আপনার দৈনন্দিন ব্যবসায়িক লেনদেন পরিচালনা করুন।